ফণী টেনে নিচ্ছে মেঘ, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই

- আপডেট সময় : ১১:১৬:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ৩৮ বার পড়া হয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শক্তি সঞ্চয় করে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে টেনে নিচ্ছে মেঘ, ফলে এখনই তাপদাহের অবসানের কোনো সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মাঝবৈশাখে টানা ছয় দিন ধরে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। রোববার রাজশাহীতে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; সারা দেশে এটাই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত দুই দিনে কিছু এলাকায় তাপ প্রশমিত হয়েছে। তবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখনই পরিস্থিতির উন্নতির আশা কম।
“প্রথমত বৃষ্টি নেই; সেই সঙ্গে স্থলভাগের মেঘ সরে যাচ্ছে সাগরে ঘূর্ণিঝড় এলাকার দিকে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের দিকে মেঘ ছুটে চলায় আমাদের এখানে বৃষ্টি নেই। সেজন্য তাপপ্রবাহও অব্যাহত রয়েছে।”
রাজধানীতে রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৪, ঈশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ৫, যশোরে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল থার্মোমিটারের পারদ।
দেশের একটি বড় এলাকা বৃষ্টিহীন থাকায় অন্তত আরও দুদিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।
সোমবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় দমকাসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সংকেতও বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে এর নাম দেওয়া হয় ‘ফণী’। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলে এ নামটি প্রস্তাব করে বাংলাদেশ, যার অর্থ সাপ।
রোববার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল উত্তর-পশ্চিমে, ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে।
ভারতের আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে সোমবার ফণী পরিণত হবে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম)। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার।
আর মঙ্গলবার বিকালে ফণী পেতে পারে হারিকেনের তীব্রতা। তখন একে বলা হবে ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা হারিকেনের গতি সম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ তখন হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার।
বুধবার, অর্থাৎ ১ মে ফণী আরও শক্তিশালী হয়ে পরিণত হতে পারে, তখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটারে উঠতে পারে।
ফণীর মতিগতি বিশ্লেষণ করে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে সম্ভাব্য গতিপথ বের করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বুধবার পর্যন্ত এ ঝড় অন্ধ্র উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হয়ে তারপর উত্তর দিকে বাঁক নেবে।
উত্তাপ আর জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে এরপর এগোতে শুরু করবে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে। ৩ মে ভারতের বিশাখাপত্তম উপকূলে পৌঁছে কমে আসতে পারে ঝড়ের শক্তি।
সর্বশেষ ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ফেথাই’, অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ ও নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ‘গজ’ সৃষ্টি হয়েছিল।