ঈদ আনন্দ নেই, আছে শুধু উদ্বেগ
- আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধি;
কুড়িগ্রামে এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি মাংস কিনতে পারছেন না কৃষক। পরিবার পরিজনদের ঈদ কেনাকাটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় চাষিরা। ধানের দাম না থাকায় অনেকেই ঋণ করে ধান চাষ করলেও ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন। ফলে ঈদ আনন্দ নয় বরং উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন চাষিরা।
জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের বাজারে নজিরবিহীন ধস নামার কারণে নেই কৃষকের মুখে হাসি। বর্তমানে ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হলেও বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০ টাকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের কেজি ৪০০ টাকার ঊর্ধ্বে। আবার ঈদ উপলক্ষে পোশাকও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ফলে দরিদ্র চাষিরা কয়েক মণ ধান বিক্রি করেও কিনতে পারছে না এসব সামগ্রী। এতে করে অনেক চাষি ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি।
এবার চাষিরা বিঘা প্রতি ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করে ফলন পেয়েছেন ২০/২৩ মণ ধান। বাজারে ধানের দাম না থাকায় কৃষকদের বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে দু’আড়াই হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে সার, তেল, কীটনাশকসহ শ্রমিক মজুরির দাম ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতি বছরের মতো এবারো অনেকেই ধারদেনা করে চাষ করলেও সেই ঋণ পরিশোধ করতে বিপাকে পড়ছেন। এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে বিমুখ হবেন সাধারণ কৃষকরা।
চিলমারী উপজেলার মাচাবান্দা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামার কি কেউ খবর নিবে হামার ক্ষতি হইলেই কি আর লাভ হইলেই বা কি?
রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাটের কৃষক নজির মিয়া বলেন, এক বিঘা জমির বোরো ধান চাষ করতে এবার খরচ গেছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ফলন পেয়েছেন প্রায় ২১ মণ। বর্তমান ধানের দাম হিসেবে ২১ মণ ধান বিক্রি করলে হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা।
ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় পুরুষ শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক আর নারী শ্রমিকরা ৩০০ টাকায় দিনমজুর হিসেবে ধান কাটছেন। শ্রমিক ইয়াকুব, মজিবর জানান, আমরা ১২ জনের একটি দল আছি। চুক্তিভিত্তিক বিঘায় ধানকাটা-মাড়াইসহ ২ হাজার ৮০০ টাকা নিচ্ছি। এতে করে সংসারে মোটামুটি স্বচ্ছলতা এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। তবে ধানের মূল্য না থাকায় কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।