ঢাকা ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




‘ভাস্কর্য ইস্যু’ সরকারের সৃষ্ট ভাবছে বিএনপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৩৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ৮১ বার পড়া হয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:

দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন সরগরম ভাস্কর্য ইস্যুতে। কতিপয় ইসলামী বক্তা ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকির পর গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এরপর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই ইস্যুতে ভাস্কর্যবিরোধীদের ‘বাড়াবাড়ি’ না করার কথা বলছেন। যদিও নাগরিক সমাজ ভাস্কর্যের পক্ষাবলম্বন করায় বিরোধীদের কিছুটা নমনীয় মনে হচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছে।

তবে এ ইস্যুতে একেবারে ‘গা বাঁচিয়ে’ রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কারণ দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই মনে করেন, যে মুহূর্তে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে সামনে এনে যে ইস্যু তৈরি করা হয়েছে, তা অনেকটা সরকারের পক্ষেই চলে যাচ্ছে। সরকারের ইঙ্গিতে বহির্বিশ্বে দেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার জন্য এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। অনেকে বুঝে অথবা না বুঝে এই খেলায় মেতে উঠেছেন। মোদ্দাকথায়, ভাস্কর্য ইস্যুকে সরকারেরই সৃষ্ট ভাবছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভাস্কর্য নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করা খুবই কঠিন। কারণ তারা ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে চলে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে জোট করার কারণে বিএনপিকে মৌলবাদী শক্তির পৃষ্টপোষক হিসেবে পরিচিত করিয়েছে বিরোধীপক্ষ। সেজন্য এই বিষয়ে তারা কোনো পক্ষেই অবস্থান নিতে চায় না। তাছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বহু ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। সুতরাং এই বিষয়ে কথা বলা তাদের জন্যই বিপদের। কথা বলতে গেলে সরকার হয়তো প্রথমে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যগুলোকেই অপসারণ করে ফেলতে পারে।

যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।এ ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এমনকি ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যে সহযোগিতার অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেন ক্ষমতাসীন বলয়ের সংগঠন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

তবে কোনো অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, এই ইস্যু সরকারের সৃষ্টি।

চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে এই ভাস্কর্য ইস্যু সৃষ্টি করেছে।’

দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শেখ মুজিবের ভাস্কর্য তো অনেক আগে থেকেই আছে। এর আগে এমন বিরোধিতা আর কখনো হয়নি। তাই বলা যায়, সরকার উস্কে দিচ্ছে এসব।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ভার্স্কয, মূর্তি কিংবা ইসলামিক মূল্যবোধের চেয়েও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র কখনো একসঙ্গে যায় না। ভার্স্কয-মূর্তির চেয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব দেয়া উচিত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘মানুষের সমস্যাগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে সরকার এই ইস্যু তৈরি করেছে। আমরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেবো না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, সময় হলেই সব জানতে পারবেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে মৌলবাদকে সরকার উস্কে দিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মৌলবাদের সম্পর্ক নেই।’

অবশ্য বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিষয়ে এখনো বিএনপি কোনো কথা বলছে না। তাদের পরিষ্কার বলা উচিত—ভাস্কর্য আছে, থাকবে। যেসব ধর্মীয় দল এ বির্তকের সৃষ্টি করছে তাদের বলতে হবে—তোমরা ইসলামকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো। আলেমদেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে এ বিষয়ে শিক্ষা দেয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘ভাস্কর্য ইস্যু’ সরকারের সৃষ্ট ভাবছে বিএনপি

আপডেট সময় : ০১:৩৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:

দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন সরগরম ভাস্কর্য ইস্যুতে। কতিপয় ইসলামী বক্তা ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকির পর গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এরপর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই ইস্যুতে ভাস্কর্যবিরোধীদের ‘বাড়াবাড়ি’ না করার কথা বলছেন। যদিও নাগরিক সমাজ ভাস্কর্যের পক্ষাবলম্বন করায় বিরোধীদের কিছুটা নমনীয় মনে হচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছে।

তবে এ ইস্যুতে একেবারে ‘গা বাঁচিয়ে’ রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কারণ দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই মনে করেন, যে মুহূর্তে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে সামনে এনে যে ইস্যু তৈরি করা হয়েছে, তা অনেকটা সরকারের পক্ষেই চলে যাচ্ছে। সরকারের ইঙ্গিতে বহির্বিশ্বে দেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার জন্য এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। অনেকে বুঝে অথবা না বুঝে এই খেলায় মেতে উঠেছেন। মোদ্দাকথায়, ভাস্কর্য ইস্যুকে সরকারেরই সৃষ্ট ভাবছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভাস্কর্য নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করা খুবই কঠিন। কারণ তারা ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে চলে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে জোট করার কারণে বিএনপিকে মৌলবাদী শক্তির পৃষ্টপোষক হিসেবে পরিচিত করিয়েছে বিরোধীপক্ষ। সেজন্য এই বিষয়ে তারা কোনো পক্ষেই অবস্থান নিতে চায় না। তাছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বহু ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। সুতরাং এই বিষয়ে কথা বলা তাদের জন্যই বিপদের। কথা বলতে গেলে সরকার হয়তো প্রথমে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যগুলোকেই অপসারণ করে ফেলতে পারে।

যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।এ ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এমনকি ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যে সহযোগিতার অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেন ক্ষমতাসীন বলয়ের সংগঠন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

তবে কোনো অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, এই ইস্যু সরকারের সৃষ্টি।

চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে এই ভাস্কর্য ইস্যু সৃষ্টি করেছে।’

দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শেখ মুজিবের ভাস্কর্য তো অনেক আগে থেকেই আছে। এর আগে এমন বিরোধিতা আর কখনো হয়নি। তাই বলা যায়, সরকার উস্কে দিচ্ছে এসব।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ভার্স্কয, মূর্তি কিংবা ইসলামিক মূল্যবোধের চেয়েও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র কখনো একসঙ্গে যায় না। ভার্স্কয-মূর্তির চেয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব দেয়া উচিত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘মানুষের সমস্যাগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে সরকার এই ইস্যু তৈরি করেছে। আমরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেবো না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, সময় হলেই সব জানতে পারবেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে মৌলবাদকে সরকার উস্কে দিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মৌলবাদের সম্পর্ক নেই।’

অবশ্য বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিষয়ে এখনো বিএনপি কোনো কথা বলছে না। তাদের পরিষ্কার বলা উচিত—ভাস্কর্য আছে, থাকবে। যেসব ধর্মীয় দল এ বির্তকের সৃষ্টি করছে তাদের বলতে হবে—তোমরা ইসলামকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো। আলেমদেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে এ বিষয়ে শিক্ষা দেয়া।