দুর্নীতির সম্রাট ড. কবিরের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ!
- আপডেট সময় : ০৯:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯ ১১২ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্নীতির সম্রাট তিনি। এনজিও নামক মওকার সাইনবোর্ডে তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সবই আছে তার। একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ির মালিকও তিনি। মাত্র দশ বছরে হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। শুদ্ধি অভিযানের ফাঁক গলে এখনও টিকে আছেন এই বরপুত্র । তিনি বহুল আলোচিত, সমালোচিত ড. আহমেদ আল কবির।
শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের অনেক রথি-মহারথি কপোকাত হলেও তিনি ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি অভ্যর্থনা উপ কমিটিতে । গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুবলীগের সভায়-যেখানে অনেকেই ঢোকার অনুমতি পাননি, সেখানেও ড. কবির বিনা বাধায় উপস্থিত ছিলেন। দুদকে আছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফাইল। অথচ অদৃশ্য কারনে সে ফাইলও এখন ধামাচাপা পড়ে আছে ।
জীবনে কোনদিন আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিও করেননি। ছিলেন ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীর প্রিয়ভাজন। নির্বাচনে হারিছ চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন এই ড. আহমেদ আল কবির, অদৃশ্য কোন যাদুর কাঠির বলে হুট করেই হয়ে গেলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার?
হারিস চৌধুরীর কল্যাণে সামাজিক সংস্থা হয়ে গেলো এনজিও । এনজিও ব্যুরোর রেজিষ্ট্রেশনও পেয়ে গেলেন । শুরু হলো সীমান্তিকের পথচলা । ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম দিয়ে চলছিলো সীমান্তিক । কথায় বলে মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নাই সেখানে । এ অবস্থায়ই মামা শশুরের (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত) আনুকুল্য পেয়ে গেলেন । তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি পেছনে । মাত্র দশ বছরে হয়ে গেলেন হাজার কোটি টাকার মালিক।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের তোফাজ্জল আলী মানিকের পুত্র ড. আহমদ আল কবির । কালিগঞ্জ বাজারে পিতার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় একসময় কোনরকমে দিন চলতো পরিবারটির। আহমদ আল কবির তখন সীমান্ত এলাকায় গ্রামবাসীকে নিয়ে গড়ে তুলেন ‘সীমান্তিক’ নামের সমাজ কল্যাণ সংস্থা। ৭৯ সালের দিকে যাত্রা শুরু করেন এই সংগঠনের ।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে তৎকালীন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হারিছ চৌধুরী’র প্রিয়ভাজন থাকায় সেই সময়ে ‘সীমান্তিক’কে এনজিওভুক্ত করে শুরু করেন ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি । সেই সীমান্তিক এখন কাজ করছে বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে। সীমান্তিক কলেজ, সীমান্তিক টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, সীমান্তিক হাসপাতালসহ রয়েছে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।
শাহ জালাল উপশহরে আছে বিলাসবহুল অট্টালিকা । রাজধানী ঢাকার শেওড়াপাড়ায় ভবন, সিলেটের খাদিমপাড়ায় ৬ নং সড়ক ও কল্ল গ্রামে বেশ জায়গাও আছে । ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, জকিগঞ্জের অঢেল সহায় সম্পত্তি ছাড়াও ইংল্যান্ড-আমেরিকায়ও আছে নিজস্ব বাড়ি ।
সরকারি জায়গার উপর ড. আহমদ আল কবির তার নিজ নামে গড়ে তুলেছেন কলেজ । সিলেটের শাহী ঈদগায় আরটিএম ভবন । ধোপা দিঘির পাড়ে সীমান্তিক বিনোদিনী নগর হাসপাতাল । সিলেট নগরের মেন্দিবাগস্থ শাহজালাল ব্রীজ সংলগ্ন সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে করেছেন ভবন । দুইটি এনজিওর মালিক তিনি । মাত্র দশ বছরে এসবই হয়েছে । যা আলাদীনের দৈত্যকেও হার মানায়।
এলাকাবাসী জানান, ড. আহমেদ আল কবির কোনদিনই সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না।
জনশ্রুতি রয়েছে, যুবলীগ এর বহিস্কৃত, বহুল বিতর্কিত যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ড. আহমেদ আল কবির রুপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ পেতে বহু অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে, বড় অংকের ঘুষ প্রদান এবং খুব সহজেই রুপালী ব্যাংকের মাধ্যমে লোন পাইয়ে দিয়েছেন।
ড. আহমেদ আল কবির ও বহিস্কৃত যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ধানমন্ডি এলাকার একই বিল্ডিংয়ে বসবাস করেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে, ড. আহমেদ আল কবির মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি, ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেননি।