ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




রাজধানীর পল্লবীতে অপ্রতিরোধ্য ‘গ্যাং লিডার’ কিলার বিপ্লব!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ ১১১ বার পড়া হয়েছে

সাঈদুর রহমান রিমন: রাজধানীর পল্লবীতে অপ্রতিরোধ্য এক সন্ত্রাসীর সন্ধান মিলেছে। আন্ত:জেলা গ্যাং লিডার হিসেবে চিহ্নিত পেশাদার এ অপরাধীর নাম মিজানুর রহমান বিপ্লব ওরফে কিলার বিপ্লব। পল্লবী এলাকায় গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক অপরাধের সাম্রাজ্য।

খুন খারাবিসহ বহু মামলার আসামি বিপ্লবের অবস্থান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ছয় নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তিনি চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তবে রাজধানী জুড়ে তার পরিচিতি রয়েছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডার হিসেবে। দখল, অপহরণ, হামলা, মারধোর থেকে হত্যাকান্ডের ঘটনাতেও তার হাত নাকি বেজায় পাকা। কথায় কথায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দেন যে কাউকে। এতদিন চলতেন জাতীয় শ্রমিকলীগের সাইনবোর্ড ভাঙ্গিয়ে। কিন্তু বেশুমার অপরাধ অপকর্মের কারণে এমপি ইলিয়াস মোল্লা ঝেটিয়ে বিদায় করেন তাকে। এরপরই রাতারাতি তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ের কৃষকলীগের নেতা বনে যান।
স্থানীয় আরেক প্রভাবশালীর আশীর্বাদে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠা বিপ্লব দিন দিনই অপ্রতিরোধ্য সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়েছেন। বিএনপির অস্ত্রবাজ দুর্বত্ত খ্যাত মোশাররফকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপ্লব বাহিনী। প্রায় অর্ধশত চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ছিচকে মাস্তান নিয়ে চারটি পৃথক  গ্রুপ রয়েছে। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড যেন তাদের ওপেন সিক্রেট। ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে সব ধরনের অপরাধ অপকর্মের ইজারাও নেন তিনি।
মিরপুরে ফুটপাতেে চাঁদাবাজিকালে ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী ইয়ামিন হোসেন রোমান হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত হন এই মিজানুর রহমান বিপ্লব ওরফে কিলার বিপ্লব। পল্লবী থানা পুলিশ ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাকে গ্রেফতারও করে।
সম্প্রতি সাভার থানায় দুর্ধর্ষ এক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় আট মাস হাজতবন্দী থাকেন তিনি। জামিনে বেরিয়েই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ স্কুল সংলগ্ন গলিতে রীতিমত অফিস সাজিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন কিলার বিপ্লব। তার সঙ্গে মোশাররফের অস্ত্রবাজ বাহিনী ছাড়াও শেওড়াপাড়ার দুর্ধর্ষ আজাদ গ্রæপ যুক্ত হওয়ায় দিন দিনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিলার বিপ্লবের বাহিনী। তারা মিরপুর মডেল থানা, রুপনগর ও পল্লবী থানা এলাকার অবৈধ ফুটপাত বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মাসে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত বিপ্লবের সন্ত্রাসী আখড়ায় এক-দেড়শ’ দুর্বৃত্তের আনাগোনা ও আড্ডাবাজি চলে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সর্বদাই সেখানে চলে অস্ত্রের ঝনঝনানি। মনিরুল হক ওরফে কাইয়ুম, ফয়েজ আহমেদ, আজহারুল ইসলাম সবুজ, মোহাম্মদ আলী, আনছার আলী, লিমন ওরফে বড় লিমন, আনছার সুমন, ফয়ছাল হোসেন রুমান, পিচ্চি সুমন, ড্রাইভার আরিফ, সুজন, সুমন ওরফে চুটকি সুমন, লিমন ওরফে ছোট লিমন, মাসুম, বর্তমানে সাভার থানা এলাকায় আত্মগোপরে থাকা শেওড়াপাড়ার দুর্ধর্ষ কিলার আজাদ ও তার সহযোগী স্বাধীন, কাইল্যা জিতু, রুবেল, জিতু, ভাসানটেকের হাতকাটা সুমনসহ মোস্ট ওয়ান্টেড অনেকেরই ভিড় জমে উঠে কিলার বিপ্লবের অপরাধ আখড়ায়। অতিসম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান বিপ্লবকে ‘কিলার বিপ্লব’ ও পেশাদার অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর পল্লবী, মিরপুর মডেল, কাফরুল ও সাভার থানায় কিলার বিপ্লবের নামে হত্যা, কিডন্যাপ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণপূর্বক আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় সংক্রান্ত আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, আন্ত:জেলা অপরাধী গ্যাং পরিচালনাকারী বিপ্লব ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও শক্তিশালী বোমার মজুদ রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রাজধানীর পল্লবীতে অপ্রতিরোধ্য ‘গ্যাং লিডার’ কিলার বিপ্লব!

আপডেট সময় : ১১:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

সাঈদুর রহমান রিমন: রাজধানীর পল্লবীতে অপ্রতিরোধ্য এক সন্ত্রাসীর সন্ধান মিলেছে। আন্ত:জেলা গ্যাং লিডার হিসেবে চিহ্নিত পেশাদার এ অপরাধীর নাম মিজানুর রহমান বিপ্লব ওরফে কিলার বিপ্লব। পল্লবী এলাকায় গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক অপরাধের সাম্রাজ্য।

খুন খারাবিসহ বহু মামলার আসামি বিপ্লবের অবস্থান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ছয় নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তিনি চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তবে রাজধানী জুড়ে তার পরিচিতি রয়েছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডার হিসেবে। দখল, অপহরণ, হামলা, মারধোর থেকে হত্যাকান্ডের ঘটনাতেও তার হাত নাকি বেজায় পাকা। কথায় কথায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দেন যে কাউকে। এতদিন চলতেন জাতীয় শ্রমিকলীগের সাইনবোর্ড ভাঙ্গিয়ে। কিন্তু বেশুমার অপরাধ অপকর্মের কারণে এমপি ইলিয়াস মোল্লা ঝেটিয়ে বিদায় করেন তাকে। এরপরই রাতারাতি তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ের কৃষকলীগের নেতা বনে যান।
স্থানীয় আরেক প্রভাবশালীর আশীর্বাদে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠা বিপ্লব দিন দিনই অপ্রতিরোধ্য সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়েছেন। বিএনপির অস্ত্রবাজ দুর্বত্ত খ্যাত মোশাররফকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপ্লব বাহিনী। প্রায় অর্ধশত চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ছিচকে মাস্তান নিয়ে চারটি পৃথক  গ্রুপ রয়েছে। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড যেন তাদের ওপেন সিক্রেট। ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে সব ধরনের অপরাধ অপকর্মের ইজারাও নেন তিনি।
মিরপুরে ফুটপাতেে চাঁদাবাজিকালে ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী ইয়ামিন হোসেন রোমান হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত হন এই মিজানুর রহমান বিপ্লব ওরফে কিলার বিপ্লব। পল্লবী থানা পুলিশ ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাকে গ্রেফতারও করে।
সম্প্রতি সাভার থানায় দুর্ধর্ষ এক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় আট মাস হাজতবন্দী থাকেন তিনি। জামিনে বেরিয়েই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ স্কুল সংলগ্ন গলিতে রীতিমত অফিস সাজিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন কিলার বিপ্লব। তার সঙ্গে মোশাররফের অস্ত্রবাজ বাহিনী ছাড়াও শেওড়াপাড়ার দুর্ধর্ষ আজাদ গ্রæপ যুক্ত হওয়ায় দিন দিনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিলার বিপ্লবের বাহিনী। তারা মিরপুর মডেল থানা, রুপনগর ও পল্লবী থানা এলাকার অবৈধ ফুটপাত বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মাসে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত বিপ্লবের সন্ত্রাসী আখড়ায় এক-দেড়শ’ দুর্বৃত্তের আনাগোনা ও আড্ডাবাজি চলে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সর্বদাই সেখানে চলে অস্ত্রের ঝনঝনানি। মনিরুল হক ওরফে কাইয়ুম, ফয়েজ আহমেদ, আজহারুল ইসলাম সবুজ, মোহাম্মদ আলী, আনছার আলী, লিমন ওরফে বড় লিমন, আনছার সুমন, ফয়ছাল হোসেন রুমান, পিচ্চি সুমন, ড্রাইভার আরিফ, সুজন, সুমন ওরফে চুটকি সুমন, লিমন ওরফে ছোট লিমন, মাসুম, বর্তমানে সাভার থানা এলাকায় আত্মগোপরে থাকা শেওড়াপাড়ার দুর্ধর্ষ কিলার আজাদ ও তার সহযোগী স্বাধীন, কাইল্যা জিতু, রুবেল, জিতু, ভাসানটেকের হাতকাটা সুমনসহ মোস্ট ওয়ান্টেড অনেকেরই ভিড় জমে উঠে কিলার বিপ্লবের অপরাধ আখড়ায়। অতিসম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান বিপ্লবকে ‘কিলার বিপ্লব’ ও পেশাদার অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর পল্লবী, মিরপুর মডেল, কাফরুল ও সাভার থানায় কিলার বিপ্লবের নামে হত্যা, কিডন্যাপ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণপূর্বক আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় সংক্রান্ত আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, আন্ত:জেলা অপরাধী গ্যাং পরিচালনাকারী বিপ্লব ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও শক্তিশালী বোমার মজুদ রয়েছে।