দেশজুড়ে ডেঙ্গু মহামারী, বাদ নেই প্রত্যন্ত গ্রাম!

- আপডেট সময় : ০৬:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০১৯ ২০০ বার পড়া হয়েছে

হাফিজুর রাহমান শফিকঃ চলতি মাসের শুরু থেকেই আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। পুরো জুলাই মাস জুড়ে সারা দেশে ১৬ হাজার ২২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর অগাস্ট মাসের প্রথম ৫ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী। গতকালও মারা গেছেন আবহাওয়াবিদের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ ৭ জন। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০৬৫ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অর্থাত্ প্রতি ঘণ্টায় ৮৬ জনেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। বগুরার পটিয়া উপজেলার গ্রামেও ঘরে ঘরে ছরিয়ে পরেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, এক মাস আগে (৪ জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন ভর্তি হয়েছিল। তার ঠিক এক মাস পর (৪ আগস্ট, রোববার) ২৪ ঘণ্টায় গত সব মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ মিনিটে প্রায় ২ জন, প্রতি ঘণ্টায় ৮৬ জনেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে এত পরিমাণ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শুধু হাসপাতালের ইনডোরে ভর্তি রোগীই নয়, হাসপাতালের আউটডোরেও জ্বরাক্রান্ত রোগীর ভীর বাড়ছে। ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা যেন ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বাইরেও দেশের প্রায় সব জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও ডেঙ্গু রুপ নিয়েছে মহামারী হিসেবে।
অপরদিকে দেশজুড়ে সকল সরকারী বেসরকারী হাসপাতালে জনসাধারণের রক্ত পরীক্ষার হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে যা চিকিৎসা ব্যাবস্থায় বাঁধা হিসেবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ অযথা আতঙ্কিত হয়ে ডেঙ্গু টেস্ট না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় প্রয়োজন। অকারণে চাপ বাড়ালে যারা সত্যিই খুব অসুস্থ, তাদের সেবায় বিঘ্ন ঘটবে। এজন্য অযথা আতঙ্কিত না হয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে টেস্ট করতে হবে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার প্রকোপ না কমলে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এডিস মশা মারতে যে ওষুধ ব্যবহার করছে তার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওষুধ মানসম্মত না হওয়ায় এডিস মশা মরছে না। ফলে রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তির রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াচ্ছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৭ হাজার ৬৫৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ হাজার ৭৬১।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২২৩ ও সর্বশেষ চলতি মাসের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৮ জন (এপ্রিল ২ জন, জুন তিনজন ও জুলাই মাসে ১৩ জন) বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা তিনগুণের বেশি হবে বলে বলা হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, আমলা, গৃহবধূ ও শিশুসহ সব বয়সের রোগীর প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে ২ হাজার ২৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া জুলাই মাসে ১৬ হাজার ২২৩ জন এবং চলতি আগস্ট মাসের গত পাঁচদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯ হাজার ছয়জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ১৮৩, মিটফোর্ডে ১০২, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ৯৮, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্টে ৩০, বারডেমে ২৬, বিএসএমএমইউতে ৫০, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৯, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৮, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানায় ৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জনসহ ১ হাজার ১২৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৩৯৯ এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে ৯১৬ জন ভর্তি হয়েছেন।