করোনা’র আর্শিবাদে একই ছাতায় মিলানে বাংলাদেশী কমিউনিটির সব নেতৃবৃন্দ
- আপডেট সময় : ০১:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৯৫ বার পড়া হয়েছে
তুহিন মাহমুদ:
বাঙালি জাতির এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।যে ক্ষমতা ইতিহাস বিরল। পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কি না জানা নেই।অন্যভাবে বলা যায় আবেগী বাঙালি ক্ষণে ক্ষণ বিশেষ মুহূর্তে আবেগ উথলিয়ে উঠে।
এটা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে আবহমান নদীর স্রোতের মতই সংস্কৃতির একটি রুপকধারা কালের টানে জেগে ওঠে।
বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায় বিশ্ব মহামারির এই সংকটময় মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্ব মহলের।এটি নিঃসন্দেহে পজিটিভ বাংলাদেশের চিরাচরিত চরিত্র দৃশ্যমান ঘটেছে।
পাশাপাশি প্রবাসের দিকে তাকালে দেখা যায় বিশেষ করে ইতালির মিলান শহর সহ আশেপাশের শহরগুলোতেও একই চিত্র জলছাপের মতই জেগে উঠেছে মানবতা।এটি দেশ ও জাতির জন্য শুভবার্তা।
ইতালিতে প্রায় আড়াই লাখ থেকে তিন লাভ বৈধ/অবৈধ প্রবাসীদের বসবাস কিন্তুু ইতালির এই আপদকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে।আশা করেছিলো আমার মত হাজারও প্রবাসীরা বাংলাদেশ সরকার ইতালির পাশে দাঁড়াবে সামর্থ্যানুযায়ী। কিন্তু এখনও সেটা দেখতে পাইনি।
তবে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল মিলান কমুনে দি মিলানো,রেজিওনে দি লোম্বারদিয়া ও আরো একটি সংস্থায় অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করেছে।পাশাপাশি প্রবাসকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২৫লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ করেছে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস রাস্ট্রদূত আব্দুস সোবহান শিকদার যে সকল প্রবাসীরা ইতালিয়ান সরকার থেকে কোন সহযোগীতা পাবে না তাদের জন্য এই অনুদান বরাদ্দ করা হবে।
।এটি একটি মানবতার উজ্বল দৃষ্টান্ত।এজন্য প্রবাসীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।পাশাপাশি ইতালির বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে ইতালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।ইতালির মিলান শহরে বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায় অর্থ সংগ্রহের কয়েকটি সংগঠন কাজ করছে। ইতালির পাশে দাঁড়াবে এই প্রত্যয় নিয়ে।পাশাপাশি আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ কমিউনিটির বলয়ে শতাধিকের বেশী কমিউনিটি নেতাদের নামের তালিকা দেখা গেছে।তাদের উদ্দেশ্যেও মহত ইতালির পাশে দাঁড়াবে।দ্বায়িত্ববোধ ও মানবিকতার জায়গা থেকে বিবেকের তাড়নায় সবাই একই ছাতার নীচে এসেছে এটি একটি ভালো দিক বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য।কারন এই ঐক্যবদ্ধতা দেশ ও জাতির সুনাম অর্জন বহন করবে দেশ ও জাতির জন্য।
কেননা এই ছাতার নীয়ে দন্ডায়মান ব্যক্তিদের দিকে তাকালে দেখা যায় মিলানের এখানে যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি ও সমাজনীতির সাথে কাজ করেছেন সমাজের জন্য কমিউনিটির জন্য।এখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ রয়েছে।এছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতির নেতৃবৃন্দও দেখা যাচ্ছে।কিন্তুু এই ঐক্যবদ্ধতা দেখেছিলাম আরও ১৫/২০ বছর পূর্বে মিলান শহরে।যারফলশ্রুতিতে কমিউনিটির মানুষ উপকৃত হয়েছে।মানুষ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলো।
নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা করতো ভালোবাসতো আস্হার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই মানুষ গুলো কিন্তুু সময়ের স্রোতে এই মানুষ গুলো বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে কমিউনিটির সাধারণ মানুষ থেকে দেশ ও জাতি।আমার জানামতে মিলান লোম্বারদিয়া ডজনখানিক রেজিষ্ট্রেশনকৃত বাংলাদেশ সমিতি নামে সংগঠন রয়েছে।কিন্তু সেগুলো নিষ্ক্রিয়।রাজনৈতিক অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে সে গুলোও যৎসামান্য কার্যকর ভূমিকার দিক থেকে।তারপরও এই সংকটময় মুহুর্তে আবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেখে অন্ধকার মনে আশার আলো জ্বলে উঠলো।যেকোন জাতির সফলতা আসে ঐক্যবদ্ধতার কারণে।কিন্তুু এই অনৈক্যের ফলে আমরা বাংলাদেশীরা ইতালিয়ান প্রশাসনের কাছেও ঘৃণিত হয়েছি।এর কারণ জাতীয় দিবসগুলোতে বিশেষ করে ভাষা দিবসে ভিন্ন ভিন্ন অবস্হান নিতে দেখেছি নেতৃবৃন্দকে।সেখানে মারামারি,রক্তাক্ত হওয়ার জঘন্য কান্ডও ঘটেছে ইতালিয়ান প্রশাসনের সামনে।ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটি তথা বাংলাদেশের। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলান শহরে আগমনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ কালোব্যাজ ধারণ ও অশালীন বক্তব্য ইতালিয়ান প্রশাসন ও জনগণ যখন অবলোকন করে তখন জাতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়।ঘৃণায় মস্তক অবনত হয় যখন বিএনপি নেতৃবৃন্দ যখন কোন মন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে মিলানে আসে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্হান সহ জুতো,স্যান্ডেল ও কালোব্যাজ প্রদর্শন করে তখন ইতালিয়ান প্রশাসন সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ তখন বাকা দৃষ্টিতে দেখে।বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে কষ্ট হয়।এর কারন প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতির ফসল।দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে দেশ ও জাতির সুনাম পাশাপাশি বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবেও সম্মানটুকু পাওয়া যাবে বিদেশীদের কাছে।কিন্তু পরিতাপের বিষয় ঘোর কেটে গেলে আমরা ভুলে যাই আবার অসভ্যতায় মেতে উঠি।
করোনা মহামারিতে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে।আল্লাহপাকই ভালো জানেন বাংলাদেশের অবস্হা কি হবে।আমরা বিপদে থাকাসত্ত্বেও মন কেঁদে ওঠে দেশের জন্য।দেশের মানুষ ও আপনজনদের জন্য।
আমাদের এখন কেনদল নয়,রাজনীতি নয় হিংসা-বিদ্বেষ নয় মানবতার দিক থেকে মনের কালিমা দূর করে একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে।এই ঐক্যবদ্ধ শুধু সংকটকালীন নয় দীর্ঘস্হায়ী হতে হবে তাহলে আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত হবো।একটি কথা বলতে চাই,
গত সপ্তাহে ইতালির প্রধানমন্ত্রী ইউরোপ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক বার্তায় উল্লেখ করেন যে,আমাদের এই বিপদসংকট মুহূর্তে ইউরোপীয় দেশগুলোকে অর্থনৈতিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে যে পদক্ষেপ গুলো নেওয়া হচ্ছে এটি শুধু আপদকালীন সময়েরর জন্যই নয় বরং আগামী ভবিষ্যতের একটি অবকাঠামো “!তাই বাংলাদেশী কমিউনিটি যদি মানসিকতা পরিবর্তন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে শুধু মহামারী সময়ে নয় আগামি দিনগুলোতেও তাহলে মিলান শহর হয়ে উঠবে প্রবাসীদের জন্য একটি শক্তিশালী বাংলাদেশী কমিউনিটি যারফলশ্রতিতে এখানে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীদের দূর্ভোগ লাঘব হবে।
আর একটি বিষয় কিছু মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনৈতিক ও কমিউনিটি নেতা পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে এদের কারনে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি মানুষ আস্হা হারিয়ে ফেলে।মিলানে কিছু নেতা আছে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতার নামে সাধারণ মানুষ থেকে অর্থ নিয়েছে কিন্তু কাজ করে দেয়নি এমনকি অর্থ ফেরত দেয়নি। এই শ্রেণীর বিভিন্ন গোছের নেতাদের কারণে অন্যান্য নেতাদের বদনাম হয়।তাই এদেরকে চিন্হিত করে বয়কট করা দরকার তা না হলে সাধারণ মানুষ আস্হা হারাবে।
বিষয়টা অনেকটা এরকম যে,”রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়”!তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে এই মুহুর্তে একেঅপরের পাশে দাঁড়ানোটাই হবে মানবিকতার বড় পরিচয়।এবং আগামি দিনগুলোতে যেন মিলান শহর হয়ে উঠে এক এবং অভীন্ন বাংলাদেশী কমিউনিটি।(চলবে…..)