ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




দুবাই বসে বাংলাদেশের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৯ ৬৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
দুবাইয়ের আবুধাবিতে অবস্থানরত সোহেল বাংলাদেশে একটি ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণ সদর থানায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে মাদক সিন্ডিকেটে যুক্ত ১৫-২০ জন। তাদের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে ইয়াবার চালান যায় দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। যদিও সিন্ডিকেটটি মূলত দেশের অভ্যন্তরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রটির অন্যতম সদস্য নাসির উদ্দিন সরকারকে ২৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর উত্তরা থেকে আটকের পর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সোমবার বলেন, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে একটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। চক্রটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা ইয়াবা কৌশলে আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করছে। র‌্যাব-১ এর অনুসন্ধানী দল চক্রটির কয়েক সদস্যকে শনাক্ত করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের একটি বড় চালান ঢাকা থেকে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মাদক চোরাকারবারিকে ধরতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

রোববার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি, ১৫ নম্বর রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আচারের দুটি বয়ামে ২৬ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি পাসপোর্টসহ নাসির উদ্দিন সরকার (৩৫) নামে ওই চোরাকারবারিকে আটক করে। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানার চান্দ্রপুর গ্রামে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির উদ্দিন জানান, দুবাইয়ের আবুধাবিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সোহেলের হাত ধরে তিনি এ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে ১৫-২০ জন সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

মাদকের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাসির উদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে তিন বছর মেয়াদি ভিসা নিয়ে দুবাই যান নাসির। আবুধাবির মোসাম্বা শহরে বহুতল ভবনের জন্য এসি তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সোহেলের সঙ্গে সেখানেই তার পরিচয়।

সোহেল ওই একই প্রতিষ্ঠানের ফেব্রিকেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে ২০০৯ সালের শেষ দিকে নাসির উদ্দিন দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর মাঝে মধ্যে সোহেলের সঙ্গে কথা হতো। একপর্যায়ে সোহেল তাকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেন। এরপর এ পর্যন্ত তিনি এ সিন্ডিকেটের হয়ে ২০-২৫টির মতো মাদকের বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন।

নাসির জানান, চক্রের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করায় সোহেল তাকে মাদকের একটি চালান নিয়ে দুবাইয়ে যেতে বলেন। এতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও টিকিট বুকিংসহ সব কাজ সোহেলের লোক করে দেয়। এ ছাড়া তাকে অগ্রীম ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

বিমানবন্দরে চেকিংয়ে মাদকের উপস্থিতি যাতে বোঝা না যায় সে জন্য একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়। তিনি সোহেলের নির্দেশে ইয়াবা প্রথমে কার্বন পেপারে মুড়িয়ে তার ওপর কালো স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দুটি আচার ভর্তি বয়ামের ভেতর নেয়। এ প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন পর্যন্ত অসংখ্যা মাদকের চালান আকাশপথে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে বলে জানান নাসির। জিজ্ঞাসাবাদে নাসির আরও কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




দুবাই বসে বাংলাদেশের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ

আপডেট সময় : ০৫:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
দুবাইয়ের আবুধাবিতে অবস্থানরত সোহেল বাংলাদেশে একটি ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণ সদর থানায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে মাদক সিন্ডিকেটে যুক্ত ১৫-২০ জন। তাদের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে ইয়াবার চালান যায় দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। যদিও সিন্ডিকেটটি মূলত দেশের অভ্যন্তরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রটির অন্যতম সদস্য নাসির উদ্দিন সরকারকে ২৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর উত্তরা থেকে আটকের পর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সোমবার বলেন, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে একটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। চক্রটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা ইয়াবা কৌশলে আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করছে। র‌্যাব-১ এর অনুসন্ধানী দল চক্রটির কয়েক সদস্যকে শনাক্ত করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের একটি বড় চালান ঢাকা থেকে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মাদক চোরাকারবারিকে ধরতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

রোববার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি, ১৫ নম্বর রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আচারের দুটি বয়ামে ২৬ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি পাসপোর্টসহ নাসির উদ্দিন সরকার (৩৫) নামে ওই চোরাকারবারিকে আটক করে। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানার চান্দ্রপুর গ্রামে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির উদ্দিন জানান, দুবাইয়ের আবুধাবিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সোহেলের হাত ধরে তিনি এ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে ১৫-২০ জন সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

মাদকের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাসির উদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে তিন বছর মেয়াদি ভিসা নিয়ে দুবাই যান নাসির। আবুধাবির মোসাম্বা শহরে বহুতল ভবনের জন্য এসি তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সোহেলের সঙ্গে সেখানেই তার পরিচয়।

সোহেল ওই একই প্রতিষ্ঠানের ফেব্রিকেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে ২০০৯ সালের শেষ দিকে নাসির উদ্দিন দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর মাঝে মধ্যে সোহেলের সঙ্গে কথা হতো। একপর্যায়ে সোহেল তাকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেন। এরপর এ পর্যন্ত তিনি এ সিন্ডিকেটের হয়ে ২০-২৫টির মতো মাদকের বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন।

নাসির জানান, চক্রের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করায় সোহেল তাকে মাদকের একটি চালান নিয়ে দুবাইয়ে যেতে বলেন। এতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও টিকিট বুকিংসহ সব কাজ সোহেলের লোক করে দেয়। এ ছাড়া তাকে অগ্রীম ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

বিমানবন্দরে চেকিংয়ে মাদকের উপস্থিতি যাতে বোঝা না যায় সে জন্য একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়। তিনি সোহেলের নির্দেশে ইয়াবা প্রথমে কার্বন পেপারে মুড়িয়ে তার ওপর কালো স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দুটি আচার ভর্তি বয়ামের ভেতর নেয়। এ প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন পর্যন্ত অসংখ্যা মাদকের চালান আকাশপথে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে বলে জানান নাসির। জিজ্ঞাসাবাদে নাসির আরও কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।