দিল্লির দাঙ্গা-সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৩৮
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী (সিএএ) আইনকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-সহিংসতায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এখন পর্যন্ত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। অপরদিকে আহত হয়েছে আরও দুই শতাধিক মানুষ। খবর এনডিটিভির।
সহিংসতার ঘটনা তদন্তে দু’টি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। এদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন যে, সহিংসতার ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নিহত বয়স্ক পরিবারকে ১০ লাখ ও নিহত নাবালক পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে বাড়তি সময় চেয়েছে কেন্দ্র।
দিল্লিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দ্বারস্থ হয়েছেন সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিংসহ অন্যান্য নেতারা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে স্বারকলিপি দিয়েছি। কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার নীরব দর্শকের মতো আচরণ করছে। রাষ্ট্রপতি আমাদের দাবি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, এ ধরনের ঘটনা জাতীয় লজ্জা। তিনি আরও বলেন, গত চারদিন ধরে দিল্লিতে যা হচ্ছে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি আমরা। খুবই উদ্বেগের বিষয়। কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
গত রোববার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) সমর্থক-বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারও অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির অশোকনগরে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছে বহিরাগতরা। তারা বেছে বেছে শুধু এলাকার মুসলিমদের বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় হিন্দুরা জানিয়েছেন, তারা বহিরাগতদের কাউকে চেনেন না এবং এমন পরিস্থিতিতে গৃহহীন মুসলিমদের পাশে থাকবেন সবাই।
গত মঙ্গলবার অশোকনগরের মুসলিম পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে অন্তত এক হাজার জনের একটি গ্রুপ এলাকায় ঢুকে একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় মসজিদে অন্তত ২০ জন নামাজ পড়ছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করে মোদি সরকার। তারপর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর থেকেই মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সমালোচকদের দাবি, এই আইন ভারতের সংবিধানবিরোধী। এই আইনের কারণে মুসলিমরা আতঙ্কে আছেন যে, মোদির ভারতে তাদের হয়তো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হবে।
গত শনিবার জাফরাবাদে সিএএ-বিরোধীরা রাস্তা অবরোধ করে। রোববার থেকে পাল্টা সিএএর পক্ষে সমাবেশ শুরু হয়। এরপরেই দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ শুরু হয়। আর এই বিক্ষোভই সংঘাতে রূপ নেয় এবং দিল্লি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ভারতের মুসলিমরা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করায় দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি দল তাদের দেশদ্রোহী বলে উল্লেখ করেছে। বিজেপির একাধিক নেতার দাবি, যারা সিএএ-বিরোধী তাদের গুলি করে মারা উচিত। এসব নাগরিকদের চির শত্রু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এই দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লি সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভারতে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। মঙ্গলবার তিনি যখন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করছেন তখনও অশান্ত দিল্লি। কেন্দ্রীয় দিল্লির এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় স্বাধীনতা ধরে রাখায় মোদির প্রচেষ্টাকে অবিশ্বাস্য বলে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ঠিক সে সময়ই দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।