টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশন’র ডিডির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

- আপডেট সময় : ১২:২৩:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি অনিয়ম আল লুটপাটে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। লুটপাট হরিলুটের বেপরোয়া মচ্ছবে টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী যেন অবৈধ সম্পদের পেটুক এক কর্মকর্তা। নিজের কর্মস্থল কার্যালয়ে তিনি দাঁত কেলিয়ে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি করে যাচ্ছে মুচকি হেসেই যাচ্ছেন নিয়মিত। প্রধান এই কর্তার অনিয়ম ভান্ডারে রয়েছে আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল সনদধারীদেরও নিয়োগ- বাণিজ্যের সমাহার।
এই কর্তার দাপটে ক্লাস না নিয়েও তার সহযোগিতায় কেউ কেউ বেতন তুলে নিয়েছেন এমনই মন্তব্য করেন একাধিক সূত্র। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করে। বিভিন্ন সময়ে ওই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতে ১২টি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক সহজ কুরআন শিক্ষা, সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ৬৫০টি, মডেল রিসোর্স সেন্টার ১২টি ও সাধারণ রিসোর্স সেন্টার রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি একেই কার্যালয়ে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন সেই-সময়ও ছিলো অনিয়মের ঝুলি।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পে টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী শিক্ষক, সুপারভাইজার, ফিল্ড অফিসার, মাস্টার ট্রেইনার, মডেল কেয়ারটেকার, সাধারণ কেয়ারটেকার, নিয়োগ ও শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে টাঙ্গাইল শহরে কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন ভবন।
একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী তার আত্মীয়স্বজন ও এজেন্ট নিয়োগ করে প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন ও জনবল নিয়োগে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ২৫/৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। মোহাম্মদ আলীর জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার আত্মীয় ও এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন না করেই বছরের পর বছর সরকারি বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সব কেন্দ্রের অধিকাংশ বন্ধ থাকলেও সরকারি সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রেখে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মোহাম্মদ আলী। তার বোন লিলি আক্তার কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে, শ্যালিকা সেলিনা খান ও শ্যালিকার জা (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী) তাসলিমা আমিনবাগ কেন্দ্র, শ্যালক জয়নাল আবেদীন সদর উপজেলার গালার দায়িত্বে, তার মেয়ের বান্ধবীর বোন সদরের বয়স্ক কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। শহরের পীরবাড়ী মক্তব কলেজপাড়ার মিজানুর রহমানকে জাল সনদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার স্ত্রী কালিহাতীর ফটিকজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির সুবাদে ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রীকে একটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার কোনো শিক্ষাগত সনদ নেই। মোহাম্মদ আলীর ভাই ফারুক হোসেন গয়হাটা নাগরপুরে বয়স্ক কেন্দ্রের দায়িত্বে, খালাতো বোন সদরের কাতুলী ইউনিয়নে প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্রের দায়িত্বে, তার ফুপুর বাড়ি করটিয়ার আলী আকবর নামে এক ব্যক্তি একটি কেন্দ্রের দায়িত্বে, শ্বশুরের পালিত মেয়ের ঘরের নাতনিকে দাইন্যা ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। দেলদুয়ারের পাথরাইল ইউনিয়নের চরপাড়ার রাকিব হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। একই ইউনিয়নের ভুরভুরিয়া গ্রামের ফরিদ আহমেদ নামে এক জেলখাটা আসামিকেও বেতন দেওয়া হয়েছে। একই উপজেলার মাইজাল দেওলী গ্রামে তার এক আত্মীয় কোনো পাঠদান না করেও বেতনভাতা নেন।
মির্জাপুর উপজেলার পেকুয়াতে এক শিক্ষিকার সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। মির্জাপুরে বুবলিকে নামে এক শিক্ষিকা জাল সনদে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রযেছে। টাকার বিনিময়ে বাসাইল উপজেলার মোস্তফা, এবাদত জসিমউদ্দিন, নুর হোসেনকে জাল সনদে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপপরিচালকের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় বাসাইলের শিখা খান নামে এক শিক্ষিকা কেন্দ্র না চালিয়েই বেতন তুলে নেন।
এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার জন্য শিক্ষা উপকরণ কেনা ও বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে মুঠো গুনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব মিথ্যে অভিযোগ সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার জন্যই করা হয়েছে।