ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




আসছে ডেঙ্গু মৌসুম, আমরা কতটা প্রস্তুত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৫৮ বার পড়া হয়েছে

সৈয়দ আশিক রহমান | 

প্রতিবছরই বর্ষার সময় দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে এডিস মশার প্রভাব থাকে, তবে জুলাই থেকে নভেম্বর এ পাঁচ মাস এডিস মশার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে। বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ওই মাসগুলোতে সবচেয়ে বেশি থাকে বলেই ওই সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি ঘটে। স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। আর এই স্ত্রী এডিস মশা প্রচণ্ড জলবায়ু স্পর্শকাতর। বিজ্ঞানীদের গবেষণার রিপোর্টে দেখা গেছে স্ত্রী এডিস মশা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বাঁচতে পারে না। আর ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই মশা দ্রুত বাড়ে। সেজন্যই বাংলাদেশে মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়ালেও জুলাই থেকে নভেম্বর এই সময় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।

ডেঙ্গুর আরেক নাম হলো ‘ট্রপিক্যাল ফ্লু’। যা বিশ্বের সাতটি প্রাণঘাতী মহামারির একটি। প্রতিবছর বিশ্বের ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশ প্রতি বছর ডেঙ্গু মোকাবিলা করে আসলেও গত বছর ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করেছে। সরকারি হিসেব মতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের। তবে বেসরকারি হিসেব মতে এই সংখ্যা আরও বেশি। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের ইতিহাসে এত রোগী কখনই হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলা শুধু যে বাংলাদেশকেই করতে হয় তা কিন্তু নয়। পৃথিবীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে মডেল সিঙ্গাপুরকেও প্রতি বছর এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে হয়। সাম্প্রতিককালে এই ভাইরাস ইউরোপেও হানা দিয়েছে।
চিকিৎসকরদের তথ্য মতে গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের ধরন ভিন্ন ছিল। আগে ডেঙ্গু হলে প্রথমে উচ্চমাত্রার জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও গায়ে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হতো। এর চার থেকে সাতদিনের মাথায় ডেঙ্গু হেমোরেজিকের নানা লক্ষণ যেমন, প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তপাত হওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটতো। কিন্তু সেসব লক্ষণের ব্যতিক্রম হতে দেখা গেছে।
আক্রান্ত রোগীর দুই থেকে একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের লক্ষণসহ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এমনকি স্বল্প সময়ে রোগী ‘শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে হার্ট, কিডনি, লাংসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে দেখা গেছে। চরম অবনতির পর রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার পরেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়েছে শুধু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে। কিন্তু ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। ডেঙ্গু বিষয়ে গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ডেঙ্গুর লক্ষণ ভিন্ন ও আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় চলতি বছর এবিষয়ে আমদের প্রস্তুতি, করণীয় ও সচেতনামূলক কার্যক্রম কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের লার্ভা এখনও বিভিন্ন জায়গায় সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে যা বৃষ্টির জামা পানিতে সক্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে, এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
চলতি বছর এরইমধ্যে বেসরকারি হিসেব মতে দুইশ’র বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়নি, তার আগেই এই খবর ভাবনাটি অবশ্যই আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। এখন কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। এই ভাইরাস মোকাবিলার মাঝেই শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছি ডেঙ্গু মৌসুমের। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই দুইশ’র বেশি আক্রান্তের খবরে আমরা কতটা সচেতন? আর ডেঙ্গু প্রতিরোধেই বা কি প্রস্তুতি নিয়েছি?
বর্তমানে করোনার এই ক্রান্তিকালে প্রতিটি শহরের বাসা-বাড়ি অফিস আদালত খালি পড়ে আছে। এই বৃষ্টির সময় সেখানে পানি জমছে। এসব খালি ভবনের জমা পানি হয়ে উঠছে ডেঙ্গু প্রজনন কেন্দ্র। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগতো বটেই, সবাইকে এই জমা পানির বিষয়টি এখনই গুরুত্ব দিয়ে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রায় দুইকোটি মানুষের বসবাসের নগরীতে মাত্র কয়েকশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাধ্যমে নগরী থেকে এডিস মশার লার্ভা নির্মূল সম্ভব নয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর জনসচেতনতা। যা ডেঙ্গু বিষয়ক যেকোনও আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। সেই সচেতনা সৃষ্টি ও কিছু কার্যক্রম এখনই গ্রহণ করা দরকার।
ছোট জলাশয়গুলো অপসারণের জন্য যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। লার্ভা নির্মূলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শহরবাসীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার ও বাড়ির জলাধারগুলো ঢেকে রাখা। শহরবাসীর মাঝে তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দেয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার মতো কার্যক্রমগুলো এখনই শুরু করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন অনেকে। শুধু যে সাধারণ মানুষের এমন মতামত ছিল তা কিন্তু নয়, গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট এবং সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন আদালত।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান যে সিস্টেম তা কার্যকর নয়, এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা, মশা নিয়ে সারা বছরই গবেষণা করা, একটি সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলার কথা বলে মানুষের মনে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনিই উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র। তার সেসব আশাজাগানিয়া উদ্যোগ কতটা কার্যকরী তা দেখতে চান নগরবাসী।
লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান
প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আসছে ডেঙ্গু মৌসুম, আমরা কতটা প্রস্তুত

আপডেট সময় : ০৮:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০

সৈয়দ আশিক রহমান | 

প্রতিবছরই বর্ষার সময় দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে এডিস মশার প্রভাব থাকে, তবে জুলাই থেকে নভেম্বর এ পাঁচ মাস এডিস মশার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে। বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ওই মাসগুলোতে সবচেয়ে বেশি থাকে বলেই ওই সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি ঘটে। স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। আর এই স্ত্রী এডিস মশা প্রচণ্ড জলবায়ু স্পর্শকাতর। বিজ্ঞানীদের গবেষণার রিপোর্টে দেখা গেছে স্ত্রী এডিস মশা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বাঁচতে পারে না। আর ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই মশা দ্রুত বাড়ে। সেজন্যই বাংলাদেশে মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়ালেও জুলাই থেকে নভেম্বর এই সময় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।

ডেঙ্গুর আরেক নাম হলো ‘ট্রপিক্যাল ফ্লু’। যা বিশ্বের সাতটি প্রাণঘাতী মহামারির একটি। প্রতিবছর বিশ্বের ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশ প্রতি বছর ডেঙ্গু মোকাবিলা করে আসলেও গত বছর ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করেছে। সরকারি হিসেব মতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের। তবে বেসরকারি হিসেব মতে এই সংখ্যা আরও বেশি। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের ইতিহাসে এত রোগী কখনই হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলা শুধু যে বাংলাদেশকেই করতে হয় তা কিন্তু নয়। পৃথিবীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে মডেল সিঙ্গাপুরকেও প্রতি বছর এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে হয়। সাম্প্রতিককালে এই ভাইরাস ইউরোপেও হানা দিয়েছে।
চিকিৎসকরদের তথ্য মতে গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের ধরন ভিন্ন ছিল। আগে ডেঙ্গু হলে প্রথমে উচ্চমাত্রার জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও গায়ে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হতো। এর চার থেকে সাতদিনের মাথায় ডেঙ্গু হেমোরেজিকের নানা লক্ষণ যেমন, প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তপাত হওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটতো। কিন্তু সেসব লক্ষণের ব্যতিক্রম হতে দেখা গেছে।
আক্রান্ত রোগীর দুই থেকে একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের লক্ষণসহ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এমনকি স্বল্প সময়ে রোগী ‘শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে হার্ট, কিডনি, লাংসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে দেখা গেছে। চরম অবনতির পর রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার পরেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়েছে শুধু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে। কিন্তু ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। ডেঙ্গু বিষয়ে গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ডেঙ্গুর লক্ষণ ভিন্ন ও আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় চলতি বছর এবিষয়ে আমদের প্রস্তুতি, করণীয় ও সচেতনামূলক কার্যক্রম কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের লার্ভা এখনও বিভিন্ন জায়গায় সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে যা বৃষ্টির জামা পানিতে সক্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে, এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
চলতি বছর এরইমধ্যে বেসরকারি হিসেব মতে দুইশ’র বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়নি, তার আগেই এই খবর ভাবনাটি অবশ্যই আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। এখন কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। এই ভাইরাস মোকাবিলার মাঝেই শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছি ডেঙ্গু মৌসুমের। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই দুইশ’র বেশি আক্রান্তের খবরে আমরা কতটা সচেতন? আর ডেঙ্গু প্রতিরোধেই বা কি প্রস্তুতি নিয়েছি?
বর্তমানে করোনার এই ক্রান্তিকালে প্রতিটি শহরের বাসা-বাড়ি অফিস আদালত খালি পড়ে আছে। এই বৃষ্টির সময় সেখানে পানি জমছে। এসব খালি ভবনের জমা পানি হয়ে উঠছে ডেঙ্গু প্রজনন কেন্দ্র। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগতো বটেই, সবাইকে এই জমা পানির বিষয়টি এখনই গুরুত্ব দিয়ে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রায় দুইকোটি মানুষের বসবাসের নগরীতে মাত্র কয়েকশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাধ্যমে নগরী থেকে এডিস মশার লার্ভা নির্মূল সম্ভব নয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর জনসচেতনতা। যা ডেঙ্গু বিষয়ক যেকোনও আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। সেই সচেতনা সৃষ্টি ও কিছু কার্যক্রম এখনই গ্রহণ করা দরকার।
ছোট জলাশয়গুলো অপসারণের জন্য যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। লার্ভা নির্মূলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শহরবাসীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার ও বাড়ির জলাধারগুলো ঢেকে রাখা। শহরবাসীর মাঝে তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দেয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার মতো কার্যক্রমগুলো এখনই শুরু করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন অনেকে। শুধু যে সাধারণ মানুষের এমন মতামত ছিল তা কিন্তু নয়, গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট এবং সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন আদালত।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান যে সিস্টেম তা কার্যকর নয়, এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা, মশা নিয়ে সারা বছরই গবেষণা করা, একটি সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলার কথা বলে মানুষের মনে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনিই উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র। তার সেসব আশাজাগানিয়া উদ্যোগ কতটা কার্যকরী তা দেখতে চান নগরবাসী।
লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান
প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি