ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




বেনাপোলে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

 

বেনাপোল প্রতিনিধিঃ গত তিন দিন ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে দিয়েছে বন্দরের ইকুইপমেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরে ভারী মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছে।

পণ্য লোড আনলোড না হওয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বিষয়টি বার বার জানানোর পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে লোড আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বেনাপোলকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে এখানে কাজ চালিয়ে আসছে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে কয়েকটি নামমাত্র ফর্কলিফট ও ক্রেন দিয়ে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু করে।

কয়েকদিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন অকেজো হয়ে পড়ে। কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার কর্তৃকর্পক্ষকে জানানোর পরও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারি পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

২০১৬ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হলে আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম উচ্চ আদালতে রিট করে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দরপত্র প্রক্রিয়া। বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নতুন কোম্পানি নিয়োগ তো হয়নি, বরং আদালতের নির্দেশে পুরনো কোম্পানিকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। ক্ষুব্ধ বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো বিল পরিশোধ করা হবে না।

আর ঠিকাদারও কৌশলগত কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পাঁচ মাসে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এই অবস্থায় আটকে গেছে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক।

পাঁচ মাস পারিশ্রমিক পাননি তারা। উপায়ন্তর না দেখে বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেন শ্রমিকরা। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম বকেয়া টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম লিমিটেডের বেনাপোল প্রতিনিধি সুলতান আহম্মেদ বাবু বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো বিল পরিশোধ করছে না। বারবার বিল পরিশোধের কথা বলা হলেও আমাদের কোনো কথা তারা শুনছে না। এদিকে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, শত শত কনসাইনমেন্টের সরকারি শুল্ক পরিশোধ করেও আমরা পণ্য খালাস নিতে পারছি না। এর সম্পূর্ণ দায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দরে গত দুই দিন ধরে ইকুইপমেন্ট সাইটের সমস্ত ধরণের পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অনেক আগেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হয়েছে। তাদের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি নবায়ন করেনি। সেই কারণে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের নামে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় উচ্চ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বন্দরের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে রায় দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বেনাপোলে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ

আপডেট সময় : ১১:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

 

বেনাপোল প্রতিনিধিঃ গত তিন দিন ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে দিয়েছে বন্দরের ইকুইপমেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরে ভারী মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছে।

পণ্য লোড আনলোড না হওয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বিষয়টি বার বার জানানোর পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে লোড আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বেনাপোলকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে এখানে কাজ চালিয়ে আসছে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে কয়েকটি নামমাত্র ফর্কলিফট ও ক্রেন দিয়ে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু করে।

কয়েকদিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন অকেজো হয়ে পড়ে। কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার কর্তৃকর্পক্ষকে জানানোর পরও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারি পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

২০১৬ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হলে আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম উচ্চ আদালতে রিট করে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দরপত্র প্রক্রিয়া। বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নতুন কোম্পানি নিয়োগ তো হয়নি, বরং আদালতের নির্দেশে পুরনো কোম্পানিকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। ক্ষুব্ধ বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো বিল পরিশোধ করা হবে না।

আর ঠিকাদারও কৌশলগত কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পাঁচ মাসে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এই অবস্থায় আটকে গেছে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক।

পাঁচ মাস পারিশ্রমিক পাননি তারা। উপায়ন্তর না দেখে বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেন শ্রমিকরা। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম বকেয়া টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম লিমিটেডের বেনাপোল প্রতিনিধি সুলতান আহম্মেদ বাবু বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো বিল পরিশোধ করছে না। বারবার বিল পরিশোধের কথা বলা হলেও আমাদের কোনো কথা তারা শুনছে না। এদিকে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, শত শত কনসাইনমেন্টের সরকারি শুল্ক পরিশোধ করেও আমরা পণ্য খালাস নিতে পারছি না। এর সম্পূর্ণ দায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দরে গত দুই দিন ধরে ইকুইপমেন্ট সাইটের সমস্ত ধরণের পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অনেক আগেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হয়েছে। তাদের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি নবায়ন করেনি। সেই কারণে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের নামে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় উচ্চ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বন্দরের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে রায় দেন।