ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গণপূর্তে পীরের কেরামতি: পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রধান প্রকৌশলী চেয়ারে বহাল! Logo ডিবির অভিযানে দোহার থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদকসহ পাঁচজন গ্রেফতার Logo অবসরে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার – পর্ব ১ Logo ১০০ কেজি গাঁজা ও কাভার্ড পিকআপসহ দুই মাদক কারবারি ডিবির হাতে গ্রেফতার Logo আলোচিত দুর্নীতিবাজ জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঈনুল বহাল তবিয়তে!  Logo বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিবারের শেয়ার, ব্যাংক হিসাব বন্ধের নির্দেশ  Logo দশমিনায় যুবদল নেতাকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন Logo কেরানীগঞ্জ মডেল ভূমি অফিস যেন ঘুষের আস্তানা: এসিল্যান্ড থেকে পিয়ন সবাই এক আত্মা!  Logo শেখ সোহেলের সহচর কাউট রাজু গ্রুপের তাণ্ডব: অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি Logo পদোন্নতি,বদলি. কেনাকাটায় পাহাড়সম দুর্নীতি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে: দুদকের বিশেষ অভিযান

উপকূলের অদম্য মেধাবী শিমু প্রাইভেট ও গাইড বই না পড়েও পেল জিপিএ ৫

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুন ২০২০ ১০৭ বার পড়া হয়েছে

এম. এ. আলিম খানঃ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে সুন্দরবন উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গিয়েছিলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কিভাবে দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও ভালো ফলাফল করা যায় এবিষয়ে ওরিয়েন্টেশন দেয়ার জন্য। কিভাবে দল গঠন করবেন, কিভাবে দলীয়ভাবে বসবেন, কার দায়িত্ব কি হবে, কিভাবে শিক্ষকরা ক্লাস নিবেন এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং গাইড বই এর সাহায্য ছাড়াই কিভাবে ভালো ফলাফল করা যায় এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত হেঞ্চি বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালে যখন আমি দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান মনিটরিং করতে গেলাম তখন দশম শ্রেণির একটি মেয়েকে পেলাম দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং সে ভালো ফলাফল করছে। তার কাছে বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাইলে সে বললো দলীয়ভাবে পাঠদানের ফলে যেহেতু সে দলনেতা তাই তাকে অন্যদের পড়া বুঝিয়ে দিতে হয়। ফলে স্কুলের পড়া অনেকটা স্কুলেই হয়ে যায় এবং বাড়িতে গিয়ে তাকে আর বেশি পড়তে হয় না। কোন বিষয়ে সে নিজে বা দলীয়ভাবে না বুঝতে পারলে শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে বুঝে নেন। ফলে তার আর প্রাইভেট পড়তে হয় না। আর যেহেতু বাড়িতে পড়ার চাপ কম থাকে তাই সে নিজে নিজে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর লিখে নোট তৈরি করে। এভাবে সে গাইড বই ও প্রাইভেট শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই স্কুলে বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে থাকে এবং তার মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। এতক্ষণ যার কথা বলছি সে হলো শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের মোঃ নূর ইসলামের মেয়ে শিমু আক্তার। ৪ বোনের মধ্যে শিমু তৃতীয়। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ( গোল্ডেন এ প্লাস)। উল্লেখ্য শিমু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫ এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিমু একজন ভালো বিতার্কিক এবং সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারে। শিমুর এই ফলাফলের পিছনে শিক্ষকদের পাশাপাশি তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভাব-বাংলাদেশের কথা অকপটে স্বীকার করে। ভাব বাংলাদেশ থেকে সে বিতর্ক ও ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে। আর ভাব বাংলাদেশের দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান তার লেখা পড়ার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। শিমু ভাব বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। শিমু ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। তবে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা দিনমজুর বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা। উপকূলের মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে। এভাবে সংগ্রাম করে লেখা পড়া করে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পাওয়া একেবারে সহজ কথা নয়। আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই উপকূলের অদম্য মেধাবী শিমু আক্তারকে। তার লেখা পড়ার পথ হোক মসৃণ এ দোয়া করি।

লেখকঃ উন্নয়নকর্মী

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

উপকূলের অদম্য মেধাবী শিমু প্রাইভেট ও গাইড বই না পড়েও পেল জিপিএ ৫

আপডেট সময় : ০৮:৩২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুন ২০২০

এম. এ. আলিম খানঃ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে সুন্দরবন উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গিয়েছিলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কিভাবে দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও ভালো ফলাফল করা যায় এবিষয়ে ওরিয়েন্টেশন দেয়ার জন্য। কিভাবে দল গঠন করবেন, কিভাবে দলীয়ভাবে বসবেন, কার দায়িত্ব কি হবে, কিভাবে শিক্ষকরা ক্লাস নিবেন এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং গাইড বই এর সাহায্য ছাড়াই কিভাবে ভালো ফলাফল করা যায় এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত হেঞ্চি বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালে যখন আমি দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান মনিটরিং করতে গেলাম তখন দশম শ্রেণির একটি মেয়েকে পেলাম দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং সে ভালো ফলাফল করছে। তার কাছে বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাইলে সে বললো দলীয়ভাবে পাঠদানের ফলে যেহেতু সে দলনেতা তাই তাকে অন্যদের পড়া বুঝিয়ে দিতে হয়। ফলে স্কুলের পড়া অনেকটা স্কুলেই হয়ে যায় এবং বাড়িতে গিয়ে তাকে আর বেশি পড়তে হয় না। কোন বিষয়ে সে নিজে বা দলীয়ভাবে না বুঝতে পারলে শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে বুঝে নেন। ফলে তার আর প্রাইভেট পড়তে হয় না। আর যেহেতু বাড়িতে পড়ার চাপ কম থাকে তাই সে নিজে নিজে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর লিখে নোট তৈরি করে। এভাবে সে গাইড বই ও প্রাইভেট শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই স্কুলে বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে থাকে এবং তার মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। এতক্ষণ যার কথা বলছি সে হলো শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের মোঃ নূর ইসলামের মেয়ে শিমু আক্তার। ৪ বোনের মধ্যে শিমু তৃতীয়। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ( গোল্ডেন এ প্লাস)। উল্লেখ্য শিমু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫ এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিমু একজন ভালো বিতার্কিক এবং সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারে। শিমুর এই ফলাফলের পিছনে শিক্ষকদের পাশাপাশি তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভাব-বাংলাদেশের কথা অকপটে স্বীকার করে। ভাব বাংলাদেশ থেকে সে বিতর্ক ও ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে। আর ভাব বাংলাদেশের দলীয় পদ্ধতিতে পাঠদান তার লেখা পড়ার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। শিমু ভাব বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। শিমু ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। তবে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা দিনমজুর বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা। উপকূলের মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে। এভাবে সংগ্রাম করে লেখা পড়া করে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পাওয়া একেবারে সহজ কথা নয়। আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই উপকূলের অদম্য মেধাবী শিমু আক্তারকে। তার লেখা পড়ার পথ হোক মসৃণ এ দোয়া করি।

লেখকঃ উন্নয়নকর্মী