ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




ময়মনসিংহে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকে এলাকা ছাড়া করতে এলাকাবাসীর চাপ! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ এপ্রিল ২০২০ ৯৩ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি; 

ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাজানি হলে তাঁর ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘এলাকার মানুষের কাছে যে ব্যবহার পেয়েছি, আমি ও আমার স্বামী কোনো দিন ভুলব না।’

ওই চিকিৎসক গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি জাতির দুর্দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পাশে ছিলেন, তাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি চিকিৎসক হিসেবে গর্ববােধ করেন। তিনি তাঁর আত্মীয়–স্বজনের কথা চিন্তা করে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলেন।

গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের নয়াপাড়া এলাকায় ওই চিকিৎসকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে এলাকাটি লকডাউন করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এর ঘণ্টাখানিক পর পুরো ময়মনসিংহ জেলা লকডাউন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই চিকিৎসক ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। সেখানে তিনি সন্দেহভাজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেন। পরে ওই ব্যক্তির করোনা পজেটিভ আসে। এর পর তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য ময়মনসিংহে তাঁর স্বামীর বাসায় চলে আসেন। এখানে তিনি আলাদা একটি কক্ষে থেকে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছিলেন। ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ এক চিকিৎসক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে তাঁর শ্বশুর শ্বাসকষ্টের রোগী এবং শ্বাশুড়ির ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে তিনি সেখানে না থেকে ময়মনসিংহে চলে আসেন। চিকিৎসা কার্যক্রমে একজন চিকিৎসক নানা কারণেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এটি নিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকার কাউন্সিলর এবং কয়েক জন অতি উৎসাহী যুবক ওই চিকিৎসককে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

এই চিকিৎসক বন্ধুসহ অন্তত তিনজন চিকিৎসক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো ধরনের উপসর্গ না থাকলে যে কেউ বাসায় আইসোলেশনে থাকতে পারবেন। ওই চিকিৎসকও তাই করেছিলেন। তাঁর জ্বর, সর্দি, কাশির মতো কোনো উপসর্গ ছিল না। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে, এটা মানহানিকর।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মতিউর রহমান ভূইয়া বলেন, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে এ ধরনের বাজে আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই ঘটনার পর অন্তত ১০ জন চিকিৎসক তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, তাদের বাড়িওয়ালারা বাড়িতে না এসে অন্যত্র থাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলুল হক বলেন, ওই নারীকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ও তাঁর দুজন সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই নারীর সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তাঁর স্বামীকে বলেছেন—’আপনারা শিক্ষিত লোক। আপনাদের কোনো ভুলের জন্য যেন পুরো এলাকা ধ্বংস না হয়ে যায়। আপনারা দ্রুত আইসোলেশন ইউনিটে চলে যান।’ এলকাবাসীর নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ময়মনসিংহে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকে এলাকা ছাড়া করতে এলাকাবাসীর চাপ! 

আপডেট সময় : ০৬:০০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ এপ্রিল ২০২০

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি; 

ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাজানি হলে তাঁর ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘এলাকার মানুষের কাছে যে ব্যবহার পেয়েছি, আমি ও আমার স্বামী কোনো দিন ভুলব না।’

ওই চিকিৎসক গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি জাতির দুর্দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পাশে ছিলেন, তাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি চিকিৎসক হিসেবে গর্ববােধ করেন। তিনি তাঁর আত্মীয়–স্বজনের কথা চিন্তা করে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলেন।

গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের নয়াপাড়া এলাকায় ওই চিকিৎসকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে এলাকাটি লকডাউন করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এর ঘণ্টাখানিক পর পুরো ময়মনসিংহ জেলা লকডাউন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই চিকিৎসক ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। সেখানে তিনি সন্দেহভাজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেন। পরে ওই ব্যক্তির করোনা পজেটিভ আসে। এর পর তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য ময়মনসিংহে তাঁর স্বামীর বাসায় চলে আসেন। এখানে তিনি আলাদা একটি কক্ষে থেকে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছিলেন। ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ এক চিকিৎসক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে তাঁর শ্বশুর শ্বাসকষ্টের রোগী এবং শ্বাশুড়ির ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে তিনি সেখানে না থেকে ময়মনসিংহে চলে আসেন। চিকিৎসা কার্যক্রমে একজন চিকিৎসক নানা কারণেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এটি নিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকার কাউন্সিলর এবং কয়েক জন অতি উৎসাহী যুবক ওই চিকিৎসককে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

এই চিকিৎসক বন্ধুসহ অন্তত তিনজন চিকিৎসক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো ধরনের উপসর্গ না থাকলে যে কেউ বাসায় আইসোলেশনে থাকতে পারবেন। ওই চিকিৎসকও তাই করেছিলেন। তাঁর জ্বর, সর্দি, কাশির মতো কোনো উপসর্গ ছিল না। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে, এটা মানহানিকর।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মতিউর রহমান ভূইয়া বলেন, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে এ ধরনের বাজে আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই ঘটনার পর অন্তত ১০ জন চিকিৎসক তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, তাদের বাড়িওয়ালারা বাড়িতে না এসে অন্যত্র থাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলুল হক বলেন, ওই নারীকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ও তাঁর দুজন সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই নারীর সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তাঁর স্বামীকে বলেছেন—’আপনারা শিক্ষিত লোক। আপনাদের কোনো ভুলের জন্য যেন পুরো এলাকা ধ্বংস না হয়ে যায়। আপনারা দ্রুত আইসোলেশন ইউনিটে চলে যান।’ এলকাবাসীর নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।