ঢাকা ০৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বস্তি গুঁড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু পুলিশ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২০ ৯৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বস্তি গুঁড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক;  দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মিলে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের বস্তি’ সন্দেহে প্রায় ২০০ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, পুলিশ এই উচ্ছেদ অভিযানে যাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে তারা সবাই ভারতের নাগরিক এবং তাদের কাছে এদেশের বৈধ পরিচয়পত্রও আছে।
তাদের আরও অভিযোগ, শহরের বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালিই সোশ্যাল মিডিয়াতে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে লাগাতার উসকানিমূলক পোস্ট করে চলেছেন। আর এর ভিত্তিতেই পুলিশ বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে এই অভিযান শুরু করেছে।
বেঙ্গালুরুর বেলান্ডার শহরতলিসহ আরও কয়েকটি জায়গায় তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু হয় শনিবার রাতে। দফায় দফায় তা চলতে থাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ধরে।
শহরের একটি এনজিও’র কর্মী আর কলিমুল্লা বিবিসি বাংলাকে বলেন, কুন্দনহাল্লি, মোনেকালাসহ মোট চারটি জায়গায় একসঙ্গে বুলডোজার নিয়ে পুলিশ হানা দেয়। তারা বলে, বাংলাদেশিদের দুই ঘণ্টার মধ্যে ঘর খালি করে দিতে হবে। আমি ও আমাদের টিম তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি।
তিনি বলেন, পুলিশ ঘরে ঢুকে খাবার পানির পাত্রও লাথি মেরে উল্টে দেয়, কেটে দেয় বিদ্যুৎ সংযোগ। সঙ্গে চলতে থাকে বাংলাদেশিদের নামে গালাগালি।
স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল সুবর্ণা নিউজেও দাবি করা হতে থাকে তাদের স্টিং অপারেশনেই ফাঁস হয়েছে যে ওই বস্তির বাসিন্দারা বাংলাদেশি। ওই চ্যানেলটি জানায়, পুলিশকে ঘুষ দিয়েই তারা ভারতের কাগজপত্র বানিয়েছে, এটা প্রকাশ হওয়াতেই না কি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
এদিকে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও যদিও দাবি করেছেন নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন, আইনজীবী ও সমাজকর্মী দর্শনা মিত্র কিন্তু বিবিসিকে অন্য ছবিই তুলে ধরলেন।
দর্শনা মিত্র বলছিলেন, আসলে বেঙ্গালুরুর অর্থনীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাথাল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে, অনেক অফিস গড়ে উঠেছে। আর এর ফলে ইনফর্মাল সেক্টরে গৃহকর্মী, আবাসন খাতের শ্রমিক, স্বুলবাসের চালক – এরকম অসংখ্য কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো মেটাতে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা থেকে দলে দলে লোকজন সেখানে যাচ্ছেনও।

তিনি বলেন, তাদের মধ্যে প্রচুর লোকই বাঙালি, আর মাইগ্রেশন প্যাটার্নটা স্টাডি করলেই দেখা যাবে তারা বেশির ভাগই গেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম-অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে। এখন বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে কে পশ্চিমবঙ্গের বা কে বাংলাদেশি, কর্নাটকের পুলিশ বা একজন কান্নাডিগা আপাতদৃষ্টিতে সেই ফারাক যেহেতু করতে পারছে না – তাই তাদের অ্যাপ্রোচাটাই হল মুসলিম হলেই তাদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দাও।
দর্শনা মিত্র বলেন, এখানে কোনও বাছবিচারের ব্যাপারই নেই- এবারের ঘটনায় লোকজন তো তাদের পরিচয়পত্র বা আইডি প্রুফ দেখাতেও চেয়েছিল, কিন্তু ব্যাঙ্গালোর পুলিশ তা চেক করারও প্রয়োজন বোধ করেনি।
এদিকে শনিবার ও রোববারের এই বস্তি ভাঙচুরের পেছনে অনেকেই তুলে ধরছেন গত সপ্তাহে টুইটারে শাসক দল বিজেপির অত্যন্ত প্রভাবশালী বিধায়ক ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা অরবিন্দ লিম্বাভালির একগুচ্ছ পোস্টকে। লিম্বাভালির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে শহরের একটি বস্তিকে দেখিয়ে দাবি করা হয়, সেটাই নাকি বেঙ্গালুরুতে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের মূল কেন্দ্র’।
সেখানে তাদের আলাদা রাস্তা আছে, মাসে পাঁচ থেকে আট হাজার রুপিতে বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকছে তারা- আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির লাইন, নিজস্ব দোকানপাটও বানিয়ে নিয়েছে, বলেও জানানো হয়।
ভিডিওটিতে আরও বলা হয়, রোজই সেখানে তারা নতুন লোকজনও নিয়ে আসছে, বাংলাদেশিদের রমরমা বেড়েই চলেছে। এই পোস্টের পর সাতদিনও যেতে না-যেতেই ঠিক সেই বস্তিটিই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
অ্যাক্টিভিস্ট জকি সোমান বিবিসিকে বলছিলেন, বিজেপির ওই বিধায়ক গত তিন বছর ধরেই এই একই জিনিস করে আসছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে তাদের তাড়ানোর জিগির তুলছেন। তিনি বলেন, ভারতের বৈধ নাগরিকদের এভাবে অপমান করার জন্য তার বিরুদ্ধে আমরা এখন মানহানির মামলাও করতে যাচ্ছি।
ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি তৈরির নামে মুসলিমরা যে হয়রানি ও ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন, ফলে বেঙ্গালুরুতে তা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলেও এই সমাজকর্মীদের বক্তব্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বস্তি গুঁড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু পুলিশ

আপডেট সময় : ০২:১০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক;  দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মিলে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের বস্তি’ সন্দেহে প্রায় ২০০ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, পুলিশ এই উচ্ছেদ অভিযানে যাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে তারা সবাই ভারতের নাগরিক এবং তাদের কাছে এদেশের বৈধ পরিচয়পত্রও আছে।
তাদের আরও অভিযোগ, শহরের বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালিই সোশ্যাল মিডিয়াতে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে লাগাতার উসকানিমূলক পোস্ট করে চলেছেন। আর এর ভিত্তিতেই পুলিশ বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে এই অভিযান শুরু করেছে।
বেঙ্গালুরুর বেলান্ডার শহরতলিসহ আরও কয়েকটি জায়গায় তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু হয় শনিবার রাতে। দফায় দফায় তা চলতে থাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ধরে।
শহরের একটি এনজিও’র কর্মী আর কলিমুল্লা বিবিসি বাংলাকে বলেন, কুন্দনহাল্লি, মোনেকালাসহ মোট চারটি জায়গায় একসঙ্গে বুলডোজার নিয়ে পুলিশ হানা দেয়। তারা বলে, বাংলাদেশিদের দুই ঘণ্টার মধ্যে ঘর খালি করে দিতে হবে। আমি ও আমাদের টিম তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি।
তিনি বলেন, পুলিশ ঘরে ঢুকে খাবার পানির পাত্রও লাথি মেরে উল্টে দেয়, কেটে দেয় বিদ্যুৎ সংযোগ। সঙ্গে চলতে থাকে বাংলাদেশিদের নামে গালাগালি।
স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল সুবর্ণা নিউজেও দাবি করা হতে থাকে তাদের স্টিং অপারেশনেই ফাঁস হয়েছে যে ওই বস্তির বাসিন্দারা বাংলাদেশি। ওই চ্যানেলটি জানায়, পুলিশকে ঘুষ দিয়েই তারা ভারতের কাগজপত্র বানিয়েছে, এটা প্রকাশ হওয়াতেই না কি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
এদিকে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও যদিও দাবি করেছেন নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন, আইনজীবী ও সমাজকর্মী দর্শনা মিত্র কিন্তু বিবিসিকে অন্য ছবিই তুলে ধরলেন।
দর্শনা মিত্র বলছিলেন, আসলে বেঙ্গালুরুর অর্থনীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাথাল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে, অনেক অফিস গড়ে উঠেছে। আর এর ফলে ইনফর্মাল সেক্টরে গৃহকর্মী, আবাসন খাতের শ্রমিক, স্বুলবাসের চালক – এরকম অসংখ্য কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো মেটাতে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা থেকে দলে দলে লোকজন সেখানে যাচ্ছেনও।

তিনি বলেন, তাদের মধ্যে প্রচুর লোকই বাঙালি, আর মাইগ্রেশন প্যাটার্নটা স্টাডি করলেই দেখা যাবে তারা বেশির ভাগই গেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম-অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে। এখন বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে কে পশ্চিমবঙ্গের বা কে বাংলাদেশি, কর্নাটকের পুলিশ বা একজন কান্নাডিগা আপাতদৃষ্টিতে সেই ফারাক যেহেতু করতে পারছে না – তাই তাদের অ্যাপ্রোচাটাই হল মুসলিম হলেই তাদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দাও।
দর্শনা মিত্র বলেন, এখানে কোনও বাছবিচারের ব্যাপারই নেই- এবারের ঘটনায় লোকজন তো তাদের পরিচয়পত্র বা আইডি প্রুফ দেখাতেও চেয়েছিল, কিন্তু ব্যাঙ্গালোর পুলিশ তা চেক করারও প্রয়োজন বোধ করেনি।
এদিকে শনিবার ও রোববারের এই বস্তি ভাঙচুরের পেছনে অনেকেই তুলে ধরছেন গত সপ্তাহে টুইটারে শাসক দল বিজেপির অত্যন্ত প্রভাবশালী বিধায়ক ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা অরবিন্দ লিম্বাভালির একগুচ্ছ পোস্টকে। লিম্বাভালির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে শহরের একটি বস্তিকে দেখিয়ে দাবি করা হয়, সেটাই নাকি বেঙ্গালুরুতে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের মূল কেন্দ্র’।
সেখানে তাদের আলাদা রাস্তা আছে, মাসে পাঁচ থেকে আট হাজার রুপিতে বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকছে তারা- আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির লাইন, নিজস্ব দোকানপাটও বানিয়ে নিয়েছে, বলেও জানানো হয়।
ভিডিওটিতে আরও বলা হয়, রোজই সেখানে তারা নতুন লোকজনও নিয়ে আসছে, বাংলাদেশিদের রমরমা বেড়েই চলেছে। এই পোস্টের পর সাতদিনও যেতে না-যেতেই ঠিক সেই বস্তিটিই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
অ্যাক্টিভিস্ট জকি সোমান বিবিসিকে বলছিলেন, বিজেপির ওই বিধায়ক গত তিন বছর ধরেই এই একই জিনিস করে আসছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে তাদের তাড়ানোর জিগির তুলছেন। তিনি বলেন, ভারতের বৈধ নাগরিকদের এভাবে অপমান করার জন্য তার বিরুদ্ধে আমরা এখন মানহানির মামলাও করতে যাচ্ছি।
ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি তৈরির নামে মুসলিমরা যে হয়রানি ও ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন, ফলে বেঙ্গালুরুতে তা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলেও এই সমাজকর্মীদের বক্তব্য।