ঢাকা ০১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান Logo ছাত্র জনতাকে ১০ মিনিটে ক্লিয়ার করার ঘোষণা দেয়া হামিদ চাকুরীতে বহাল Logo ছাত্রলীগ নেত্রী যুবলীগ নেতার প্রতারণার শিকার চিকিৎসক সালেহউদ্দিন: বিচার ও প্রতিকার দাবি Logo দেশসেরা সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনে সংবর্ধনা Logo মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিএমজিটিএ’র Logo এনবিআরে আরেক মতিউর: কর কমিশনার কবিরের সম্পদের পাহাড় Logo চাকুরীর নামে ভুয়া মেজরের কোটি টাকার প্রতারণা: মিথ্যে মামলায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি Logo পটুয়াখালী এলএ শাখায় ঘুষ ছাড়া সেবা পাচ্ছেনা ইপিজেড ও পায়রা বন্দরের ক্ষতিগ্রস্তরা Logo খুলনায় বন্ধ পাটকল চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আমজনতার দলের বিক্ষোভ Logo এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী রশীদ’র বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ




এরশাদের সম্পদ ও উত্তরাধিকার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৯:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সম্পদ ও তার উত্তরাধিকার কারা- এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কোথাও নেই। রাজনৈতিক অবস্থানের মতোই তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রহস্যে ঘেরা। তবে এরশাদ গত বছরের জানুয়ারিতেই তার সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিজ হাতেই করে গেছেন। ফলে তার অবর্তমানে এসব বিষয়ে জটিলতার আশঙ্কা কম।

রাষ্ট্রপতি থাকতে স্বৈরাচার হিসেবে এবং পরে বিয়ে, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে আলোচনায় ছিলেন এরশাদ। মৃত্যুর পর এখন তার একমাত্র বৈধ স্ত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। ১৯৯৮ সালে বিদিশাকে তিনি বিয়ে করলেও ২০০৪ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরশাদের প্রথম পুত্র রাহগির আল মাহি (শাদ এরশাদ) রওশনের ঘরে জন্ম নেন তিনি ক্ষমতায় থাকতেই। তবে নিঃসন্তান এরশাদ-রওশনের ঘরে হঠাৎ করেই স্ত্রী রওশনের গর্ভে সন্তান ধারণের ঘোষণায় তৎকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ১৯৯৯ সালে বিদিশার ঘরে জন্ম নেয় দ্বিতীয় পুত্র শাহতা জারাব (এরিক এরশাদ)। ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত শাহতা জারাবের নামানুসারে এই নাম রাখা হয়। এরশাদ ও বিদিশার বিয়েতেও এই রাষ্ট্রদূতের ভূমিকার কথা ওই সময়ে ছড়িয়েছিল। এ ছাড়া এরশাদের আরও কয়েকজন পালিত পুত্র ও কন্যা রয়েছে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার সম্পদের একটি অংশ ট্রাস্টে দান করেছেন এবং বাকিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন বলে তার পরিবার ও দলীয় সূত্র জানিয়েছে। ট্রাস্টের সদস্য পদে দ্বিতীয় পুত্র এরিককে রাখা হলেও সেখানে তিনি প্রথম পুত্র শাদকে রাখেননি।

তবে এরশাদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদেরের মধ্যে বিরোধের শঙ্কা রয়েছে। গত ৪ মে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে তার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন এরশাদ। অন্যদিকে সংসদীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি স্ত্রী রওশনকে। জাপার নেতারা জানিয়েছেন, এরশাদের ইচ্ছা দল পরিচালনা করবেন কাদের এবং সংসদের নেতৃত্বে থাকবেন রওশন। তার অবর্তমানে দেবর-ভাবির যৌথ নেতৃত্বে দল চলবে।

এরশাদের অবর্তমানে জি এম কাদেরই হবেন দলের প্রধান। বর্তমান উপনেতা থেকে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন রওশন। কিন্তু এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের অনুসারীরা তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের অনুসারীরা যৌথ নয়, একক নেতৃত্ব চান। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিভক্তি সৃষ্টি হলে কাদেরের পাশে কোনো সংসদ সদস্য থাকবেন বলে মনে হচ্ছে না। অন্যদিকে রংপুরকেন্দ্রিক তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবাই রওশনবিরোধী। তারা চান দলের কর্তৃত্ব কাদেরের হাতে থাকুক। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ত্যাগের পর এরশাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। ক্ষমতায় থাকতেই তিনি ‘গরিব দেশের ধনী রাষ্ট্রপতি’ উপাধি পান। মৃত্যুকালে তিনি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদে থাকলেও একদিন মাত্র অধিবেশনে যোগ দেন। হুইল চেয়ারে অধিবেশন কক্ষে ঢুকলেও কোনো বক্তব্য দেননি। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ এপ্রিল নিজের সই জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় রাজধানীর বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

সেখানে তিনি বলেন, তার বর্তমান ও অবর্তমানে সই নকল করে পার্টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দলের বিভিন্ন পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়া, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়া, ব্যাংক হিসাব জালিয়াতি এবং পারিবারিক সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজনের জানমাল হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে তিনি মনে করেন অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার। থানায় এই অভিযোগ দায়েরের পাঁচ দিনের মাথায় ২৯ এপ্রিল রাতে বনানীতে পার্টি কার্যালয়ের এরশাদের কক্ষের লকার ভেঙে ৪৩ লাখ টাকা লুট হয়ে যায়।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন এক কোটি ৮৪ লাখ দুই হাজার ২০৬ টাকা। এর মধ্যে তার ব্যবসা থেকে আয় ছিল দুই লাখ ছয় হাজার ৫০০ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী থেকে তার আয় ছিল ১৯ লাখ চার হাজার ৬৯৬ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সম্মানী পেয়েছিলেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সম্মানী থেকে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।

ওই সময় তার হাতে নগদ টাকা ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এর বাইরে শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ডিপিএস ছিল ৯ লাখ টাকা। এরশাদ তার গুলশান ও বারিধারায় দুটি ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।

এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার। স্ত্রীর গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর বাইরে বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকা দামের দুটি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে। এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে।

ব্যবসায় মূলধন আছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা; জমি বিক্রি করে পেয়েছেন দুই কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এরশাদের ৭৭ লাখ টাকা দামের দোকান, বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকা দামের আরেকটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে। স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টাকা দামের রংপুরে এবং ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের জমি রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে। বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট রয়েছে এরশাদের। গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের একটির মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং আরেকটির মূল্য পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা। হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।

এরশাদের দল ও তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এরশাদ তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লিখিতভাবে দান করেছেন। তবে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা সেখানে নেই। বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ছোট পুত্র এরিক, এরশাদের একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

এ ছাড়াও তিনি তার বড় ছেলে শাদ এরশাদ, ছোট ছেলে এরিক, পালিত কন্যা জেবিন ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দিয়েছেন। কিছু সম্পত্তি দলের নামেও এরশাদ লিখে দিয়েছেন। রংপুর সদরে কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও সেখানকার সব সম্পত্তি তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজাকে লিখে দিয়েছেন। গুলশান-২-এর বাড়িটি অনেক আগেই স্ত্রী রওশনকে দিয়েছেন। বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ এরিককে দিয়েছেন। পালিত ছেলে আরমানকে দিয়েছেন গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট। ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দিয়েছেন। বাকি সম্পদ কাকে দিয়েছেন তা কেউই নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এরশাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে চারটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল ও একই অভিযোগে তেজগাঁও থানার আরও একটি মামলা ঢাকার সিএমএম আদালতে বিচারাধীন ছিল এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বহুল আলোচিত মঞ্জুর হত্যা মামলা বিচারাধীন ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




এরশাদের সম্পদ ও উত্তরাধিকার

আপডেট সময় : ১১:৪৯:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সম্পদ ও তার উত্তরাধিকার কারা- এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কোথাও নেই। রাজনৈতিক অবস্থানের মতোই তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রহস্যে ঘেরা। তবে এরশাদ গত বছরের জানুয়ারিতেই তার সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিজ হাতেই করে গেছেন। ফলে তার অবর্তমানে এসব বিষয়ে জটিলতার আশঙ্কা কম।

রাষ্ট্রপতি থাকতে স্বৈরাচার হিসেবে এবং পরে বিয়ে, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে আলোচনায় ছিলেন এরশাদ। মৃত্যুর পর এখন তার একমাত্র বৈধ স্ত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। ১৯৯৮ সালে বিদিশাকে তিনি বিয়ে করলেও ২০০৪ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরশাদের প্রথম পুত্র রাহগির আল মাহি (শাদ এরশাদ) রওশনের ঘরে জন্ম নেন তিনি ক্ষমতায় থাকতেই। তবে নিঃসন্তান এরশাদ-রওশনের ঘরে হঠাৎ করেই স্ত্রী রওশনের গর্ভে সন্তান ধারণের ঘোষণায় তৎকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ১৯৯৯ সালে বিদিশার ঘরে জন্ম নেয় দ্বিতীয় পুত্র শাহতা জারাব (এরিক এরশাদ)। ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত শাহতা জারাবের নামানুসারে এই নাম রাখা হয়। এরশাদ ও বিদিশার বিয়েতেও এই রাষ্ট্রদূতের ভূমিকার কথা ওই সময়ে ছড়িয়েছিল। এ ছাড়া এরশাদের আরও কয়েকজন পালিত পুত্র ও কন্যা রয়েছে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার সম্পদের একটি অংশ ট্রাস্টে দান করেছেন এবং বাকিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন বলে তার পরিবার ও দলীয় সূত্র জানিয়েছে। ট্রাস্টের সদস্য পদে দ্বিতীয় পুত্র এরিককে রাখা হলেও সেখানে তিনি প্রথম পুত্র শাদকে রাখেননি।

তবে এরশাদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদেরের মধ্যে বিরোধের শঙ্কা রয়েছে। গত ৪ মে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে তার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন এরশাদ। অন্যদিকে সংসদীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি স্ত্রী রওশনকে। জাপার নেতারা জানিয়েছেন, এরশাদের ইচ্ছা দল পরিচালনা করবেন কাদের এবং সংসদের নেতৃত্বে থাকবেন রওশন। তার অবর্তমানে দেবর-ভাবির যৌথ নেতৃত্বে দল চলবে।

এরশাদের অবর্তমানে জি এম কাদেরই হবেন দলের প্রধান। বর্তমান উপনেতা থেকে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন রওশন। কিন্তু এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের অনুসারীরা তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের অনুসারীরা যৌথ নয়, একক নেতৃত্ব চান। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিভক্তি সৃষ্টি হলে কাদেরের পাশে কোনো সংসদ সদস্য থাকবেন বলে মনে হচ্ছে না। অন্যদিকে রংপুরকেন্দ্রিক তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবাই রওশনবিরোধী। তারা চান দলের কর্তৃত্ব কাদেরের হাতে থাকুক। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ত্যাগের পর এরশাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। ক্ষমতায় থাকতেই তিনি ‘গরিব দেশের ধনী রাষ্ট্রপতি’ উপাধি পান। মৃত্যুকালে তিনি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদে থাকলেও একদিন মাত্র অধিবেশনে যোগ দেন। হুইল চেয়ারে অধিবেশন কক্ষে ঢুকলেও কোনো বক্তব্য দেননি। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ এপ্রিল নিজের সই জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় রাজধানীর বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

সেখানে তিনি বলেন, তার বর্তমান ও অবর্তমানে সই নকল করে পার্টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দলের বিভিন্ন পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়া, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়া, ব্যাংক হিসাব জালিয়াতি এবং পারিবারিক সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজনের জানমাল হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে তিনি মনে করেন অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার। থানায় এই অভিযোগ দায়েরের পাঁচ দিনের মাথায় ২৯ এপ্রিল রাতে বনানীতে পার্টি কার্যালয়ের এরশাদের কক্ষের লকার ভেঙে ৪৩ লাখ টাকা লুট হয়ে যায়।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন এক কোটি ৮৪ লাখ দুই হাজার ২০৬ টাকা। এর মধ্যে তার ব্যবসা থেকে আয় ছিল দুই লাখ ছয় হাজার ৫০০ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী থেকে তার আয় ছিল ১৯ লাখ চার হাজার ৬৯৬ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সম্মানী পেয়েছিলেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সম্মানী থেকে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।

ওই সময় তার হাতে নগদ টাকা ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এর বাইরে শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ডিপিএস ছিল ৯ লাখ টাকা। এরশাদ তার গুলশান ও বারিধারায় দুটি ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।

এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার। স্ত্রীর গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর বাইরে বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকা দামের দুটি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে। এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে।

ব্যবসায় মূলধন আছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা; জমি বিক্রি করে পেয়েছেন দুই কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এরশাদের ৭৭ লাখ টাকা দামের দোকান, বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকা দামের আরেকটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে। স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টাকা দামের রংপুরে এবং ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের জমি রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে। বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট রয়েছে এরশাদের। গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের একটির মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং আরেকটির মূল্য পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা। হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।

এরশাদের দল ও তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এরশাদ তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লিখিতভাবে দান করেছেন। তবে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা সেখানে নেই। বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ছোট পুত্র এরিক, এরশাদের একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

এ ছাড়াও তিনি তার বড় ছেলে শাদ এরশাদ, ছোট ছেলে এরিক, পালিত কন্যা জেবিন ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দিয়েছেন। কিছু সম্পত্তি দলের নামেও এরশাদ লিখে দিয়েছেন। রংপুর সদরে কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও সেখানকার সব সম্পত্তি তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজাকে লিখে দিয়েছেন। গুলশান-২-এর বাড়িটি অনেক আগেই স্ত্রী রওশনকে দিয়েছেন। বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ এরিককে দিয়েছেন। পালিত ছেলে আরমানকে দিয়েছেন গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট। ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দিয়েছেন। বাকি সম্পদ কাকে দিয়েছেন তা কেউই নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এরশাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে চারটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল ও একই অভিযোগে তেজগাঁও থানার আরও একটি মামলা ঢাকার সিএমএম আদালতে বিচারাধীন ছিল এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বহুল আলোচিত মঞ্জুর হত্যা মামলা বিচারাধীন ছিল।