ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় : ডিবির ৬ সদস্য সাসপেন্ড

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ ১৪২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছেন ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ছয় সদস্য। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছয়জনকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত ছয়জনের মধ্যে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), তিনজন কনস্টেবল এবং একজন ড্রাইভার (কনস্টেবল) রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ডিবি সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি এসপি।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম মো. সোহেল। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নাজিরাবাগ হাসেম মিয়ার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবারই ঢাকা জেলা পুলিশ পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগপত্রে সোহেল উল্লেখ করেন, গত ২৯ জানুয়ারি (বুধবার) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে ব্যবহারের জন্য দুটি লুঙ্গি কিনে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। সুত্রাপুর থানাধীন লালকুঠির নৌকাঘাটে পৌঁছানো মাত্র হঠাৎ করে পাঁচ-ছয়জন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। তারা কেরাণীগঞ্জের ডিবির পরিচয় দিয়ে সোহেলকে হাতকড়া পরিয়ে নৌকায় তুলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নিয়ে যায়।

এরপর কেরানীগঞ্জ আলম মার্কেটের সম্মুখে রাস্তার ওপরে নিয়ে নম্বরপ্লেটবিহীন সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলে সোহেলকে। একটি কালো রঙের কাপড় দিয়ে সোহেলের চোখ বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে কাটার-প্লাস দিয়ে চেপে সোহেলের হাতের আঙুল ও নখ জখম করা হয় এবং লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয় তাকে।

এক পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে সোহেলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে তারা। টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর, এমনকি ক্রসফায়ারে ফেলে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এরপর ভুক্তভোগী সোহেলের ব্যবহৃত সিম নং-০১৩০৯৯২১৫০৬ ও ০১৭৭০৫৪৬৫৩৩ থেকে তার পরিবারের দুটি মোবাইল নম্বরে কল করে তারা। কখনো তারা নিজেরা কথা বলে, কখনো সোহেলকে দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা চায়। টাকা দিলে সোহেলকে ছেড়ে দেবে, নইলে ক্রসফায়ারে দেবে বলে শাসানো হয় তার পরিবারের সদস্যদের।

এক পর্যায়ে সোহেলের স্ত্রী-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। অপহরণকারীদের কথামতো ওই রাতেই টাকা নিয়ে সোহেলের পরিবার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ মোড়ে যায়।

তবে সেখানে তারা দেখা না করে আবার বছিলা ব্রিজে যেতে বলে সোহেলের স্বজনদের। বছিলা ব্রিজে যাওয়ার পর সোহেলের পরিবারের তিন সদস্যকে সাড়ে চার লাখ টাকাসহ মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। টাকা নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিভিন্ন কাগজে সই নিয়ে সোহেলকে শিখিয়ে দেয়া কথাবার্তা মোবাইলফোনে ভিডিও আকারে ধারণ করে।

অভিযোগপত্রে সোহেল বলেন, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে তারা বলে- এসব বিষয় ভবিষ্যতে যদি কারও কাছে প্রকাশ হয়, তাহলে আমাকে ও পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে। নয়তো ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে।

অভিযোগপত্রে সোহেল আরও বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়দাতাদের আমি দেখলে চিনতে পারব, তাদের ভেতরে ডাকাডাকির কারণে আমি একজনের নাম রাজিব বলে জানতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশের সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, যার যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে সাসপেন্ড করেছি। অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় : ডিবির ৬ সদস্য সাসপেন্ড

আপডেট সময় : ০২:৩৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছেন ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ছয় সদস্য। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছয়জনকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত ছয়জনের মধ্যে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), তিনজন কনস্টেবল এবং একজন ড্রাইভার (কনস্টেবল) রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ডিবি সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি এসপি।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম মো. সোহেল। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নাজিরাবাগ হাসেম মিয়ার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবারই ঢাকা জেলা পুলিশ পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগপত্রে সোহেল উল্লেখ করেন, গত ২৯ জানুয়ারি (বুধবার) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে ব্যবহারের জন্য দুটি লুঙ্গি কিনে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। সুত্রাপুর থানাধীন লালকুঠির নৌকাঘাটে পৌঁছানো মাত্র হঠাৎ করে পাঁচ-ছয়জন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। তারা কেরাণীগঞ্জের ডিবির পরিচয় দিয়ে সোহেলকে হাতকড়া পরিয়ে নৌকায় তুলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নিয়ে যায়।

এরপর কেরানীগঞ্জ আলম মার্কেটের সম্মুখে রাস্তার ওপরে নিয়ে নম্বরপ্লেটবিহীন সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলে সোহেলকে। একটি কালো রঙের কাপড় দিয়ে সোহেলের চোখ বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে কাটার-প্লাস দিয়ে চেপে সোহেলের হাতের আঙুল ও নখ জখম করা হয় এবং লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয় তাকে।

এক পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে সোহেলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে তারা। টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর, এমনকি ক্রসফায়ারে ফেলে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এরপর ভুক্তভোগী সোহেলের ব্যবহৃত সিম নং-০১৩০৯৯২১৫০৬ ও ০১৭৭০৫৪৬৫৩৩ থেকে তার পরিবারের দুটি মোবাইল নম্বরে কল করে তারা। কখনো তারা নিজেরা কথা বলে, কখনো সোহেলকে দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা চায়। টাকা দিলে সোহেলকে ছেড়ে দেবে, নইলে ক্রসফায়ারে দেবে বলে শাসানো হয় তার পরিবারের সদস্যদের।

এক পর্যায়ে সোহেলের স্ত্রী-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। অপহরণকারীদের কথামতো ওই রাতেই টাকা নিয়ে সোহেলের পরিবার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ মোড়ে যায়।

তবে সেখানে তারা দেখা না করে আবার বছিলা ব্রিজে যেতে বলে সোহেলের স্বজনদের। বছিলা ব্রিজে যাওয়ার পর সোহেলের পরিবারের তিন সদস্যকে সাড়ে চার লাখ টাকাসহ মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। টাকা নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিভিন্ন কাগজে সই নিয়ে সোহেলকে শিখিয়ে দেয়া কথাবার্তা মোবাইলফোনে ভিডিও আকারে ধারণ করে।

অভিযোগপত্রে সোহেল বলেন, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে তারা বলে- এসব বিষয় ভবিষ্যতে যদি কারও কাছে প্রকাশ হয়, তাহলে আমাকে ও পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে। নয়তো ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে।

অভিযোগপত্রে সোহেল আরও বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়দাতাদের আমি দেখলে চিনতে পারব, তাদের ভেতরে ডাকাডাকির কারণে আমি একজনের নাম রাজিব বলে জানতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশের সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, যার যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে সাসপেন্ড করেছি। অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।