ঢাকা ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




পুরোনো ‘গাড়ির কবর’ !

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০১৯ ১৮২ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি;

দেয়ালঘেরা প্রায় পাঁচ একর এলাকা। ফটক দিয়ে উঁকি দিলেই চোখে পড়বে উঁচু-নিচু গাছের ঝোপঝাড়। যেন পুরোনো কবর ঘিরে রেখেছে গাছগাছালি। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ‘কাস্টমস অকশন গোলা’র চিত্র এটি। বন্দরের সিপিআর ফটক দিয়ে ঢুকে হাতের বাঁয়ে এই অকশন গোলার অবস্থান।

কী নেই সেখানে! কাস্টমসের তালিকা ধরে বলা যায়, ডাম্প ট্রাক, মিক্সচার ট্রাক, প্রাইম মুভার, ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি, মোটরসাইকেল, ফটোকপি মেশিন, মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়া দুধ, সয়াবিন তেল, পাম তেল, শাড়ি, থ্রিপিস, প্রসাধনসামগ্রী, কাপড়, কম্বল, অ্যাসিড, রশি, ডিজেল—আরও কত কী!

বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন বন্দরে কত গাড়ি কোথায় পড়ে আছে, তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই নথিতে বলা হয়, কাস্টমস অকশন গোলায় ১৯০টি গাড়ি আছে, যেগুলো ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সালে (১১ থেকে ২৬ বছর আগে) কাস্টমসের হাতে তুলে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে সেখানেই পড়ে আছে এসব গাড়ি।

তবে কাগজপত্রে পণ্য থাকলেও বাস্তবে সেভাবে নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, হয়তো গাড়ির বডি আছে, ইঞ্জিন নেই। আমদানি করা পুরোনো এসব পণ্যের অনেকগুলোই রোদ-ঝড়বৃষ্টিতে মাটিতে মিশে গেছে। অন্তত আটটি ঘূর্ণিঝড়ও বয়ে গেছে এসব পণ্যের ওপর দিয়ে।

প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাস্টমসের নিলামে অংশ নিচ্ছেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, গাড়ি ভেদ করে গাছগাছালি উঠে যাওয়ার এই চিত্র চার বছরের বেশি নয়। এসব পণ্য নষ্ট বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ব্যবহারের উপযোগিতা নেই। অকশন গোলার বিভিন্ন শেড ভেঙে ধসে পড়ার পর থেকে তা একরকম পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। মামলার কারণে অনেক পণ্য নিলামে তুলতে পারেনি কাস্টমস।

আমদানি করা এসব পণ্যের ক্ষেত্রে আছে হরেক রকম কাহিনি। পুরোনো ফটোকপি মেশিনের মতো পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় তা জব্দ করে রাখা হয়েছে এই গোলায়। মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনেক আমদানি পণ্য এই অকশন গোলায় রাখা হয়েছে। নানা কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে তুলতে না পারায় রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব পণ্যের বেশির ভাগই ধ্বংসযোগ্য। ট্রাকসহ বড় গাড়ির মতো পণ্য ধ্বংস করার মতো ব্যবস্থা না থাকায় এভাবে পড়ে আছে। তিনি বলেন, বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নতুন অকশন গোলায় এসব পণ্য সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে নতুন অকশন গোলার মালিকানা এখনো বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসকে বুঝিয়ে দেয়নি। তারা বুঝিয়ে দেওয়ার পর এসব পুরোনো আমদানি পণ্য সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দর জেটির বাইরে বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নবনির্মিত কাস্টমস গোলা নির্মিত হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। উদ্বোধনের পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে শেডটির চাবি হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে কিছু পণ্যও নেওয়া হয়েছে। পুরোনো অকশন গোলা থেকে সব পণ্য নতুন অকশন গোলায় সরিয়ে নেওয়ার কথা কাস্টমসের। এরপরই পুরোনো অকশন গোলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। বন্দর সেখানে নতুন আমদানি করা কনটেইনার রাখার জায়গা করার পরিকল্পনা করছে।

বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নতুন অকশন শেডের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। চুক্তি অনুসারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরকে নতুন অকশন শেড ভাড়া দেওয়ার কথা। পুরোনো অকশন গোলাটিও বন্দরের কাছে ছেড়ে দেওয়ার কথা। পুরোনো অকশন গোলার জায়গাটি ১৯৫৩-৫৪ সালে তৎকালীন পোর্ট রেলওয়ের নামে অধিগ্রহণ হয়েছিল, পরে যা বন্দরের কাছে ন্যস্ত করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পুরোনো ‘গাড়ির কবর’ !

আপডেট সময় : ১২:৪৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০১৯

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি;

দেয়ালঘেরা প্রায় পাঁচ একর এলাকা। ফটক দিয়ে উঁকি দিলেই চোখে পড়বে উঁচু-নিচু গাছের ঝোপঝাড়। যেন পুরোনো কবর ঘিরে রেখেছে গাছগাছালি। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ‘কাস্টমস অকশন গোলা’র চিত্র এটি। বন্দরের সিপিআর ফটক দিয়ে ঢুকে হাতের বাঁয়ে এই অকশন গোলার অবস্থান।

কী নেই সেখানে! কাস্টমসের তালিকা ধরে বলা যায়, ডাম্প ট্রাক, মিক্সচার ট্রাক, প্রাইম মুভার, ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি, মোটরসাইকেল, ফটোকপি মেশিন, মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়া দুধ, সয়াবিন তেল, পাম তেল, শাড়ি, থ্রিপিস, প্রসাধনসামগ্রী, কাপড়, কম্বল, অ্যাসিড, রশি, ডিজেল—আরও কত কী!

বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন বন্দরে কত গাড়ি কোথায় পড়ে আছে, তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই নথিতে বলা হয়, কাস্টমস অকশন গোলায় ১৯০টি গাড়ি আছে, যেগুলো ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সালে (১১ থেকে ২৬ বছর আগে) কাস্টমসের হাতে তুলে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে সেখানেই পড়ে আছে এসব গাড়ি।

তবে কাগজপত্রে পণ্য থাকলেও বাস্তবে সেভাবে নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, হয়তো গাড়ির বডি আছে, ইঞ্জিন নেই। আমদানি করা পুরোনো এসব পণ্যের অনেকগুলোই রোদ-ঝড়বৃষ্টিতে মাটিতে মিশে গেছে। অন্তত আটটি ঘূর্ণিঝড়ও বয়ে গেছে এসব পণ্যের ওপর দিয়ে।

প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাস্টমসের নিলামে অংশ নিচ্ছেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, গাড়ি ভেদ করে গাছগাছালি উঠে যাওয়ার এই চিত্র চার বছরের বেশি নয়। এসব পণ্য নষ্ট বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ব্যবহারের উপযোগিতা নেই। অকশন গোলার বিভিন্ন শেড ভেঙে ধসে পড়ার পর থেকে তা একরকম পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। মামলার কারণে অনেক পণ্য নিলামে তুলতে পারেনি কাস্টমস।

আমদানি করা এসব পণ্যের ক্ষেত্রে আছে হরেক রকম কাহিনি। পুরোনো ফটোকপি মেশিনের মতো পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় তা জব্দ করে রাখা হয়েছে এই গোলায়। মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনেক আমদানি পণ্য এই অকশন গোলায় রাখা হয়েছে। নানা কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে তুলতে না পারায় রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব পণ্যের বেশির ভাগই ধ্বংসযোগ্য। ট্রাকসহ বড় গাড়ির মতো পণ্য ধ্বংস করার মতো ব্যবস্থা না থাকায় এভাবে পড়ে আছে। তিনি বলেন, বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নতুন অকশন গোলায় এসব পণ্য সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে নতুন অকশন গোলার মালিকানা এখনো বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসকে বুঝিয়ে দেয়নি। তারা বুঝিয়ে দেওয়ার পর এসব পুরোনো আমদানি পণ্য সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দর জেটির বাইরে বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নবনির্মিত কাস্টমস গোলা নির্মিত হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। উদ্বোধনের পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে শেডটির চাবি হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে কিছু পণ্যও নেওয়া হয়েছে। পুরোনো অকশন গোলা থেকে সব পণ্য নতুন অকশন গোলায় সরিয়ে নেওয়ার কথা কাস্টমসের। এরপরই পুরোনো অকশন গোলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। বন্দর সেখানে নতুন আমদানি করা কনটেইনার রাখার জায়গা করার পরিকল্পনা করছে।

বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নতুন অকশন শেডের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। চুক্তি অনুসারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরকে নতুন অকশন শেড ভাড়া দেওয়ার কথা। পুরোনো অকশন গোলাটিও বন্দরের কাছে ছেড়ে দেওয়ার কথা। পুরোনো অকশন গোলার জায়গাটি ১৯৫৩-৫৪ সালে তৎকালীন পোর্ট রেলওয়ের নামে অধিগ্রহণ হয়েছিল, পরে যা বন্দরের কাছে ন্যস্ত করা হয়।