ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবিপ্রবিতে সুষ্ঠভাবে গুচ্ছভুক্ত ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন Logo গুচ্ছ খ-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষা উপকরণ ও সুপেয় পানি দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের সহযোগিতা Logo মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি হবে সত্যিকারের গ্রীন ক্যাম্পাসঃ ভিসি মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo প্রতারণাচক্র থেকে সাবধান থাকতে আহবান জানিয়েছেন শাবি উপাচার্য Logo শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী কাজে সর্বদা সাপোর্ট থাকবে; শাবি উপাচার্য Logo জবি শিক্ষককে হেনস্থা, গুরু পাপে লঘু দণ্ড Logo কুবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক




ইয়াবা পাচারে নতুন টেকনিক ‘কাট আউট’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:২৭:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১১৬ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি;
ইয়াবা পাচারে হোতাদের পরিচয় গোপন রাখতে অনুসরণ করা হচ্ছে ‘কাট আউট’ পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র ও জঙ্গিদের অনুসরণ করা এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেকটা সফল দেশের ইয়াবা কারবারিরাও। প্রতিনিয়ত বাহক গ্রেফতার হলেও ‘কাট আউট’ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে হোতারা। আর এ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসকারী শরণার্থী রোহিঙ্গাদের।

গত এক বছরে ইয়াবা পরিবহনকালে শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করলেও এ পদ্ধতির অনুসরণ করার কারণে সিংহভাগ চালানের নেপথ্য হোতার নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘ইয়াবা পাচার করতে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে পাচার চক্রের সদস্যরা। এ পদ্ধতিগুলোর একটি হচ্ছে হোতাদের আসল পরিচয় না জানিয়ে বাহকদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ইয়াবা চালানের বাহক শুধু প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর ছদ্মনামই জানতে পারে। তাই বহনকারী গ্রেফতার হলেও চক্রগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারে না।’ সিএমপির আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র ও জঙ্গি সংগঠনগুলো কাট আউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালায়। বর্তমানে দেশের ইয়াবা পাচারকারীরা এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। তারপরও পুলিশের তৎপরতার কারণে প্রায় ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে।’ পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারের জন্য ‘কাট আউট’ পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। এ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারের কারণে কোনো বাহকই চালান গ্রহণকারী কিংবা প্রদানকারী কারোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানে না। শুধু ছদ্মনাম ও মোবাইল নম্বর জানে। যে নম্বরটি দেওয়া হয় তা অন্যজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নেওয়া। তাই বাহক গ্রেফতার হলেও প্রযুক্তি ব্যবহার করেও মোবাইল মালিকের পরিচয় জানতে পারে না প্রশাসন। ‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারের জন্য বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ইয়াবার চালান সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ধারণাই থাকে না বাহকদের। তাই বাহকরা গ্রেফতার হলেও চক্রের হোতার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মাদক চক্রের হোতারা ইয়াবা পরিবহনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আরেকটা কারণ হচ্ছে মাদক পরিবহনে খরচ হ্রাস। সাধারণ বহনকারীকে প্রতি চালানের জন্য যেখানে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা দিতে হয় সেখানে রোহিঙ্গাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিয়েই চালান বহন করা যায়।

কয়েকটি ইয়াবা বহনকারী রোহিঙ্গা গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক তপন শর্মা বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতজন রোহিঙ্গাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই ক্যারিয়ার। গ্রেফতারকৃতরা চালানের বিষয়ে কোনো তথ্যই জানাতে পারে না। তাই জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হয় না।’
মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসার পর উল্লেগযোগ্য অংশ প্রবেশ করে রোহিঙ্গা শিবিরে।

পরে ইয়াবার সেসব চালান রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার চক্রের শতাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে শরণার্থী ক্যাম্পে। তাদের মধ্যে ১৩ জনই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে আরও ১০০ চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য রয়েছে। গত এক বছরে সারা দেশে মাদক পাচারের অভিযোগে শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে প্রশাসন। গ্রেফতারকৃতদের সবাই মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গ্রেফতারকৃতদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে উখিয়া, কুতুপালং, লেদাসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ইয়াবা পাচারে নতুন টেকনিক ‘কাট আউট’

আপডেট সময় : ০৪:২৭:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৯

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি;
ইয়াবা পাচারে হোতাদের পরিচয় গোপন রাখতে অনুসরণ করা হচ্ছে ‘কাট আউট’ পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র ও জঙ্গিদের অনুসরণ করা এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেকটা সফল দেশের ইয়াবা কারবারিরাও। প্রতিনিয়ত বাহক গ্রেফতার হলেও ‘কাট আউট’ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে হোতারা। আর এ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসকারী শরণার্থী রোহিঙ্গাদের।

গত এক বছরে ইয়াবা পরিবহনকালে শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করলেও এ পদ্ধতির অনুসরণ করার কারণে সিংহভাগ চালানের নেপথ্য হোতার নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘ইয়াবা পাচার করতে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে পাচার চক্রের সদস্যরা। এ পদ্ধতিগুলোর একটি হচ্ছে হোতাদের আসল পরিচয় না জানিয়ে বাহকদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ইয়াবা চালানের বাহক শুধু প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর ছদ্মনামই জানতে পারে। তাই বহনকারী গ্রেফতার হলেও চক্রগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারে না।’ সিএমপির আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র ও জঙ্গি সংগঠনগুলো কাট আউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালায়। বর্তমানে দেশের ইয়াবা পাচারকারীরা এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। তারপরও পুলিশের তৎপরতার কারণে প্রায় ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে।’ পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারের জন্য ‘কাট আউট’ পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। এ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারের কারণে কোনো বাহকই চালান গ্রহণকারী কিংবা প্রদানকারী কারোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানে না। শুধু ছদ্মনাম ও মোবাইল নম্বর জানে। যে নম্বরটি দেওয়া হয় তা অন্যজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নেওয়া। তাই বাহক গ্রেফতার হলেও প্রযুক্তি ব্যবহার করেও মোবাইল মালিকের পরিচয় জানতে পারে না প্রশাসন। ‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারের জন্য বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ইয়াবার চালান সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ধারণাই থাকে না বাহকদের। তাই বাহকরা গ্রেফতার হলেও চক্রের হোতার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মাদক চক্রের হোতারা ইয়াবা পরিবহনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আরেকটা কারণ হচ্ছে মাদক পরিবহনে খরচ হ্রাস। সাধারণ বহনকারীকে প্রতি চালানের জন্য যেখানে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা দিতে হয় সেখানে রোহিঙ্গাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিয়েই চালান বহন করা যায়।

কয়েকটি ইয়াবা বহনকারী রোহিঙ্গা গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক তপন শর্মা বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতজন রোহিঙ্গাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই ক্যারিয়ার। গ্রেফতারকৃতরা চালানের বিষয়ে কোনো তথ্যই জানাতে পারে না। তাই জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হয় না।’
মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসার পর উল্লেগযোগ্য অংশ প্রবেশ করে রোহিঙ্গা শিবিরে।

পরে ইয়াবার সেসব চালান রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার চক্রের শতাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে শরণার্থী ক্যাম্পে। তাদের মধ্যে ১৩ জনই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে আরও ১০০ চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য রয়েছে। গত এক বছরে সারা দেশে মাদক পাচারের অভিযোগে শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে প্রশাসন। গ্রেফতারকৃতদের সবাই মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গ্রেফতারকৃতদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে উখিয়া, কুতুপালং, লেদাসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা।