ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




‘মেজর’ পরিচয়ে ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক দম্পতি!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৯:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৯ ১২৪ বার পড়া হয়েছে

চাকরি করেছেন সৈনিক হিসেবে, তাও ৪৭ বছর আগে। কিন্তু চলনে-বলনে পুরোপুরি কর্মকর্তা। নিজেকে পরিচয় দেন ‘মেজর’ বলে। এ পরিচয়ের বিস্তারও ঘটান। শুরু করেন ভয়ঙ্কর প্রতারণা। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা। এ ব্যক্তির নাম সৈয়দ আবু জাফর। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। একই কাজে জড়িয়ে পড়ায় জাফরের স্ত্রী শিল্পী আক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব-২-এর মোহাম্মদপুর ক্যাম্প ১৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। পাবনা ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত এক গাড়িচালক ও তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ৭৯ লাখ এবং আরও ছয় চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অন্তত ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে এ দম্পতির বিরুদ্ধে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, সৈয়দ আবু জাফরের নেতৃত্বে এ প্রতারক চক্রে তার স্ত্রী বাদে আরও ছয়জন আছেন। আতাউর রহমান খান নামের আরেক ব্যক্তি আবু জাফরের ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। চাকরিপ্রত্যাশীদের ফাঁদে ফেলাই তাদের কাজ। প্রাথমিকভাবে আবু জাফরের দেড় কোটি টাকা প্রতারণার তথ্য পেলেও এ সংখ্যাটি আরও বড় বলে তারা মনে করছেন। মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় তার সাড়ে ৪ কাঠা, দারুসসালামে ৬ কাঠা জমি আছে। সৈয়দ আবু জাফরের প্রতারণার শিকার পাবনা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্বজন। তিনি বলেন, আবু জাফরের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইউনুস ছিলেন তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। নিজের ছোট ভাইয়ের জন্য চাকরি খুঁজতে গিয়ে আবু জাফরের সঙ্গে ইউনুসই তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রথম দিন ঢাকায় আসার পর তিনি তাদের ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ঘুরিয়ে দেখান। চাকরির বিষয়ে এক বড় কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তাদের গাড়িতে রেখে একটি বাসায় গিয়ে ঘণ্টা দু-এক কথা বলে আসার নাটকও করেন। এসব দেখে তারা বিশ্বাস করেন। কয়েক দিন পর তিনি নৌবাহিনীতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেন। বিনিময়ে ছয়জনের কাছ থেকে ৭৯ লাখ টাকা নেন। কিন্তু এরপর আর নিয়োগের বিষয়ে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তারা ২০১৬ সালে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। আবু জাফর তখন তাদের ৭৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তারা দেখেন ওই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আবারও প্রতারিত হয়ে তারা পাবনা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। কিন্তু গত দেড় বছরেও কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় তারা র‌্যাবের কাছে যান। আবু জাফর ও তার স্ত্রীর একটি কৌশলী প্রতারণার বর্ণনা মেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক আল আমিনের কাছে। চাকরির জন্য তিনি ও তার এলাকার আরও ছয় যুবক সাইদুর রহমান নামের এক কৃষকের মাধ্যমে আবু জাফরের সহযোগী আতাউর রহমান খানকে ৭২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগের জন্য যশোর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জাফর দম্পতি কৌশলে তাদের শিক্ষাজীবনের সব সনদ ছিনিয়ে নেন। আল আমিন বলেন, বাবার ১ বিঘা কৃষিজমি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে এবং বোনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ধার করে তিনি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি যশোর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আবু জাফর ও আতাউর রহমান তাদের একটি মাইক্রোবাসে করে সাভারের দিকে রওনা হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পার হওয়ার পর নাশতা খাওয়ার কথা বলে পর্যটন হোটেলে তাদের নিয়ে ঢোকেন। ২০-২৫ মিনিট পর ফিরে এসে দেখেন তাদের ব্যাগ ব্যাগেজ কিছুই নেই। আবু জাফর জানান, কেউ দরজার তালা ভেঙে সব নিয়ে গেছে। আবু জাফর ওই মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এর চালক ছিলেন আজহার মুনশি। তিনি বলেন, আবু জাফরের স্ত্রী শিল্পী বেগম আরেকটি মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের মাইক্রোবাসের পিছু পিছু গিয়েছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের নিয়ে আবু জাফর হোটেলে ঢোকার পরপরই তার স্ত্রী মালামাল সব নিজের মাইক্রোবাসে সরিয়ে নিয়ে সটকে পড়েন। র‌্যাব জানায়, সৈয়দ আবু জাফর মেজর পরিচয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। স্ত্রী বাদেও তার চক্রে আরও কয়েকজন রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘মেজর’ পরিচয়ে ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক দম্পতি!

আপডেট সময় : ০৭:০৯:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৯

চাকরি করেছেন সৈনিক হিসেবে, তাও ৪৭ বছর আগে। কিন্তু চলনে-বলনে পুরোপুরি কর্মকর্তা। নিজেকে পরিচয় দেন ‘মেজর’ বলে। এ পরিচয়ের বিস্তারও ঘটান। শুরু করেন ভয়ঙ্কর প্রতারণা। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা। এ ব্যক্তির নাম সৈয়দ আবু জাফর। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। একই কাজে জড়িয়ে পড়ায় জাফরের স্ত্রী শিল্পী আক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব-২-এর মোহাম্মদপুর ক্যাম্প ১৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। পাবনা ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত এক গাড়িচালক ও তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ৭৯ লাখ এবং আরও ছয় চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অন্তত ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে এ দম্পতির বিরুদ্ধে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, সৈয়দ আবু জাফরের নেতৃত্বে এ প্রতারক চক্রে তার স্ত্রী বাদে আরও ছয়জন আছেন। আতাউর রহমান খান নামের আরেক ব্যক্তি আবু জাফরের ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। চাকরিপ্রত্যাশীদের ফাঁদে ফেলাই তাদের কাজ। প্রাথমিকভাবে আবু জাফরের দেড় কোটি টাকা প্রতারণার তথ্য পেলেও এ সংখ্যাটি আরও বড় বলে তারা মনে করছেন। মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় তার সাড়ে ৪ কাঠা, দারুসসালামে ৬ কাঠা জমি আছে। সৈয়দ আবু জাফরের প্রতারণার শিকার পাবনা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্বজন। তিনি বলেন, আবু জাফরের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইউনুস ছিলেন তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। নিজের ছোট ভাইয়ের জন্য চাকরি খুঁজতে গিয়ে আবু জাফরের সঙ্গে ইউনুসই তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রথম দিন ঢাকায় আসার পর তিনি তাদের ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ঘুরিয়ে দেখান। চাকরির বিষয়ে এক বড় কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তাদের গাড়িতে রেখে একটি বাসায় গিয়ে ঘণ্টা দু-এক কথা বলে আসার নাটকও করেন। এসব দেখে তারা বিশ্বাস করেন। কয়েক দিন পর তিনি নৌবাহিনীতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেন। বিনিময়ে ছয়জনের কাছ থেকে ৭৯ লাখ টাকা নেন। কিন্তু এরপর আর নিয়োগের বিষয়ে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তারা ২০১৬ সালে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। আবু জাফর তখন তাদের ৭৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তারা দেখেন ওই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আবারও প্রতারিত হয়ে তারা পাবনা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। কিন্তু গত দেড় বছরেও কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় তারা র‌্যাবের কাছে যান। আবু জাফর ও তার স্ত্রীর একটি কৌশলী প্রতারণার বর্ণনা মেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক আল আমিনের কাছে। চাকরির জন্য তিনি ও তার এলাকার আরও ছয় যুবক সাইদুর রহমান নামের এক কৃষকের মাধ্যমে আবু জাফরের সহযোগী আতাউর রহমান খানকে ৭২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগের জন্য যশোর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জাফর দম্পতি কৌশলে তাদের শিক্ষাজীবনের সব সনদ ছিনিয়ে নেন। আল আমিন বলেন, বাবার ১ বিঘা কৃষিজমি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে এবং বোনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ধার করে তিনি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি যশোর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আবু জাফর ও আতাউর রহমান তাদের একটি মাইক্রোবাসে করে সাভারের দিকে রওনা হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পার হওয়ার পর নাশতা খাওয়ার কথা বলে পর্যটন হোটেলে তাদের নিয়ে ঢোকেন। ২০-২৫ মিনিট পর ফিরে এসে দেখেন তাদের ব্যাগ ব্যাগেজ কিছুই নেই। আবু জাফর জানান, কেউ দরজার তালা ভেঙে সব নিয়ে গেছে। আবু জাফর ওই মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এর চালক ছিলেন আজহার মুনশি। তিনি বলেন, আবু জাফরের স্ত্রী শিল্পী বেগম আরেকটি মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের মাইক্রোবাসের পিছু পিছু গিয়েছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের নিয়ে আবু জাফর হোটেলে ঢোকার পরপরই তার স্ত্রী মালামাল সব নিজের মাইক্রোবাসে সরিয়ে নিয়ে সটকে পড়েন। র‌্যাব জানায়, সৈয়দ আবু জাফর মেজর পরিচয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। স্ত্রী বাদেও তার চক্রে আরও কয়েকজন রয়েছেন।