ঢাকা ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




‘আলোড়ন’ প্রতারক সিরাজুল মনিরের কান্ড কারখানা  (১)

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১ ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

সাঈদুর রহমান রিমন:

শুধু ফেসবুকে ‘দৈনিক আলোড়ন’ পত্রিকার গ্রাফিক্স ডিজাইনকে পুঁজি করে স্ত্রীকে বগলদাবা করে সারাদেশ ঘুরে বেড়ানো কথিত এক প্রকাশকের প্রতারণাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাংবাদিকতায় যোগ্যতা, দক্ষতাবিহীন এই প্রকাশকের ঘোষিত পত্রিকাটিও অনুমোদনবিহীন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ তথ্যসচিব তার দপ্তরের ফাইলপত্র ঘেঁটেও আলোড়ন নামে কোনো পত্রিকার অনুমোদন থাকার বিষয়টি দেখতে পাননি, খুঁজে পাননি সিরাজুল মনির নামের কোনো প্রকাশকের নামও। অথচ বিগত তিনটি মাস ধরে অলিক সব গল্প আর প্রচার প্রচারণা ছড়িয়ে দেশজুড়ে ধামাকা অফার স্টাইলের যদি লাইগ্যা যায় পরিস্থিতি ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরই প্রতারণার মোক্ষম ফাঁদ পাতেন তিনি। ঘোষণা দেন সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক সাংবাদিক নিয়োগের সবচেয়ে লোভনীয় বিজ্ঞাপনটির প্রচারণা চালান তিনি। সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন ভাতা আধুনিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তা আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার যুক্ত করে আবেদন পাঠানোর নির্দেশনায়। শত শত আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করেন, ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নতুন মুখও। তাদের বাছাই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আজব এক পদ্ধতির ঘোষণা দিয়ে কিিথত প্রকাশক সিরাজুল মনির তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লোকাল বাসে বাসেই ঘুরে বেড়াতে থাকেন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। সেখানে প্রতিনিধিদের হাতে হাতে নিয়োগপত্র পৌছে দেয়ার মিশনে নেমে শুরু করেন টাকা হাতানো।

বউকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ফিরে সর্বত্র প্রতিনিধি সভা করে বেড়ানোর ব্যাপারে আলোড়ন পত্রিকারই নিয়োগ পাওয়া এক কর্মি জানান, “তার বউকে নিয়ে ঘোরার কারণ আমি উদঘাটন করেছি। প্রথম কথা হচ্ছে তার ২৩৫ কোটি টাকা বাজেটের পত্রিকা কিন্তু সে ছাড়া আর অন্য কোন স্টাফ এখানে নেই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে সে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন মানুষের কাছে আগেও বিভিন্নভাবে বাটপারি করেছে। সে একা গেলে তাদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে পারে এজন্য তার বউকে সাথে রাখে।”

 

ভুক্তভোগী আরেকজন স্টাফ রিপোর্টার পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে। সেখানে আমার নিজের পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে তাদের আপ্যায়ন করেছি। পরে আবার বিভাগীয় সকল উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে ৫০/৬০ জন মানুষের আয়োজন করতে মিনিমাম ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এই টাকা তার কাছে চাইতে গেলে সে বিনা নোটিশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদের বহিষ্কার করে দেয়।

 

শত শত সংবাদকর্মি হতে চেয়ে আলোড়ন পত্রিকা ও তার প্রকাশক কর্তৃক প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিবর্গ জানান, সিরাজুল মনির আমাদের কে বলেছেন তার কিছু বিদেশি ইনভেস্টর আছে। যারা দৈনিক আলোড়ন এর জন্য ২৩৫ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন দেয়া হবে। এজন্য প্রথম সারির অনেক মিডিয়ার লোকজন এখানে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে তার বউকে নিয়ে সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন প্রতিনিধির টাকায়। থাকা-খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক সকল খরচ প্রতিনিধিরা বহন করেছে, তার চাহিদা পূরণের ব্যাপারে যথাসাধ্য করেছে।

সংবাদকর্মিরা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে সকলেই সাংবাদিক এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবার শঙ্কায় অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছা দিয়েও তা লজ্জায় প্রকাশ করছেন না। তবে এই প্রতিবেদককে অন্তত এক ডজন প্রতারিত ব্যক্তি ফোন করে, ম্যাসেজ পাঠিয়ে তাদের প্রতারিত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।

এ প্রতিবেদক সিরাজুল মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পত্রিকাটির প্রকাশনা ডিক্লিয়ারেশন কপি অথবা ডিএ নাম্বারটি জানতে চাইলে তিনি দুই ঘন্টা চেষ্টা করেও ডিএ নাম্বারটি জানাতে পারেননি।

 

আসছে বিস্তারিত…

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘আলোড়ন’ প্রতারক সিরাজুল মনিরের কান্ড কারখানা  (১)

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১

সাঈদুর রহমান রিমন:

শুধু ফেসবুকে ‘দৈনিক আলোড়ন’ পত্রিকার গ্রাফিক্স ডিজাইনকে পুঁজি করে স্ত্রীকে বগলদাবা করে সারাদেশ ঘুরে বেড়ানো কথিত এক প্রকাশকের প্রতারণাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাংবাদিকতায় যোগ্যতা, দক্ষতাবিহীন এই প্রকাশকের ঘোষিত পত্রিকাটিও অনুমোদনবিহীন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ তথ্যসচিব তার দপ্তরের ফাইলপত্র ঘেঁটেও আলোড়ন নামে কোনো পত্রিকার অনুমোদন থাকার বিষয়টি দেখতে পাননি, খুঁজে পাননি সিরাজুল মনির নামের কোনো প্রকাশকের নামও। অথচ বিগত তিনটি মাস ধরে অলিক সব গল্প আর প্রচার প্রচারণা ছড়িয়ে দেশজুড়ে ধামাকা অফার স্টাইলের যদি লাইগ্যা যায় পরিস্থিতি ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরই প্রতারণার মোক্ষম ফাঁদ পাতেন তিনি। ঘোষণা দেন সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক সাংবাদিক নিয়োগের সবচেয়ে লোভনীয় বিজ্ঞাপনটির প্রচারণা চালান তিনি। সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন ভাতা আধুনিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তা আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার যুক্ত করে আবেদন পাঠানোর নির্দেশনায়। শত শত আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করেন, ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নতুন মুখও। তাদের বাছাই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আজব এক পদ্ধতির ঘোষণা দিয়ে কিিথত প্রকাশক সিরাজুল মনির তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লোকাল বাসে বাসেই ঘুরে বেড়াতে থাকেন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। সেখানে প্রতিনিধিদের হাতে হাতে নিয়োগপত্র পৌছে দেয়ার মিশনে নেমে শুরু করেন টাকা হাতানো।

বউকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ফিরে সর্বত্র প্রতিনিধি সভা করে বেড়ানোর ব্যাপারে আলোড়ন পত্রিকারই নিয়োগ পাওয়া এক কর্মি জানান, “তার বউকে নিয়ে ঘোরার কারণ আমি উদঘাটন করেছি। প্রথম কথা হচ্ছে তার ২৩৫ কোটি টাকা বাজেটের পত্রিকা কিন্তু সে ছাড়া আর অন্য কোন স্টাফ এখানে নেই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে সে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন মানুষের কাছে আগেও বিভিন্নভাবে বাটপারি করেছে। সে একা গেলে তাদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে পারে এজন্য তার বউকে সাথে রাখে।”

 

ভুক্তভোগী আরেকজন স্টাফ রিপোর্টার পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে। সেখানে আমার নিজের পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে তাদের আপ্যায়ন করেছি। পরে আবার বিভাগীয় সকল উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে ৫০/৬০ জন মানুষের আয়োজন করতে মিনিমাম ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এই টাকা তার কাছে চাইতে গেলে সে বিনা নোটিশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদের বহিষ্কার করে দেয়।

 

শত শত সংবাদকর্মি হতে চেয়ে আলোড়ন পত্রিকা ও তার প্রকাশক কর্তৃক প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিবর্গ জানান, সিরাজুল মনির আমাদের কে বলেছেন তার কিছু বিদেশি ইনভেস্টর আছে। যারা দৈনিক আলোড়ন এর জন্য ২৩৫ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন দেয়া হবে। এজন্য প্রথম সারির অনেক মিডিয়ার লোকজন এখানে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে তার বউকে নিয়ে সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন প্রতিনিধির টাকায়। থাকা-খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক সকল খরচ প্রতিনিধিরা বহন করেছে, তার চাহিদা পূরণের ব্যাপারে যথাসাধ্য করেছে।

সংবাদকর্মিরা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে সকলেই সাংবাদিক এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবার শঙ্কায় অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছা দিয়েও তা লজ্জায় প্রকাশ করছেন না। তবে এই প্রতিবেদককে অন্তত এক ডজন প্রতারিত ব্যক্তি ফোন করে, ম্যাসেজ পাঠিয়ে তাদের প্রতারিত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।

এ প্রতিবেদক সিরাজুল মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পত্রিকাটির প্রকাশনা ডিক্লিয়ারেশন কপি অথবা ডিএ নাম্বারটি জানতে চাইলে তিনি দুই ঘন্টা চেষ্টা করেও ডিএ নাম্বারটি জানাতে পারেননি।

 

আসছে বিস্তারিত…