জেলা বিএনপি নেতার পূত্র হয়েও মন্ত্রীর ডান হাত
গণপূর্ত লুটেপুটে খাচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নু! পর্ব- ১

- আপডেট সময় : ০৫:৩২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩ ৫১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর পদধারী বিএনপি নেতার ছেলে হয়েও আওয়ামী লীগের লেবাস লাগিয়ে হয়েছেন মন্ত্রীর ডান হাত। বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, পুরো অধিদপ্তরের বদলি ও তদবির বাণিজ্য সহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের পুরো নিয়ন্ত্রণ যেন মিরপুর বিভাগের প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর হাতে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের বদলি বাণিজ্য, বরাদ্দের অতিরিক্ত টেন্ডার, কোন কাজ না করেই বিল পাস সহ মন্ত্রণালয় সহ অধিদপ্তরের সমস্ত অনিয়মের অন্যতম গডফাদার হিসেবে পরিচিতি মিরপুর বিভাগের প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। গণপূর্ত অধিদপ্তরে একটি কথা প্রচলিত আছে, তার কথাই যেন মন্ত্রীর কথা।
পটুয়াখালী বিএনপির সদর উপজেলার পদধারী একজন নেতার সন্তান হয়েও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রভাবশালী ও মন্ত্রীর ডান হাত হিসেবে নিজের অবস্থান কিভাবে পাকাপোক্ত করেছেন তিনি সেটা অনেকের কাছেই আশ্চর্যের।
বিগত কিছুদিন আগে দুর্নীতির সন্দেহভাজন হিসেবে ১০১ জন ঠিকাদারের যে তালিকা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল তার মধ্যে সাইফুজ্জামান চুন্নু অন্যতম। মিরপুর বিভাগের এই নির্বাহী প্রকৌশলী ১৭৬টি কাজের চাহিদার বিপরীতে তিনি পেয়েছিলেন ১২ কোটি টাকা। মিরপুরে প্রায় বেশির ভাগ আবাসিক এলাকার ভবন নতুন সেখানে তেমন কোন কাজ নেই বললেই চলে। বাস্তবিক অর্থে ১২ কোটি টাকা খরচের মতো সুযোগ খুব একটা নেই। অধিদপ্তরের বিশ্বস্ত সূত্র জানায় বরাদ্দকৃত অর্থের যার প্রায় পুরোটাই তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া এই প্রকৌশলী বিগত দিনে ঢাকার বাইরে থাকা অবস্থায় এমন বড় অংকের আত্মসাথের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ১০ কোটি বরাদ্দ নিয়ে ১৯ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বানের মতো অনিয়ম করেছেন তিনি। আর এভাবেই বরাদ্দকৃত ও অতিরিক্ত বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু’ এতটাই ক্ষমতার অধিকারী যে, ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বলে বেড়ান গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারকেও তিনি কেয়ার করেন না। কারণ তার কর্মকাণ্ড যেন সকলের ধারা ছোঁয়ার বাইরে। নিজ দপ্তরের থাকার চেয়ে তার নিজস্ব সিন্ডিকেট, সচিবালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন গোপন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়।
উল্লেখ্য, সাইফুজ্জামান চুন্নুর বাবা আব্দুস সালাম মৃধা পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য। সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। সাইফুজ্জামান চুন্নুর বাবা আব্দুস সালাম মৃধা ৫ নং কমলাপুর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবার নির্বাচনে ছেলে সাইফুজ্জামান চুন্নু তার অবৈধ আয়ের কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে এলাকা সূত্রে জানা যায়। এলাকার বিএনপির রাজনীতির অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী ও ডোনার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ঢাকাতে চুন্নু বড় আওয়ামী লীগার। খোঁজ গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর ডান হাত বলে পরিচিত।
অথচ ৫ নং কমলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে চুন্নু তার বাবাকে জেতাতে লোকজন দিয়ে নৌকার প্রার্থীর ক্যাম্প ভাঙচুর এবং ভোট কেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেয়৷
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন উপ সহকারী প্রকৌশলী জানান, শুধু আমরা কেন, প্রকৌশলীরাও বর্তমানে চুন্নু আতঙ্কে রয়েছেন৷ বদলি আতঙ্কের অপর নাম চুন্নু। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুন্নু এই বদলি বাণিজ্যে করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। চুন্নুর সাথে কোন প্রকৌশলীর মতের অমিল হলেই তার বদলি নিশ্চিত। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না৷
শুধু বদলি বাণিজ্য নয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করা ঠিকাদারদের অধিকাংশই তার সিন্ডিকেটের। নির্ধারিত কমিশনের বিনিময়ে চুন্নু নিদিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন। এভাবেই তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নামে বেনামে কিনেছেন একাধিক ফ্লাট ও প্লট। বনানীর ২৫ নম্বর রোডস্থ ৩১/এ বাড়ির ৫-বি ফ্লাট, গুলশানে ২ টি ও ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্লাটের মালিক তিনি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রভাবশালী এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য শক্তির বলেই তিনি অধরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রকৌশলী চুন্নুর ক্ষমতার দাপট নিয়ে বিস্তারিত থাকবে আগামী পর্বে….