ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর জাল সনদে ৯ বছর চাকরি! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ 

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সরকারি হাজি জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল ধরা পড়েছে। এ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ওই শিক্ষকের নামে থানায় মামলা করতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা করতে চাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে নাজনীন নাহার ওই কলেজে প্রভাষক পদে আবেদন করে চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময় নাজনীনের নিবন্ধন সনদ জাল সন্দেহে নিয়োগ বোর্ড তাঁকে পরীক্ষা থেকে বের করে দিতে চায়। কিন্তু তাঁর স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই বাচ্চু নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়োগ বোর্ডকে ম্যানেজ করেন। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে জাল নিবন্ধন সনদধারী নাজনীন নাহারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে কলেজের অন্য শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তবে নিয়োগ বোর্ড তাঁর নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য তখন কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ পরে আর সনদ যাচাই করেনি।

সূত্র আরো জানায়, নিয়োগের পরে এমপিওভুক্তির সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শাখায় নিবন্ধন সনদ জাল ধরা পড়ে। তখন লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করা হয়। এরপর একাধিকবার ওই কলেজে সরকারি অডিট (নিরীক্ষা) হলেও ঘুষ দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি। এভাবে ৯ বছর ধরে ওই শিক্ষক চাকরি করে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের ২৩ লক্ষাধিক টাকা।

স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০১৬ সালে এই কলেজকে জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে সরকারিভাবে শিক্ষকদের সনদসহ কলেজের সব নথি যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় গত বছরের ১২ আগস্ট এই কলেজের সরকারীকরণের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) জারি হয়। এরপর এনটিআরসিএ প্রথম থেকে পঞ্চম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য তলব করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ এনটিআরসিএর কাছে পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রতিবেদন কলেজে পাঠান। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদনের অনুলিপির কপি ভাঙ্গুড়া থানায় পাঠিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নাজনীন নাহারের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দেন। এরপর কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান সনদটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য গত সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন অফিসে খোঁজখবর নিয়ে জাল সনদের বিষয়ে নিশ্চিত হন। কিন্তু এনটিআরসিএর নির্দেশের ২০ দিন পার হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘নিয়োগের পরই আমরা শুনেছিলাম ওই শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ বোর্ড তাঁকে নিয়োগ দেওয়ায় কেউই কিছু বলতে পারেনি। এ ছাড়া ওই শিক্ষকের স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু বিভিন্ন অপকর্ম করে টিকে থাকায় সবাই তাঁকে ভয়ও পায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নাজনীন নাহারকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান বলেন, ‘এনটিআরসিএ কর্তৃক নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই তাঁকে নোটিশ করা হয়। কিন্তু ওই শিক্ষক আর পরবর্তীতে কলেজে না এসে নিজে থেকে অব্যাহতি দেন। তাই আপাতত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের সভাপতি সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘৯ বছর সরকারি বেতন ভোগ করেছেন। তাই সরকারি টাকা ফেরত নিতে জাল নিবন্ধনধারীর বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর জাল সনদে ৯ বছর চাকরি! 

আপডেট সময় : ০৯:২৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ 

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সরকারি হাজি জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল ধরা পড়েছে। এ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ওই শিক্ষকের নামে থানায় মামলা করতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা করতে চাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে নাজনীন নাহার ওই কলেজে প্রভাষক পদে আবেদন করে চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময় নাজনীনের নিবন্ধন সনদ জাল সন্দেহে নিয়োগ বোর্ড তাঁকে পরীক্ষা থেকে বের করে দিতে চায়। কিন্তু তাঁর স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই বাচ্চু নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়োগ বোর্ডকে ম্যানেজ করেন। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে জাল নিবন্ধন সনদধারী নাজনীন নাহারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে কলেজের অন্য শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তবে নিয়োগ বোর্ড তাঁর নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য তখন কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ পরে আর সনদ যাচাই করেনি।

সূত্র আরো জানায়, নিয়োগের পরে এমপিওভুক্তির সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শাখায় নিবন্ধন সনদ জাল ধরা পড়ে। তখন লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করা হয়। এরপর একাধিকবার ওই কলেজে সরকারি অডিট (নিরীক্ষা) হলেও ঘুষ দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি। এভাবে ৯ বছর ধরে ওই শিক্ষক চাকরি করে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের ২৩ লক্ষাধিক টাকা।

স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০১৬ সালে এই কলেজকে জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে সরকারিভাবে শিক্ষকদের সনদসহ কলেজের সব নথি যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় গত বছরের ১২ আগস্ট এই কলেজের সরকারীকরণের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) জারি হয়। এরপর এনটিআরসিএ প্রথম থেকে পঞ্চম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য তলব করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ এনটিআরসিএর কাছে পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রতিবেদন কলেজে পাঠান। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদনের অনুলিপির কপি ভাঙ্গুড়া থানায় পাঠিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নাজনীন নাহারের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দেন। এরপর কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান সনদটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য গত সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন অফিসে খোঁজখবর নিয়ে জাল সনদের বিষয়ে নিশ্চিত হন। কিন্তু এনটিআরসিএর নির্দেশের ২০ দিন পার হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘নিয়োগের পরই আমরা শুনেছিলাম ওই শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ বোর্ড তাঁকে নিয়োগ দেওয়ায় কেউই কিছু বলতে পারেনি। এ ছাড়া ওই শিক্ষকের স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু বিভিন্ন অপকর্ম করে টিকে থাকায় সবাই তাঁকে ভয়ও পায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নাজনীন নাহারকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান বলেন, ‘এনটিআরসিএ কর্তৃক নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদ জাল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই তাঁকে নোটিশ করা হয়। কিন্তু ওই শিক্ষক আর পরবর্তীতে কলেজে না এসে নিজে থেকে অব্যাহতি দেন। তাই আপাতত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের সভাপতি সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘৯ বছর সরকারি বেতন ভোগ করেছেন। তাই সরকারি টাকা ফেরত নিতে জাল নিবন্ধনধারীর বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’