বাংলাদেশ ব্যাংকের বহিষ্কৃত উপপরিচালক তাওফিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা, নারী নির্যাতনের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০২:০৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের বহিষ্কৃত উপপরিচালক তাওফিক উস সামাদ তন্ময়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ
খন্দকার আলমগীর হোসাইন : বাংলাদেশ ব্যাংকের বহিষ্কৃত উপ পরিচালক তাওফিক উস সামাদ তন্ময় একজন সিরিয়াল ধর্ষক, প্রতারক ও নারী নির্যাতনকারী। লিখিত বক্তব্যে গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনা হয়।
সাবেক এক স্ত্রীর খালা রকসি রহমান বলেন, গত ১/২/১৯ ইং তারিখে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাওফিক উস সমাদ তন্ময়ের সাথে আমার ভাগ্নির। বিয়ের ১৮ দিন পর ১৮/২/১৯ ইং সহকর্মীর ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হয় তন্ময়।
এর পর পরিবারের পরিকল্পিত আকুতি মিনতি দেখে আমরা প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে তন্ময়কে তিন মাস জেল খাটার পর জামিনে বের করি। জেলে থাকাবস্থায় তার স¤পর্কে আমরা বিভিন্ন মেয়ের সাথে শারীরিক স¤পর্কের বিষয়ে জানতে পারি। সেকারণে আমরা মেয়েকে দিবো না বলে সিদ্ধান্ত নেই। তারপরও একাধিকবার পারিবারিকভাবে বসে শর্ত মেনে, প্রতিজ্ঞা করে, ভবিষ্যতে সে এইরুপ জগন্য কাজে আর লিপ্ত হবে না বলে গত ২৩/৯/১৯ তার পরিবারের সবাই এসে ভাগ্নিকে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এরপর ভাগ্নি উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সাইফুর’স এর শেয়ার কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা যৌতক চায়। ভাগ্নি যখন অন্তত ৫০ জন নারীর সাথে শারিরীক স¤পর্কের কথা জেনে যায়, তখন তার উপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। বন্ধ করে দেয় আমাদের সাথে সব রকম যোগাযোগ।
আবেগতাড়িত কণ্ঠে রকসি রহমান বলেন, ২৯/৯/১৯ তারিখে দুপুর ১টায় কাজের বুয়ার ফোন থেকে ভাগ্নি আমাকে ফোন দেয় খালামনি আমাকে বাঁচাও। মেয়েকে বাঁচাতে আমরা তার বনানীর বাসায় যাই। বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি, নিরাপত্তা প্রহরীর সহযোগিতায় বাসায় ডুকে দেখি ভাগ্নি মৃতপ্রায় অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে। উদ্ধার করে বনানী নিয়ে জিডি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যাই।
এরপর ১/১০/১৯ ইং বনানী থানায় নারী ও যৌতুকের মামলা করি। যার নং-০১। এরপর গত ১৭/১০/১৯ তারিখে পূর্বের একাধিক বিবাহের কথা গোপন করার কারণে আরেকটি প্রতারণার মামলা করি কোর্টে, যার নং সিআর-১২১০/১৯। যা পিবিআইতে তদন্তাধীন।
তিনি তন্ময়ের অতীত সম্পর্কে বলেন, তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে আসছে শত শত মেয়ে ও তাদের পরিবারের সাথে। দাওয়াত গ্রহণ করে ও উপঢৌকন দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে এবং সেগুলোর ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
সেই কলেজ লাইফ থেকে করে আসছে বিভিন্ন মেয়ে ও মহিলার সাথে শারীরিক সম্পর্ক। আর তার এই অবৈধ যৌনাচার ও প্রতারণার দোসর তার পরিবার, বিশেষত তার বাবা। ছাত্রজীবনে টিউশনির নামে বাসায় ঢুকে ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বাদ যায়নি ছাত্রী/ছাত্রের মা, বড় বোন বা মামী। সেগুলো ভিডিও করে রেখে বিভিন্ন সময়ে টাকা ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছে তন্ময় ও তার পরিবার।
তিনি আরও বলেন, আর ঠিক এভাবেই প্রেমের ফাঁদে ফেলে যুগ্ম সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ ও ডা. হোসনে আরার একমাত্র নাবালিকা কন্যাকে। এক পর্যায়ে বিয়ে হয় ২০১২ সালে। যৌতুক ও উপঢৌকন দেয়ার পরও চলে অমানসিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে ডিভোর্স হয়, ইজ্জত রক্ষায় চুপ হয়ে যান সচিব পরিবার।
স্ত্রীর পাশাপাশি চলতে থাকে বিভিন্ন মহিলা, মেয়ে, সহকর্মী, প্রতিবেশী, স্ত্রীর আত্মীয় ও বান্ধবী, সহকর্মীর স্ত্রী, কাজের মেয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ে তার পরকীয়ার লীলাখেলা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে তার পরিবার মেয়ে দেখার নামে দাওয়াত খেয়ে বেড়ায়। তার প্রোফাইল, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ইম্প্রেসিভ কথোপকথন, সরল শিশুসুলভ আচরণের অভিনয় এবং পরিবার সংযুক্ত থাকায় মেয়ে ও মেয়ের পরিবারের আস্থা অর্জন করে ফেলে খুব সহজেই। যেমনটি আমাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
আশেপাশের সকল নারীই কোন না কোনভাবে তন্ময়ের যৌন লালসা ও অর্থলিপ্সার শিকার। তার এই অবাধ যৌনাচারের ফলে সে ‘ঠধৎরপড়পবষব’ নামক রোগে অক্রান্ত। তবে সুস্থ থাকাকালীন পরকীয়ায় জড়িয়ে এক মহিলার সাথে তার বাচ্চা আছে এবং এই ঘটনার কারণে মহিলার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন।
আইনগতভাবে বিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও তথ্য গোপন করে বিবাহবিডি ডট কমে রেজিস্ট্রেশন করে বিভিন্ন মেয়ের সাথে প্রতারণার অভিযোগে বিবাহ বিডি কর্তৃপক্ষ তন্ময়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার বিরুদ্ধে জনৈক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ থেকে শাস্তিস্বরূপ অফিসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তন্ময়কে।
প্রাইম ব্যাংকের সিইও এক সিনিয়র মহিলার সাথে রয়েছে তার সম্পর্ক। ব্রাক ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার এক মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত যায় বনশ্রীতে অবস্থিত বন্ধুর ফ্ল্যাটে। এসকল ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টে বদলি হয়ে আসে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এক মেয়ের সাথে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে সাবলেট নিয়ে থেকেছে। উত্তরাতে এক বাসায় বিগত কয়েক মাস যাবত যাতায়াত করছে ব্রাক ইউনিভার্সিটির এক মেয়েকে নিয়ে।
তিনি বলেন, তন্ময় বনানী নিবাসে ফেব্রয়ারি, ২০১৯ এর পূর্বে একাকী বসবাস করত এবং বিভিন্ন মেয়ে ও মহিলাকে নিয়ে যেত নিয়মিত। নিবাসে এক মেয়ে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা চালায়। কোয়ার্টারের সহকর্মীগণ, গার্ড, কাজের বুয়াসহ সকলেই তার ও তার পরিবারের কৃর্তি জানে। কোয়ার্টারে অনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনার কারণে সিকিউরিটি হেড কর্তৃক তাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। তার বাসার এন্ট্রি রেসট্রিকটেড করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। জানুয়ারি, ২০১৯ এ তার বাসা অফিস কর্তৃক রেইডও করা হয় এবং অফিসে তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়।