বেতন কমানোর সিদ্ধান্তে বেসিক ব্যাংকে বিক্ষোভ
- আপডেট সময় : ০৯:১৯:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন রিপোর্ট |
টানা লোকসানে থাকা বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ব্যয় সমন্বয়ের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো জারি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রাজধানীর মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবনে সোমবার বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ফটকে কর্মকর্তারা এ বিক্ষোভ করেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২২ ডিসেম্বর বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করে। যা ওইদিন থেকেই কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংকে গত ৭ বছর ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় বিদ্যমান অতিরিক্ত বেতন-ভাতা ব্যাংকের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। তাই ব্যাংকের বিদ্যমান বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুবিধাদি বাতিল করা হলো।
নতুন নির্দেশনার বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার সকালে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মীরা। তারা অবিলম্বে নির্দেশনা বাতিলের দাবি করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নাম প্রকাশ না করে বেসিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে স্তরভেদে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন কমানো হয়েছে। কিন্তু কোনোরকম আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
একাধিক কর্মকর্তা আরটিভি অনলাইনকে জানান, আমরা যখন চাকরি নিয়েছি তখন আমাদের বয়স কম ছিল, সরকারি অন্যান্য চাকরিতে যাওয়ার একটি অবস্থা ছিল। অনেকেরই চাকরির অফার ছিল কিন্তু যাইনি। এখন আমাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অতিক্রম করেছে। এই অবস্থায় বেতন কমানোর মাধ্যমে আমাদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। এটি আমরা মানি না। আমাদের ব্যাপারে এমডি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, বোর্ডের অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কর্মীরা কেন দায়ভার নেবে? আমরা কোনো অন্যায় করিনি। আমাদের বেতন কমানো অযৌক্তিক, অন্যায় ও অমানবিক।
এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, ‘কর্মকর্তারা না বুঝেই আন্দোলন করছেন। আর ব্যাংকের কাজ বাদ দিয়ে তারা আন্দোলনে নামেন কিভাবে? বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো অনুযায়ী এখন বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্টায়ত্ত্ব অন্যান্য ব্যাংকের জন্য যে বেতন কাঠামো সরকার তৈরি করেছে, যে বেতন কাঠামো অনুযায়ী সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বেতন পান, সেভাবেই বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বেতন পাবেন। এছাড়া, আগামী বছর কর্মকর্তাদের ইনক্রিমেন্ট হবে। অনেকের পদোন্নতি হবে।
আলাউদ্দিন এ মজিদ আরও বলেন, বেসিক ব্যাংকের আয় থেকে যদি কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া যেতো, তাহলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। যখন ব্যাংক লাভ করা শুরু করবে, তখন তাদের বেতন-ভাতাও বাড়বে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত আগস্ট মাসে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের বেতন কমানোর নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় তিনি বলেন, ব্যাংকের আয় দিয়েই কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা মেটাতে হবে। গত ১২ ডিসেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে ত্রৈমাসিক সমন্বয় বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এরপরই গত রোববার ব্যাংক বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন সার্কুলার জারির মাধ্যমে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিদ্যমান বেতন-ভাতা কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।