চট্রগ্রামের ইয়াবা সম্রাট নুরুল আবছার এখন কাউন্সিলর প্রার্থী!
- আপডেট সময় : ১০:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : আলোচিত করোনা ভাইরাসের টেস্ট রিপোর্ট জালিয়াতির মহা নায়ক রিজেন্ট সাহেদকে তো সবাই চেনেন কিন্তু এবার পরিচয় করিয়ে দিবো চট্রগ্রামের পতেঙ্গা থানার আরেক সাহেদের সাথে। নাম নুরুল আবছার, ছিলেন নৌকার মাঝি অতঃপর তার ভাগ্য খুলে যায় ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে পরিচত হওয়ার পর। তার কোনো বৈধ ব্যবসা না থাকলেও রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। মূলত ইয়াবার টাকায় রাতারাতি সম্পদশালী হয়ে ওঠেন তিনি।
স্থানীয় মাদক গডফাদার জাফরের ইয়াবা পরিবহন করতেন নুরুল আবছার। এক সময় জাহাজ থেকে বিদেশি মদ সংগ্রহ করে বিক্রিও শুরু করেন । আনোয়ারা, কর্ণফুলী এলাকা দিয়ে আবছার তার মাদক বেচাকেনা করতেন। ২০১৫ সালে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর ইয়াবা ব্যবসায়ী জাফরের ইয়াবা সাম্রাজ্য ধরে রেখেছিলেন নুরুল আবছার। তখন থেকেই ফুলে ফেঁপে ওঠেন তিনি।
ইয়াবা ও চোরাচালান এর টাকায় হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের পদও। হয়ে যান আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য।
এরপর একে একে রিজেন্ট সাহেদের মতো আওয়ামী লীগের বাগা বাগা নেতাদের সাথে ছবি তুলে করেছেন স্বার্থ উদ্ধার। কার সাথে নেই তার ছবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, স্পিকার শিরিন শারমিন সহ ছবি আছে আরও অনেকের সাথে।মুলত বড়ো বড় এসব রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে ছবি তুলেই আড়াল করছেন ইয়াবার ব্যাবসা।
মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি নুরুল আবছারকে ওই পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
পতেঙ্গা এলাকায় মাদকের গডফাদার হলেও তিনি বরাবরই ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৮ সালে পতেঙ্গা থানা পুলিশ ৪০ বোতল বিদেশি মদসহ নুরুল আবছারকে হাতেনাতে ধরলেও পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুলিশ সদস্যদের হয়রানি করতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদকের তদন্তে নুরুল আবছারের মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। দুদকের প্রতিবেদনে নুরুল আবছারের মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে মিথ্যা অভিযোগ করায় নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে দুদক বাদি হয়ে মামলা দায়ের করে।
২০১৮ সালের ৩ জুন পতেঙ্গা নেভাল রোডের চাইনিজ ঘাটের সামনে থেকে একটি বস্তাসহ নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। বস্তায় ৪০ বোতল বিদেশি মদ পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় পুলিশ নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলাটি বর্তমানে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পুলিশ ৬০০ পিস ইয়াবাসহ আদিল খান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। সেই মামলার এজাহারে নাম রয়েছে নুরুল আবছারের। আদিল খান নুরুল আবছারের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে রাজু নামে আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছিল বলে তখন পুলিশকে জানায়।
পুলিশের তালিকায় থাকা মাদক ব্যবসায়ী নুরুল আবছার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কৃত নুরুল আবছারকে দলীয় সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলীয় সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নুরুল আবছার।
অলিতে গলিতে চায়ের দোকানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ি নূরুল আবছার ৪১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকার ৪১নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নুরুল আবছার (প্রকাশ-ইয়াবা আবছার) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের খবরে বিষয়টি এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পতেঙ্গা কেন্দ্রিক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নুরুল আবছার প্রথম সারির একজন ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইয়াবার গডফাদারদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে তার নাম।
তারা বলছেন, আবছার কে যদি না দমানো যায়। ইয়াবা ব্যবসা নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। কেননা এই অঞ্চলের অধিকাংশ ইয়াবা চালান তার হাত ধরে আসে। তার নিয়ন্ত্রণেই পতেঙ্গা থেকে ইয়াবা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।পতেঙ্গা এলাকার মাদকের গডফাদার হলেও ধরা ছোয়ার বাইরে আবছার।
আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পতেঙ্গার ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়ছেন নুরুল আবছার।
তার প্রচারণার পোস্টারে তিনি লিখেছেন, আস্থা রাখুন পাশে থাকুন, দৃষ্টি নন্দন অসাম্প্রদায়িক মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ৪১ নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নুরুল আবছারের অঙ্গিকার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ যিনি এলাকায় মাদকের গডফাদার তিনি কিভাবে মাদক মুক্ত করবেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে নুরুল আবছারের ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচনের জনসংযোগে ব্যস্ততার দোহায় দিয়ে কল কেটে যান তিনি।