ফায়ার সার্ভিস কর্তাদের আশীর্বাদ: ডিএডি শামস আরমানের ১৭ বছরের স্বৈরাচারী প্রভাব!
- আপডেট সময় : ১২:৪২:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫ ৭৪৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | সকালের সংবাদ| বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স—সরকারের একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, যা জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার অন্যতম প্রতীক। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ চিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ কৌশলে নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করে রেখেছেন ডিএডি (ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) শামস আরমান, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
২০০৮ সাল থেকে টানা ১৭ বছর ধরে শামস আরমান ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সরকারি চাকরিতে নিয়মিত রদবদল থাকা সত্ত্বেও তার এমন দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান নিয়ে অবাক অনেকেই। জানা যায়, প্রশাসনিক কৌশল, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সিনিয়র অফিসারদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতার কারণেই তিনি প্রতিনিয়ত পদে পদে উন্নীত হয়ে গেছেন।
প্রথমে তিনি কৌশলে তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাইন উদ্দিনকে ম্যানেজ করে এডি (অ্যাডমিন) হেলাল উদ্দিনকে বদলি করান। এরপর নিজেই, একজন জুনিয়র ডিএডি হয়েও, ভারপ্রাপ্ত এডি (অ্যাডমিন) পদে অধিষ্ঠিত হন—যেখানে তার সামনে ছিলেন অন্তত ৩০ জন সিনিয়র কর্মকর্তা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ না করলে হয়তো তিনি সেখানেই স্থায়ী হয়ে যেতেন।
সেই রদবদলের রেশ কাটতে না কাটতেই, আবারও কৌশলে তিনি তৎকালীন এডি (উন্নয়ন) নিয়াজ সাহেবকে সরিয়ে নিজেই ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রাক্তন ডিজি মাইন উদ্দিনের অবসরের পর সবাই ভেবেছিলেন, শামস আরমানের প্রভাব কমবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে ঠিক উল্টো। নতুন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল দায়িত্ব নেওয়ার পর শামস আরমান আবারও চমক দেখান—নিজেকে ডিজি মহোদয়ের স্টাফ অফিসার (পিএস) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন।
ফায়ার সার্ভিসের ভেতরে ও বাইরে এই ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একাধিক কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, একজন জুনিয়র ডিএডি কীভাবে ডিজি মহোদয়ের ব্যক্তিগত সহকারী হন? তবে এই ‘অসম্ভব’ কাজটিও সম্ভব করেছেন শামস আরমান, যা তার কৌশলের প্রমাণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অভিযোগ উঠেছে, শামস আরমান গত ১৭ বছরে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার কৌশল—ভিতরের অফিসারদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করা, বিভেদ সৃষ্টি করা এবং উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা আদায় করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “শামস আরমানের বাবা ফায়ার সার্ভিসেই চাকরি করতেন, তিনি একজন সম্মানিত ও ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু ছেলে বাবার বিপরীত চরিত্রের। তিনি এখন ফায়ার সার্ভিসের অভ্যন্তরীণ সংকটের মূল হোতা।”
জানা যায়, ডিডি, এডি, ডিএডি, ইন্সপেক্টর ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে অহেতুক দ্বন্দ্ব তৈরি করা এবং ডিজি মহোদয়কে বিভ্রান্ত করে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করাও শামস আরমানের পরিকল্পনার অংশ। এভাবেই তিনি নিজে প্রভাবশালী থেকে যান এবং নিজের অবস্থানকে নিরঙ্কুশ করেন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে যারা তার এই ‘পরামর্শের’ বাস্তবতা জানেন, তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এসব পরামর্শের আড়ালেই চলেছে দলাদলি, প্রভাব বিস্তার, এবং প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অবনতি।
বিশ্লেষকদের মতে, একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান যখন একজন কর্মকর্তার হাতে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি হয়ে পড়ে, তখন সেখানে জবাবদিহিতা ও সুশাসন ভেঙে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অভ্যন্তরীণ সংকট শুধু কর্মপরিবেশের ক্ষতি করে না, বরং জনগণের আস্থা ও সরকারের ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত হানে।
তাই এখনই সময়, শামস আরমানসহ যেকোনো কৌশলী ও বিতর্কিত আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার পথে ফিরিয়ে আনার। নইলে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ভেতরের আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।
চলবে…..
![]()














