ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




করোনা: জরুরি সেবা তালিকায় নেই ইন্টারনেট-টিভি সংযোগ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে গ্রাহক ভোগান্তি বেড়েছে। একদিকে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর নেটে গতি কমেছে। অন্যদিকে সংযোগে সমস্যা হলেও সার্ভিস পাচ্ছেন না তারা। সার্ভিস কোম্পানিগুলো বলছে, জরুরি সেবা তালিকায় না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কাজে বাধা পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে বেড়ে গেছে গ্রাহকের চাহিদা। বেশিরভাগ মানুষই এখন ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। বাসাতেই করছেন অফিসের কাজ। এমনকি শিক্ষার্থীরাও বাসায় বসে ক্লাস করছেন অনলাইনে। অন্যদিকে পরিবারের বাকি সদস্যরা সময় কাটাতে কেবল টিভি সংযোগের ওপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে গেছেন। ফলে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে বেড়েছে গ্রাহক চাহিদা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ গ্রাহকই অভিযোগ করেছেন, ধীরগতির ইন্টারনেটের। অন্যদিকে, কেবল টিভি সংযোগে নিয়মিত ঝামেলা বেড়েছে। শনিবার ঝড় হওয়ায় বেশিরভাগ এলাকাতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকরা বলছেন, বেশিরভাগ কোম্পানিতে অভিযোগ করেও সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর জিগাতলায় বসবাস করেন সংবাদকর্মী সার্জিন শরীফ। তিনি অফিসের কাজ করেন এখন বাসায়। তার অভিযোগ, অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর তার ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। ফলে নিয়মিতই কাজ করতে সমস্যা বোধ করছেন তিনি।
নিকুঞ্জের বাসিন্দা আরিফ রাশাদ অভিযোগ করলেন অনেকটা একই রকম। ছুটির কারণে এখন অখণ্ড অবসর তার। সন্তানকে পড়াশোনায় সাহায্য করেন তিনি। জানালেন, সন্তানের বেশিরভাগ পড়াশোনাই এখন ইন্টারনেটে। কিন্তু এ অবস্থায় তিনিও ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছন ধীর গতির। আর ঝড়ের দিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কেবল টিভি সংযোগ। তার অভিযোগ, সার্ভিস কোম্পানির হটলাইনে ফোন দিলেও ধরেন না তারা। ইন্টারনেট সার্ভিস কোম্পানিকে জানালেও কোনো সার্ভিস পাননি তিনি।
রাজধানীর নাখালপাড়ায় থাকেন আইনজীবী পুলক আশরাফ। তিনি অফিসের বেশিরভাগ কাজই এখন বাসায় করেন। জানালেন, বাসায় টিভি সংযোগ নেই দুদিন ধরে। ইন্টারনেট সংযোগও বেশ ধীর গতির। ব্রডব্যান্ড কোম্পানিকে অভিযোগ করেও সংকটের সমাধান মেলেনি।
এ বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোনো নোটিশ ছাড়াই পান্থপথে ডিপিডিসি ইন্টারনেটের তার কেটে দিয়েছে। এতে পাঁচ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। তার কেটে দেওয়ায় শুধু পান্থপথ নয় অনেক এলাকার ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।’
ধীর গতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ২৫ মার্চের পর থেকেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। আগে ১৪০০ জিবিপিএস ব্যবহার হতো, এখন তা বেড়ে ১৭০০ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু গতি যে খুব একটা কমে গেছে তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল তুলতে পারছি না। এই অবস্থা কতদিন চলে তাওতো বলা যাচ্ছে না। বিল না উঠাতে পারলে আমরা আমাদের কর্মচারীদের বেতন দেবো কী করে। সার্ভিস দিবো কী করে। আবার অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বাধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা চাই।
কেবল অপারেটস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজও বললেন একইরকম কথা। তিনি বলেন, আমরা জরুরি তালিকায় না থাকায় অনেক জায়গায় সেবা দিতে পারছি না। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বাধা দিচ্ছে। লকডাউনের কারণে টাকাও তুলতে পারছি না। কর্মচারীকে বেতনও দিতে পারছি না। ফলে সার্ভিস দিতে গিয়েও বিপদে পড়তে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




করোনা: জরুরি সেবা তালিকায় নেই ইন্টারনেট-টিভি সংযোগ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

আপডেট সময় : ০১:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে গ্রাহক ভোগান্তি বেড়েছে। একদিকে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর নেটে গতি কমেছে। অন্যদিকে সংযোগে সমস্যা হলেও সার্ভিস পাচ্ছেন না তারা। সার্ভিস কোম্পানিগুলো বলছে, জরুরি সেবা তালিকায় না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কাজে বাধা পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে বেড়ে গেছে গ্রাহকের চাহিদা। বেশিরভাগ মানুষই এখন ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। বাসাতেই করছেন অফিসের কাজ। এমনকি শিক্ষার্থীরাও বাসায় বসে ক্লাস করছেন অনলাইনে। অন্যদিকে পরিবারের বাকি সদস্যরা সময় কাটাতে কেবল টিভি সংযোগের ওপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে গেছেন। ফলে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সংযোগে বেড়েছে গ্রাহক চাহিদা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ গ্রাহকই অভিযোগ করেছেন, ধীরগতির ইন্টারনেটের। অন্যদিকে, কেবল টিভি সংযোগে নিয়মিত ঝামেলা বেড়েছে। শনিবার ঝড় হওয়ায় বেশিরভাগ এলাকাতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকরা বলছেন, বেশিরভাগ কোম্পানিতে অভিযোগ করেও সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর জিগাতলায় বসবাস করেন সংবাদকর্মী সার্জিন শরীফ। তিনি অফিসের কাজ করেন এখন বাসায়। তার অভিযোগ, অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর তার ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। ফলে নিয়মিতই কাজ করতে সমস্যা বোধ করছেন তিনি।
নিকুঞ্জের বাসিন্দা আরিফ রাশাদ অভিযোগ করলেন অনেকটা একই রকম। ছুটির কারণে এখন অখণ্ড অবসর তার। সন্তানকে পড়াশোনায় সাহায্য করেন তিনি। জানালেন, সন্তানের বেশিরভাগ পড়াশোনাই এখন ইন্টারনেটে। কিন্তু এ অবস্থায় তিনিও ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছন ধীর গতির। আর ঝড়ের দিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কেবল টিভি সংযোগ। তার অভিযোগ, সার্ভিস কোম্পানির হটলাইনে ফোন দিলেও ধরেন না তারা। ইন্টারনেট সার্ভিস কোম্পানিকে জানালেও কোনো সার্ভিস পাননি তিনি।
রাজধানীর নাখালপাড়ায় থাকেন আইনজীবী পুলক আশরাফ। তিনি অফিসের বেশিরভাগ কাজই এখন বাসায় করেন। জানালেন, বাসায় টিভি সংযোগ নেই দুদিন ধরে। ইন্টারনেট সংযোগও বেশ ধীর গতির। ব্রডব্যান্ড কোম্পানিকে অভিযোগ করেও সংকটের সমাধান মেলেনি।
এ বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোনো নোটিশ ছাড়াই পান্থপথে ডিপিডিসি ইন্টারনেটের তার কেটে দিয়েছে। এতে পাঁচ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। তার কেটে দেওয়ায় শুধু পান্থপথ নয় অনেক এলাকার ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।’
ধীর গতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ২৫ মার্চের পর থেকেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। আগে ১৪০০ জিবিপিএস ব্যবহার হতো, এখন তা বেড়ে ১৭০০ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু গতি যে খুব একটা কমে গেছে তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল তুলতে পারছি না। এই অবস্থা কতদিন চলে তাওতো বলা যাচ্ছে না। বিল না উঠাতে পারলে আমরা আমাদের কর্মচারীদের বেতন দেবো কী করে। সার্ভিস দিবো কী করে। আবার অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বাধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা চাই।
কেবল অপারেটস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজও বললেন একইরকম কথা। তিনি বলেন, আমরা জরুরি তালিকায় না থাকায় অনেক জায়গায় সেবা দিতে পারছি না। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বাধা দিচ্ছে। লকডাউনের কারণে টাকাও তুলতে পারছি না। কর্মচারীকে বেতনও দিতে পারছি না। ফলে সার্ভিস দিতে গিয়েও বিপদে পড়তে হচ্ছে।