ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতার লাশ মিললো বুড়িগঙ্গায়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৪:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ১৮৭ বার পড়া হয়েছে

যশোর প্রতিনিধি,

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য ঢাকায় এসে চার দিন আগে পল্টন থেকে নিখোঁজ যশোরের বিএনপি নেতা আবু বকর আবুর লাশ মিলেছে বুড়িগঙ্গায়।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে বুড়িগঙ্গা নদীর ফরিদাবাদ ডকইয়ার্ড বরাবর নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার রাতে তার স্বজনরা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন বলে জানান তিনি।

ওসি শাহ জামান বলেন, “লাশ অনেকটাই পচে গেছে। পরনে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা। তার ভাগ্নে আর ভাতিজা তাকে আবু বকর আবু হিসেবে শনাক্ত করেছেন।”

আবু বকর আবু যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

তার ভাগ্নে খুলনার একটি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক জাহিদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত রোববার রাতে পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেল থেকে মামা নিখোঁজ হন। আজ তার লাশ পাওয়া গেল।”

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আবুকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাও আদায় করা হয়েছে। কিন্তু তাকে আর মুক্তি দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে বুধবার দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও আবুর নাম ছিল।

তবে কারা কেন কীভাবে আবুকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পুলিশ দিতে পারেনি।

চিরকুমার আবু বকর (৫৮) টানা চারবার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবারই প্রথম।

তার ভাগ্নে জাহিদ হাসান জানান, যশোর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার জন্য গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় এসে পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলে ওঠেন আবু। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলে ও জমা দেওয়ার পর সোমবার সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ওই হোটেলেই ছিলেন। সেখান থেকে রোববার রাত ৮টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি অপহৃত হন বলে স্বজনদের ধারণা।

জাহিদ জানান, সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মামার ফোন থেকে কয়েকটি মিসড কল যায় কেশবপুরে তার ফুপাতো ভাই (আবুর ভাতিজা) হুমায়ূন কবিরের ফোনে। পরে অন্য একটি নম্বর থেকে হুমায়ূন কবিরকে ফোন দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার জন্য একটি বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়।

“কিন্তু সেদিন রাত হয়ে যাওয়ায় বিকাশে আর টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সোমবার অপহরণকারীরা অন্য একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করে। পরে তাদের দেওয়া কয়েকটি নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়।”

জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার অপহরণকারীরা যোগাযোগ করে দেড়লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রফা হয়। দুটি নম্বরে সেই টাকা পাঠানো হয়।

“অপহরণকারীরা টাকা পাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে পল্টন এলাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও মামাকে আর ছাড়েনি। পরে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।”

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবু বকর আবুর ভাতিজা হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার থানায় এসে তার চাচার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান। এরপর আমি অনুসন্ধান শুরু করি। পল্টনের ওই হোটেলে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করি। সেখানে রোববার রাতে একটি ব্যাগ হাতে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আবুর মোবাইল ফোনের সিগনাল পাওয়া যায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি টাওয়ারে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জানতে পারেন, কেরানীগঞ্জে একটি লাশ পাওয়া গেছে, যেটি আবুল লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছেন তার ভাতিজা ভাগ্নেরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতার লাশ মিললো বুড়িগঙ্গায়

আপডেট সময় : ১২:১৪:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

যশোর প্রতিনিধি,

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য ঢাকায় এসে চার দিন আগে পল্টন থেকে নিখোঁজ যশোরের বিএনপি নেতা আবু বকর আবুর লাশ মিলেছে বুড়িগঙ্গায়।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে বুড়িগঙ্গা নদীর ফরিদাবাদ ডকইয়ার্ড বরাবর নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার রাতে তার স্বজনরা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন বলে জানান তিনি।

ওসি শাহ জামান বলেন, “লাশ অনেকটাই পচে গেছে। পরনে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা। তার ভাগ্নে আর ভাতিজা তাকে আবু বকর আবু হিসেবে শনাক্ত করেছেন।”

আবু বকর আবু যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

তার ভাগ্নে খুলনার একটি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক জাহিদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত রোববার রাতে পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেল থেকে মামা নিখোঁজ হন। আজ তার লাশ পাওয়া গেল।”

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আবুকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাও আদায় করা হয়েছে। কিন্তু তাকে আর মুক্তি দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে বুধবার দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও আবুর নাম ছিল।

তবে কারা কেন কীভাবে আবুকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পুলিশ দিতে পারেনি।

চিরকুমার আবু বকর (৫৮) টানা চারবার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবারই প্রথম।

তার ভাগ্নে জাহিদ হাসান জানান, যশোর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার জন্য গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় এসে পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলে ওঠেন আবু। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলে ও জমা দেওয়ার পর সোমবার সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ওই হোটেলেই ছিলেন। সেখান থেকে রোববার রাত ৮টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি অপহৃত হন বলে স্বজনদের ধারণা।

জাহিদ জানান, সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মামার ফোন থেকে কয়েকটি মিসড কল যায় কেশবপুরে তার ফুপাতো ভাই (আবুর ভাতিজা) হুমায়ূন কবিরের ফোনে। পরে অন্য একটি নম্বর থেকে হুমায়ূন কবিরকে ফোন দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার জন্য একটি বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়।

“কিন্তু সেদিন রাত হয়ে যাওয়ায় বিকাশে আর টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সোমবার অপহরণকারীরা অন্য একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করে। পরে তাদের দেওয়া কয়েকটি নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়।”

জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার অপহরণকারীরা যোগাযোগ করে দেড়লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রফা হয়। দুটি নম্বরে সেই টাকা পাঠানো হয়।

“অপহরণকারীরা টাকা পাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে পল্টন এলাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও মামাকে আর ছাড়েনি। পরে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।”

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবু বকর আবুর ভাতিজা হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার থানায় এসে তার চাচার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান। এরপর আমি অনুসন্ধান শুরু করি। পল্টনের ওই হোটেলে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করি। সেখানে রোববার রাতে একটি ব্যাগ হাতে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আবুর মোবাইল ফোনের সিগনাল পাওয়া যায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি টাওয়ারে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জানতে পারেন, কেরানীগঞ্জে একটি লাশ পাওয়া গেছে, যেটি আবুল লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছেন তার ভাতিজা ভাগ্নেরা।