ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




সাংবাদিকদের নাজেহাল করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহজ মাধ্যম! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ ৯৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সত্য প্রকাশে গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সাংবাদিকদের ঘায়েল করতে এটিই অন্যায় কারিদের সহজ মাধম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলছে থাকলে ঝঁকি থাকা সাংবাদিক সমাজ আরো ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে বেড়েই চলছে সাংবাদিক নির্যাতন হয়রানি মিথ্যা মামলার ঘটনা ।  বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত দুই বছরে ৫২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। দেশের সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠন,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম,বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন,বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়নের প্রতিবাদের মুখে ২০১৮ সালে পাশকৃত বিতর্কিত এই আইনের অপব্যবহারে সম্পাদক- ক্রাইম রিপোর্টার থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মী পর্যন্ত কেউ রক্ষা পাননি।

গ্রেফতার হয়ে এখনো জেলে আছেন অন্তত ১৫ জন। আইন পাশের সময় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেছিলেন যে এ আইনটি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য নয়। এ অপব্যবহার হবে না বলেও আস্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু পাশের পর থেকে এ পর্যন্ত নিপীড়নমূলক এ আইনটির সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ বনেক মনিটরিং সেলে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় ৫২ জন ছাড়াও মানহানিসহ অন্যান্য মামলায় হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন ১০৮ জন সংবাদিক ও সংবাদকর্মী। এ বছর মফস্বলে রাজনৈতিক মহল ও সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হয়েছেন ১৭৮ জন সাংবাদিক। এরমধ্যে সাংবাদিক সাগর চৌধুরী,ময়মনসিংহে মাজহারুল ইসলাম রাজু।

বনেকের গবেষণা সেলের তথ্য ও পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে- ২০১৮ সালের ফেব্রয়ারি ও অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ৭ জন করে ১৫ জন সাংবাদিক ডিজিটাল মামলায় আসামী হয়েছেন। সেপ্টেম্বরে ৬ জন এবং জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে ৬ জন করে সাংবাদিক এই আইনের শিকার হয়েছেন। জানুয়ারি, মার্চ ও আগস্টে ২ জন করে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়। ১ জন করে সাংবাদিক ডিজিটাল মামলার জালে জড়িয়েছেন মে, জুন ও নভেম্বর মাসে। প্রধান ৬ টি জাতীয় দৈনিক ও শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এবং বনেকের আর্কাইভে সংরক্ষিত সংবাদ ক্লিপিংস এর ভিত্তিতে এ চিত্র উঠে এসেছে। এর বাইরেও ডিজিটাল আইনের শিকার সাংবাদিক থেকে থাকতে পারেন ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহের সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিককে গ্রেফতার ও রিমান্ড দিয়ে শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। যুগান্তরের ৫ সাংবাদিক একসঙ্গে ডিজিটাল মামলার আসামী হন। এর মধ্যে আবু জাফর ও আজহারুল হক গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। অন্য আসামীরা হচ্ছেন মোঃ হুমায়ুন কবীর, শামীম খান ও মেহেদী হাসান। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইউএনওর নেতৃত্বে যুগান্তরের মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন গ্রেফতার করা হয় একই আইনে। মার্চে বগুড়ার শেরপুরে দেশনিউজ কন্ঠের সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৯ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ লাইভ ডটকমের সাংবাদিক আবদুল কাইউমকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। জুনে মাসিক বান্দরবানের সম্পাদক ও প্রকাশক মোজাম্মেল হক লিটনকে একই আইনে গ্রেফতার করে পুলিশ । জুলাইতে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাম্পাস লাইভ২৪ ডটকমের প্রধান সম্পাদক আজহার মাহমুদের বিরুদ্ধে দিনাজপুরে ডিজিটাল আইনে হয়রানিমূলক মামলা হয়। একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমেন্ট করায় এ মাসে দৈনিক সমকালের সাংবাদিক ও সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি জাকির হোসেন ইমনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন এক আইনজীবী। একই মাসে দৈনিক আমাদের বরিশাল-এর সম্পাদক প্রকাশক মো. রফিকুল ইসলাম ও গৌরনদী প্রতিনিধি মোল্লা ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়।

আগস্টে খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময়ের সম্পাদক শাহীন রহমান। তিনি এখনও জেলে রয়েছেন। গও বছরে যুগান্তরের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মনোয়ার হোসেন জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল আইনের মামলায় চাঞ্চল্যকর নিপীড়নের ঘটনা ঘটে কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ক্ষেত্রে। টেকনাফের ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়ে ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে তার ওপর বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। একটি চোখ উপড়ে ফেলাসহ প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হয় তাকে। গত বছরে দ্বিতীয় দফা জেল খাটেন দি নিউনেশন পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও কলামিস্ট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। দৈনিক জনতার সম্পাদক আহসান উল্লাহ, প্রকাশক ছৈয়দ আনোয়ার ও সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় আসামী হয়ে হয়রানির মুখে পড়েন।

গত বছরের অক্টোবরে সাতক্ষীরায় দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভিন সেজুঁতি ও দৈনিক কালের চিত্রের সম্পাদক আবু আহমেদসহ ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ মাসেই ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার হন খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি ও সিনিয়র সাংবাদিক মুনির উদ্দিন। ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনলাইন জাগো টিভির সম্পাদক মুনতাসির, সংবাদকর্মী সবুজ ও শাওনকে গ্রেফতার করা হয় ডিজিটাল আইনের মামলায়।

বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে একই আইনে গ্রেফতার ও ৩দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলায় আরও আসামী করা হয় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইনকে। সে মাসেই দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও পত্রিকার সিলেটে কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার মুকিত রহমানির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়।

এদিকে করোনাতাংকের মধ্যেও থেমে নেই সাংবাদিকদের উপর ডিজিটাল আইন প্রয়োগ। ২০২০ সে ১২ এপ্রিল অধিকারের সাংবাদিক আল মামুনের নামে নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন পুলিশ। নিজের ফেসবুকের ব্যক্তিগত ওয়ালে মতামত প্রকাশের জেরে এই মামলা করা হয়।

এবিষয় কথা হয় বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) এর সভাপতি খায়রুল আলম রফিকে সাথে। তিনি বলেন, এহেন গোটা সাংবাদিক সমাজকে ভীতির সঞ্চার। অথচ সাংবাদিকরা কাজ করে বেতন পায় না, বছরের পর বছর বেতন বৃদ্ধি হয় না। আমরা কাজ করে নির্যাতনের শিকার হই, মিথা মামলার আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হই আমাদের কথা বলার কেউ নেই।

এবিষয় বনেকের সহ-সভাপতি তাজবির সজিব বলেন, গণতন্ত্রান্তিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিয়ে সুষ্ঠু কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা রাষ্ট্রের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষ, সমাজের পক্ষে, গরিবের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, সাম্যের পক্ষে কথা বলি কিন্তু আমাদের কথাই আমরা বলতে পারি না। এজন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবাদিক নির্যাতন , মিথ্যা মামলায় হয়রানির চাইতে কষ্টকর বিষয় আর কিছু হতে পারে না । যারা সাংবাদিকদের এসব করে পার পেয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে । সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের মনে বলতে চাই, সাংবাদিকরা ঝুঁকিপূর্ণ হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সাংবাদিকদের নাজেহাল করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহজ মাধ্যম! 

আপডেট সময় : ০৫:৩০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক;  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সত্য প্রকাশে গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সাংবাদিকদের ঘায়েল করতে এটিই অন্যায় কারিদের সহজ মাধম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলছে থাকলে ঝঁকি থাকা সাংবাদিক সমাজ আরো ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে বেড়েই চলছে সাংবাদিক নির্যাতন হয়রানি মিথ্যা মামলার ঘটনা ।  বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত দুই বছরে ৫২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। দেশের সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠন,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম,বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন,বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়নের প্রতিবাদের মুখে ২০১৮ সালে পাশকৃত বিতর্কিত এই আইনের অপব্যবহারে সম্পাদক- ক্রাইম রিপোর্টার থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মী পর্যন্ত কেউ রক্ষা পাননি।

গ্রেফতার হয়ে এখনো জেলে আছেন অন্তত ১৫ জন। আইন পাশের সময় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেছিলেন যে এ আইনটি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য নয়। এ অপব্যবহার হবে না বলেও আস্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু পাশের পর থেকে এ পর্যন্ত নিপীড়নমূলক এ আইনটির সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ বনেক মনিটরিং সেলে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় ৫২ জন ছাড়াও মানহানিসহ অন্যান্য মামলায় হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন ১০৮ জন সংবাদিক ও সংবাদকর্মী। এ বছর মফস্বলে রাজনৈতিক মহল ও সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হয়েছেন ১৭৮ জন সাংবাদিক। এরমধ্যে সাংবাদিক সাগর চৌধুরী,ময়মনসিংহে মাজহারুল ইসলাম রাজু।

বনেকের গবেষণা সেলের তথ্য ও পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে- ২০১৮ সালের ফেব্রয়ারি ও অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ৭ জন করে ১৫ জন সাংবাদিক ডিজিটাল মামলায় আসামী হয়েছেন। সেপ্টেম্বরে ৬ জন এবং জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে ৬ জন করে সাংবাদিক এই আইনের শিকার হয়েছেন। জানুয়ারি, মার্চ ও আগস্টে ২ জন করে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়। ১ জন করে সাংবাদিক ডিজিটাল মামলার জালে জড়িয়েছেন মে, জুন ও নভেম্বর মাসে। প্রধান ৬ টি জাতীয় দৈনিক ও শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এবং বনেকের আর্কাইভে সংরক্ষিত সংবাদ ক্লিপিংস এর ভিত্তিতে এ চিত্র উঠে এসেছে। এর বাইরেও ডিজিটাল আইনের শিকার সাংবাদিক থেকে থাকতে পারেন ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহের সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিককে গ্রেফতার ও রিমান্ড দিয়ে শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। যুগান্তরের ৫ সাংবাদিক একসঙ্গে ডিজিটাল মামলার আসামী হন। এর মধ্যে আবু জাফর ও আজহারুল হক গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। অন্য আসামীরা হচ্ছেন মোঃ হুমায়ুন কবীর, শামীম খান ও মেহেদী হাসান। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইউএনওর নেতৃত্বে যুগান্তরের মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন গ্রেফতার করা হয় একই আইনে। মার্চে বগুড়ার শেরপুরে দেশনিউজ কন্ঠের সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৯ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ লাইভ ডটকমের সাংবাদিক আবদুল কাইউমকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। জুনে মাসিক বান্দরবানের সম্পাদক ও প্রকাশক মোজাম্মেল হক লিটনকে একই আইনে গ্রেফতার করে পুলিশ । জুলাইতে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাম্পাস লাইভ২৪ ডটকমের প্রধান সম্পাদক আজহার মাহমুদের বিরুদ্ধে দিনাজপুরে ডিজিটাল আইনে হয়রানিমূলক মামলা হয়। একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমেন্ট করায় এ মাসে দৈনিক সমকালের সাংবাদিক ও সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি জাকির হোসেন ইমনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন এক আইনজীবী। একই মাসে দৈনিক আমাদের বরিশাল-এর সম্পাদক প্রকাশক মো. রফিকুল ইসলাম ও গৌরনদী প্রতিনিধি মোল্লা ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়।

আগস্টে খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময়ের সম্পাদক শাহীন রহমান। তিনি এখনও জেলে রয়েছেন। গও বছরে যুগান্তরের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মনোয়ার হোসেন জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল আইনের মামলায় চাঞ্চল্যকর নিপীড়নের ঘটনা ঘটে কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ক্ষেত্রে। টেকনাফের ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়ে ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে তার ওপর বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। একটি চোখ উপড়ে ফেলাসহ প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হয় তাকে। গত বছরে দ্বিতীয় দফা জেল খাটেন দি নিউনেশন পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও কলামিস্ট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। দৈনিক জনতার সম্পাদক আহসান উল্লাহ, প্রকাশক ছৈয়দ আনোয়ার ও সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় আসামী হয়ে হয়রানির মুখে পড়েন।

গত বছরের অক্টোবরে সাতক্ষীরায় দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভিন সেজুঁতি ও দৈনিক কালের চিত্রের সম্পাদক আবু আহমেদসহ ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ মাসেই ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার হন খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি ও সিনিয়র সাংবাদিক মুনির উদ্দিন। ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনলাইন জাগো টিভির সম্পাদক মুনতাসির, সংবাদকর্মী সবুজ ও শাওনকে গ্রেফতার করা হয় ডিজিটাল আইনের মামলায়।

বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে একই আইনে গ্রেফতার ও ৩দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলায় আরও আসামী করা হয় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইনকে। সে মাসেই দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও পত্রিকার সিলেটে কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার মুকিত রহমানির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়।

এদিকে করোনাতাংকের মধ্যেও থেমে নেই সাংবাদিকদের উপর ডিজিটাল আইন প্রয়োগ। ২০২০ সে ১২ এপ্রিল অধিকারের সাংবাদিক আল মামুনের নামে নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন পুলিশ। নিজের ফেসবুকের ব্যক্তিগত ওয়ালে মতামত প্রকাশের জেরে এই মামলা করা হয়।

এবিষয় কথা হয় বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) এর সভাপতি খায়রুল আলম রফিকে সাথে। তিনি বলেন, এহেন গোটা সাংবাদিক সমাজকে ভীতির সঞ্চার। অথচ সাংবাদিকরা কাজ করে বেতন পায় না, বছরের পর বছর বেতন বৃদ্ধি হয় না। আমরা কাজ করে নির্যাতনের শিকার হই, মিথা মামলার আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হই আমাদের কথা বলার কেউ নেই।

এবিষয় বনেকের সহ-সভাপতি তাজবির সজিব বলেন, গণতন্ত্রান্তিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিয়ে সুষ্ঠু কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা রাষ্ট্রের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষ, সমাজের পক্ষে, গরিবের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, সাম্যের পক্ষে কথা বলি কিন্তু আমাদের কথাই আমরা বলতে পারি না। এজন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবাদিক নির্যাতন , মিথ্যা মামলায় হয়রানির চাইতে কষ্টকর বিষয় আর কিছু হতে পারে না । যারা সাংবাদিকদের এসব করে পার পেয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে । সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের মনে বলতে চাই, সাংবাদিকরা ঝুঁকিপূর্ণ হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিপূর্ণ হবে।