পাস্তরিত দুধে ‘এন্টিবায়োটিক-ডিটারজেন্ট’ পাওয়া ঢাবি অধ্যাপককে টার্গেট !
- আপডেট সময় : ০১:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে
হাফিজুর রহমান শফিক;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)’র বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ফারুককে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে দেশের বিভিন্ন নামি-দামি কম্পানির পাস্তুরিত দুধে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট এবং ফরমালিন পাওয়া বিষয়টি প্রমাণিত হয় ওই শিক্ষকের গবেষণায়।
বৃহস্পতিবার কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ এক তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের এমন অভিযোগ করেন।
পলাশ মাহমুদের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘দুধে ভেজাল ধরায় ফারুক স্যারকে হয়রানি! দুধ নিয়ে গবেষণা করে ভেজাল ধরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ফারুক স্যারকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
আমরা ফারুক স্যারকে হয়রানি বা কোনো ধরণের হয়রানি চেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের ১৬ কোটি ভোক্তা ফারুক স্যারের পাশে দাঁড়াবেন আশা করি।
অধ্যাপক ফারুক বাজার মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগোর দুধ সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করেন। সেখানে তিনি সাত ধরনের পাস্তুরিত দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিন ধরনের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পান। ওই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই ফারুক স্যারকে টার্গেট করা হয়েছে।
বড় বড় কোম্পানির অর্থায়নে সভা-সেমিনার হচ্ছে। দেশ ও মানুষের স্বার্থে ফারুক স্যারের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রাজপথে নামতে হবে।’
এ বিষয়ে পলাশ মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফারুক স্যারের গবেষণায় দুধে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তার এ গবেষণার ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য না হলে প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আরো উন্নত গবেষণা করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা না করে এভাবে হয়রানি করা উদ্দেশ্যমূলক’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ জড়িত। তাই ইতোমধ্যেই তাদের সহায়তায় সভ-সেমিনারও হতে দেখা যাচ্ছে। দেশ ও মানুষের স্বার্থে যারা কাজ করে তারা যদি পুঁজিপতিদের হাতে এভাবে হয়রানির শিকার হয় তাহলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকবে না।’
উল্লেখ্য, ২৫ জুন ঢারি’তে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এবিএম ফারুক বলেন, ‘আমরা এসব কোম্পানি উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত কাঁচা দুধ পরীক্ষা করে তাতে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছি।’মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি অনুষদ এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার যৌথভাবে ওই পরীক্ষা চালায়।
এরপর ওই গবেষণা সঠিক নয় দাবি করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেন, ‘গবেষণা প্রটোকল না মানায় তার (অধ্যাপক ফারুক) বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেয়া হবে।’ ৯ জুলাই ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রণলয়ের এমন অবস্থান বিষয়ে অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘একটি গবেষণার ত্রুটি বের করতে হয় আরেকটি গবেষণা দিয়ে। মন্ত্রণালয় এ ধরনের পরীক্ষা করেছে কিনা আমি জানি না। তারা যদি পরীক্ষা করে থাকেন তাহলে আমাদের ত্রুটিগুলো দেখাক। আরেকটা বিষয় হলো, ত্রুটি পাওয়ার আগেই আমার তথ্য সঠিক ছিল না এটা তারা (মন্ত্রণালয়) বললো কীভাবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরীক্ষার ফল আমলে নেয়ার দরকার নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনেকগুলো ল্যাব আছে। ওইসব ল্যাবে স্যাম্পল পাঠানো হোক। তারা যে রিপোর্ট দেবে আমরা তা মেনে নেব।’