ঢাকা ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক আবজাল কোথায়?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১২:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০১৯ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ ডেস্ক? দেশে-বিদেশে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানম লাপাত্তা। উত্তরার দুই বাড়ি কিংবা জন্মস্থান ফরিদপুরেও নেই তারা। অভিযোগ উঠেছে, তারা দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তারা দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল দম্পতির দেশত্যাগের সত্যতা যাচাইয়ে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তারা দেশ ছেড়েছেন কিনা তা জানতে চেয়ে ইমিগ্রেশনের বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মতো জায়গায় বাড়ি করেছেন আবজাল। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সে কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার সম্পদের পাহাড়। কোথাও নিজ নামে, আবার

কোথাও স্ত্রীর নামে রয়েছে এসব সম্পদ। এরই মধ্যে দুদক যেসব সম্পদের তথ্য পেয়েছে সেগুলোতে আদালতের নির্দেশে ক্রোকের নোটিস টাঙিয়েছে। সম্পদ ক্রোকের কাজ শুরু করলেও আবজাল দম্পতিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সংস্থাটি।
আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্যই স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন তিনি।
উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ভবনটি স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেছিলেন আবজাল। এ ভবনের ছয়তলায় থাকতেন এ দম্পতি। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে পরিবার নিয়ে বাসা ছেড়েছেন তিনি। উত্তরায় একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কেও আরেকটি ভবন রয়েছে তাদের। সেখানেও নেই তারা। গত দেড় মাস ধরে দেশের কোথাও আবজালের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি দুদক।
আবজাল দম্পতির উত্তরার ১১ নম্বর রোডের বাড়ির কেয়ারটেকার মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় তারা ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তবে কোথায় গেছেন, তা তার জানা নেই। মামুন দাবি করেন, উত্তরার দুই বাড়ি থেকে মাসে আড়াই লাখ টাকার মতো ভাড়া আদায় হয়। এসব টাকা বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করার পাশাপাশি আবজাল দম্পতির ঠিক করা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করা হয়।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আবজাল দম্পতির বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি দেয় দুদক। এরপর ১০ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। তারপর থেকে আবজাল দম্পতির আর হদিস নেই। দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিল করার পর থেকেই তারা পলাতক। আমরা তাদের অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এ দম্পতির দেশ ছাড়ার তথ্য আছে উল্লেখ করে সম্প্রতি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে এ দম্পতির বিদেশ গমনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে, এ ব্যাপারে স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে এখনো কোনো তথ্য পায়নি দুদক।

দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, এই দম্পতির যে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে, তার উৎসের খোঁজ আমরা করছি। সে এখন পালিয়ে আছে, কিন্তু একসময় ঠিকই ধরা পড়বে। আর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা এই দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক আবজাল কোথায়?

আপডেট সময় : ১০:১২:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০১৯

সকালের সংবাদ ডেস্ক? দেশে-বিদেশে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানম লাপাত্তা। উত্তরার দুই বাড়ি কিংবা জন্মস্থান ফরিদপুরেও নেই তারা। অভিযোগ উঠেছে, তারা দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তারা দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল দম্পতির দেশত্যাগের সত্যতা যাচাইয়ে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তারা দেশ ছেড়েছেন কিনা তা জানতে চেয়ে ইমিগ্রেশনের বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মতো জায়গায় বাড়ি করেছেন আবজাল। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সে কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার সম্পদের পাহাড়। কোথাও নিজ নামে, আবার

কোথাও স্ত্রীর নামে রয়েছে এসব সম্পদ। এরই মধ্যে দুদক যেসব সম্পদের তথ্য পেয়েছে সেগুলোতে আদালতের নির্দেশে ক্রোকের নোটিস টাঙিয়েছে। সম্পদ ক্রোকের কাজ শুরু করলেও আবজাল দম্পতিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সংস্থাটি।
আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্যই স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন তিনি।
উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ভবনটি স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেছিলেন আবজাল। এ ভবনের ছয়তলায় থাকতেন এ দম্পতি। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে পরিবার নিয়ে বাসা ছেড়েছেন তিনি। উত্তরায় একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কেও আরেকটি ভবন রয়েছে তাদের। সেখানেও নেই তারা। গত দেড় মাস ধরে দেশের কোথাও আবজালের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি দুদক।
আবজাল দম্পতির উত্তরার ১১ নম্বর রোডের বাড়ির কেয়ারটেকার মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় তারা ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তবে কোথায় গেছেন, তা তার জানা নেই। মামুন দাবি করেন, উত্তরার দুই বাড়ি থেকে মাসে আড়াই লাখ টাকার মতো ভাড়া আদায় হয়। এসব টাকা বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করার পাশাপাশি আবজাল দম্পতির ঠিক করা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করা হয়।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আবজাল দম্পতির বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি দেয় দুদক। এরপর ১০ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। তারপর থেকে আবজাল দম্পতির আর হদিস নেই। দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিল করার পর থেকেই তারা পলাতক। আমরা তাদের অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এ দম্পতির দেশ ছাড়ার তথ্য আছে উল্লেখ করে সম্প্রতি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে এ দম্পতির বিদেশ গমনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে, এ ব্যাপারে স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে এখনো কোনো তথ্য পায়নি দুদক।

দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, এই দম্পতির যে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে, তার উৎসের খোঁজ আমরা করছি। সে এখন পালিয়ে আছে, কিন্তু একসময় ঠিকই ধরা পড়বে। আর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা এই দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।