ঢাকা ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ধর্ষণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৯ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর; মাদারীপুরের ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব বোতলা গ্রামের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই কিশোরীকে দুইদিন আটকে রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই পরিবারকে মামলা না করা ও মীমাংসার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও ডাসার থানার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে শুক্রবার গভীর রাতে চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই কিশোরীকে আটিপাড়া এলাকার মজিবুর হাওলাদারের ছেলে শাকিব, জাকির মোল্লার ছেলে নয়ন, মন্নান খানের ছেলে আল-আমিন, হুমায়ুন হাওলাদারের ছেলে হৃদয় ও তার বন্ধুরা নয়নের চাচা মাহবুব সরদারের নির্জন ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ওই দুই কিশোরীর ওপর নির্যাতন চালায় ও ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ওই কিশোরীদের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় পালিয়ে যায় শাকিব, নয়ন, রবিউল, হৃদয়, আল-আমিন ও তার বন্ধুরা।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনা মীমাংসা করার কথা বলে ডাসার থানা পুলিশের এসআই দেলায়ার ও বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। এছাড়া দুই কিশোরীর পরিবারকে মামলা না করা ও বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয়।

পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জেনে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থালে গেলে মীমাংসার কথা অস্বীকার করেন ওই এসআই ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিন মোল্লা।

ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নেই। আমার মেয়ে ও আরেক মেয়ে বুধবার স্কুলে যায়। এরপর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শুনি স্থানীয়রা আমার মেয়েসহ আরেক মেয়েকে এক ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে। এখানকার মাতুব্বররা সালিশ মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে আমাদের মামলা করতে দেয়নি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দিয়েছে এবং মেয়েকে কয়েক দিন লুকিয়ে রাখতে বলেছে। তাই মেয়েকে ওর মামা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।

অপর কিশোরীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আপনাদের কাছে কিছু বললে আমাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবে।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মেম্বার বলেন, আমরা ঘটনাটি টের পেয়ে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করি। এসময় ওই ফ্লাট থেকে ৭/৮ জন পালিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি বখাটেরা ওই মেয়েদের ইজ্জত হরণ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, দেলোয়ার দারোগা এবং মতিন মোল্লা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নাম করে তিন লাখ টাকা নিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এ কারণেই নাকি মামলা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে ফ্ল্যাট মালিক মাহবুব সরদারের ফ্ল্যাটে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে তারা ওই ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

এদিকে সালিশে মীমাংসা করে দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা। তিনি বলেন, মেয়ে পক্ষের লোকজন বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে আমার কাছে এসেছিল। তবে আমি টাকাও নেইনি মীমাংসাও করিনি।

টাকা নিয়ে সালিশ মীমাংসার ব্যাপারে ডাসার থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো নেগিটিভ কথাই ভালো শোনেন। শুনলে তো কিছু করার নাই। তবে আপনারা আরও তদন্ত করে দেখুন।

অন্যদিকে এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে শুক্রবার গভীর রাতে চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ধর্ষণের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালাদার বলেন, এ ঘটনা সালিশযোগ্য নয়। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ধর্ষণ

আপডেট সময় : ০২:০৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর; মাদারীপুরের ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব বোতলা গ্রামের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই কিশোরীকে দুইদিন আটকে রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই পরিবারকে মামলা না করা ও মীমাংসার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও ডাসার থানার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে শুক্রবার গভীর রাতে চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই কিশোরীকে আটিপাড়া এলাকার মজিবুর হাওলাদারের ছেলে শাকিব, জাকির মোল্লার ছেলে নয়ন, মন্নান খানের ছেলে আল-আমিন, হুমায়ুন হাওলাদারের ছেলে হৃদয় ও তার বন্ধুরা নয়নের চাচা মাহবুব সরদারের নির্জন ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ওই দুই কিশোরীর ওপর নির্যাতন চালায় ও ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ওই কিশোরীদের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় পালিয়ে যায় শাকিব, নয়ন, রবিউল, হৃদয়, আল-আমিন ও তার বন্ধুরা।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনা মীমাংসা করার কথা বলে ডাসার থানা পুলিশের এসআই দেলায়ার ও বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। এছাড়া দুই কিশোরীর পরিবারকে মামলা না করা ও বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয়।

পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জেনে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থালে গেলে মীমাংসার কথা অস্বীকার করেন ওই এসআই ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিন মোল্লা।

ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নেই। আমার মেয়ে ও আরেক মেয়ে বুধবার স্কুলে যায়। এরপর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শুনি স্থানীয়রা আমার মেয়েসহ আরেক মেয়েকে এক ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে। এখানকার মাতুব্বররা সালিশ মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে আমাদের মামলা করতে দেয়নি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দিয়েছে এবং মেয়েকে কয়েক দিন লুকিয়ে রাখতে বলেছে। তাই মেয়েকে ওর মামা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।

অপর কিশোরীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আপনাদের কাছে কিছু বললে আমাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবে।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মেম্বার বলেন, আমরা ঘটনাটি টের পেয়ে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করি। এসময় ওই ফ্লাট থেকে ৭/৮ জন পালিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি বখাটেরা ওই মেয়েদের ইজ্জত হরণ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, দেলোয়ার দারোগা এবং মতিন মোল্লা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নাম করে তিন লাখ টাকা নিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এ কারণেই নাকি মামলা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে ফ্ল্যাট মালিক মাহবুব সরদারের ফ্ল্যাটে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে তারা ওই ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

এদিকে সালিশে মীমাংসা করে দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা। তিনি বলেন, মেয়ে পক্ষের লোকজন বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে আমার কাছে এসেছিল। তবে আমি টাকাও নেইনি মীমাংসাও করিনি।

টাকা নিয়ে সালিশ মীমাংসার ব্যাপারে ডাসার থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো নেগিটিভ কথাই ভালো শোনেন। শুনলে তো কিছু করার নাই। তবে আপনারা আরও তদন্ত করে দেখুন।

অন্যদিকে এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে শুক্রবার গভীর রাতে চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ধর্ষণের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালাদার বলেন, এ ঘটনা সালিশযোগ্য নয়। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।