বিতর্কে বিচলিত নন হুইপ সামশুল: ‘মাফিয়া চক্র আমার পেছনে লেগেছে’
- আপডেট সময় : ০৮:৪৭:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনের এমপি ও সংসদে সরকারি দলের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তিনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন- এমন অভিযোগ তুলেছেন তারই দলের নেতা দিদারুল আলম চৌধুরী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে নিয়ে ‘চোয়ার মারি দাঁত ফেলাই দিইয়ুম’- এমন ‘হুমকি’র একটি বিষয়ও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় হুইপপুত্র শারুনের অস্ত্র হাতে একটি ছবি। যদিও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন বরাবরের মতোই বলে আসছেন, এসব কিছুই পরিকল্পিত। একটি ‘মাফিয়া চক্র’ তাদের রাজনৈতিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং আগামী ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম আবাহনীর উদ্যোগে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বানচাল করতেই এসব অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। জনগণই এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। এতে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিচলিত নন বলেও জানান।
২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড ক্লাবসহ একযোগে তিনটি ক্লাবে র্যাব অভিযান চালায়। ‘খোঁজখবর না নিয়ে’ ঢালাওভাবে জুয়া ও ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে এমন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে দাবি করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এতে ক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। তার এমন বক্তব্য নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয়। সপ্তাহজুড়ে চলে এসব বিতর্ক। এরই মধ্যে শুক্রবার চট্টগ্রামে আসেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার ছেলে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন। বিতর্কের মধ্যেও পটিয়া সংসদীয় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ হুইপ ও তার ছেলেকে বরণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন।
বিকেলে বিমানবন্দরে নামলে নানা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা হুইপকে প্রশ্ন করেন। জাতীয় পার্টি ও বিএনপি হয়েই সামশুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগে এসেছেন- যুগান্তরসহ গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আমাকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি- কত কিছুই বানানো হচ্ছে। এখনও জামায়াত বানানো হয়নি। আমার এলাকার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা সবাই এখানে উপস্থিত আছেন, তারা জানেন। আপনারা তাদের জিজ্ঞেস করেন আমি কোথা থেকে কীভাবে এসেছি। আমি যদি এতই খারাপ হই তবে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আমাকে দলে নিতেন না। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন আমার বিষয়টি।
সামশুল হক চৌধুরী আরও বলেন, মূলত একটি মাফিয়া চক্র স্বার্থসিদ্ধি করতে না পেরে আমার পেছনে লেগেছে। আমার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর মিডিয়ায় ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমি এতে বিচলিত নই। জনগণই এসব অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।
গতকাল একটি অনলাইন পত্রিকায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের অস্ত্রহাতে একটি ছবি প্রকাশ হয়। ‘হুইপপুত্র শারুনের অস্ত্রের মহড়া’ বলে এটিকে দেখানো হয়। সেই ছবিটিও ভাইরাল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হুইপপুত্র শারুন শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, তিনি গত বছর রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানের একটি শুটিং ক্লাবে শুটিংয়ের দৃশ্য সেটি। অস্ত্রহাতে শুটিংয়ের এই ছবিটি তিনি নিজেই তখন ‘ফান’ শিরোনাম দিয়ে তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দেন।
তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন ‘অস্ত্র হাতে মহড়ার’ ছবি কি কেউ নিজের ওয়ালে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, আমার বাবা তিন তিনবার মনোনয়ন পেয়ে পটিয়া থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আমি একদিনের জন্যও পটিয়ায় গিয়ে কোথাও প্রভাব খাটিয়েছি, কোথাও ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছি- এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। মূলত আমাদের রাজনৈতিক সাফল্যকে একটি মহল সহ্য করতে পারছে না।
শেখ কামালের নামে আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে দু’বার। আগামী ১৯ অক্টোবর এই টুর্নামেন্ট তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। আমার বাবার ‘ব্যবসায়িক শত্রু’ দিদারুল আলম চৌধুরীসহ ঈর্ষাপরায়ণ গুটিকয়েক মানুষ সে ফ বিরোধিতার স্বার্থে কিছু বক্তব্যকে বিকৃত করে সামনে এনে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে তারা সফল হবেন না।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমার সঙ্গে তার (হুইপ সামশুল হক চৌধুরী) কোনো ব্যবসায়িক বা জায়গা জমি নিয়ে শত্রুতা নেই। আবাহনীতে (চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাব) তার প্রশ্রয়ে জুয়া চলে।