দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি ; বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- আপডেট সময় : ১০:২৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৪৭৮ বার পড়া হয়েছে
সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হলো দ্রব্যমূল্যের ক্রমশ বৃদ্ধি। দ্রব্য বা সেবার ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বর্তমানে চাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রের দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এখন একটি বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে চরমভাবে, আর তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের হু হু বৃদ্ধি। আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে দিন দিন। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত।প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নিম্নবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়। মধ্যবিত্তদের অবস্থাও বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতোই। আর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই হলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশুনা করছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে নিজেদের খরচ বহন করে তারা নিজেরাই টিউশনি কিংবা পার্ট টাইম জব করে।ফলে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পরেছে এসব শিক্ষার্থীরা।গত কয়েকমাস ধরে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, আটা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে।থেমে নেই কাঁচা বাজারের দ্রব্যাদিও। এমনকি শীতকালীন শাক-সবজির দামও চড়া। ফলে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোয় সবজির বর্তমান দাম টমেটো ৬০-৮০ টাকা , গাজর ৮০-১০০ টাকা, লাউ ৩০-৫০ টাকা ( প্রতি পিস), বেগুন ৫০ টাকা, পটল ৪০-৬০ টাকা, মরিচ ৭০-১০০ টাকা, আলু ২৫-৪০ টাকা, লালশাক ১৫-২০ টাকা। এদিকে গত দুমাসের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১১০টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রতিলিটার ২০০- ২০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ – মাংসের তো কথাই নেই।
এছাড়াও হল কিংবা মেসের শিক্ষার্থীদের কাছে ডিম হলো একটি সাধারণ খাবার। এমনকি উচ্চমূল্যের কারণে বিভিন্ন সবজি কিংবা মাছ মাংস কিনতে পারে না বলে অনেক শিক্ষার্থীরই শেষ ভরসা ছিলো ডিম।কিন্তু গত দুইমাসে ডিমের দাম যেন ইতিহাস গড়েছে।এবং তা শিক্ষার্থীদের ওপর যেন মরার উপর খাঁরার ঘা।
করোনার প্রকোপ কাটানোর পর বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হয়। এই প্রসঙ্গে বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের দাম। তার মতে,যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে কথা বলা হচ্ছে যেমন তেল,চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটা জিনিসেরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বেড়েছে। তাই আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির জন্য বিভিন্ন অসদুপায়ী ব্যবসায়ীদের দায়ী করা যায়। কারণ তারা লাভের আশায় বিভিন্ন জিনিস মজুদ করে রাখে, যাতে পরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।আবার সরকারের বিভিন্ন খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়ার কারণেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হোসেন জানান যে, করোনার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। এখন মনে হচ্ছে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকি। সচরাচর মিলে জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকা করে আসত। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের এমন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়েও ৭০-৮০ টাকায় মিল হচ্ছে না। এদিকে টিউশনি করে যে টাকা পাই পড়ালেখাসহ অন্যান্য খরচ করে মাসের ২২-২৩ তারিখের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে টাকা। আর মাসের বাকি শেষ দিনগুলো বা টিউশনির বেতন পাওয়া পর্যন্ত দিনগুলো কাটাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।’
দ্রব্যমূল্যের এমন বৃদ্ধি নিয়ে নোয়াখালি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, ‘টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। টিউশনির বেতন বাড়েনি। অথচ প্রতিদিন এর খাবার, শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ এর ব্যয় বেড়েই চলেছে। গুনতে হচ্ছে অনেক টাকা। খেতে হচ্ছে হিমশিম।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মতে, খাবার হোটেলগুলোতে খাবারের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। দোকানীরা বলছে,সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বিধায় তাদেরও খাবারের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার এক দোকানী জানান, ‘আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা কি করব,সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কমার কোনো নাম নেই। আমাদেরও তো পরিবার আছে। পেট চালাতে হয়।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রায় সময়ই সকাল থেকে বিকেল অব্দি ক্লাস থাকার ফলে দুপুরের খাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতেই খেতে হয়। কিন্তু এখানেও খাবারের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার থেকে ভর্তুকি পাওয়া সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে এই অবস্থা পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।বর্তমান সময়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে পুরো দেশে, তার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে শিক্ষা খাতে। শিক্ষা খাতে এর প্রভাব ব্যাপক আকার ধারণ করছে করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ’
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘মহামারি করোনার সময় শিক্ষার্থীদের পাশে যেভাবে বৃত্তিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তা আবার নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না। আর আমি সরকারকেও বলব এই দিকে একটু বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। এ সময়ে যদি সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে হয়তো অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।’
নাবিলা তাসনিম ইরা
লোকপ্রশাসন বিভাগ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়