ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি হবে সত্যিকারের গ্রীন ক্যাম্পাসঃ ভিসি মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo প্রতারণাচক্র থেকে সাবধান থাকতে আহবান জানিয়েছেন শাবি উপাচার্য Logo শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী কাজে সর্বদা সাপোর্ট থাকবে; শাবি উপাচার্য Logo জবি শিক্ষককে হেনস্থা, গুরু পাপে লঘু দণ্ড Logo কুবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন




আকাশচুম্বী ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারাচ্ছে কোটি পাখি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯ ৯২ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক;
আকাশচুম্বী ইমারতে ঢাকা পুরো শহর। ভবনের ফাঁক গলে একনজর আকাশের দেখা মেলা যেন ভার। ইট-পাথরের সেই বহুতল ভবনে চাকচিক্যময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু মানুষ ছাড়াও তো এই পৃথিবীতে আছে অন্য প্রাণীও। আর তাদেরই একটি অংশ এই আকাশছোঁয়া বহুতল ভবনের গায়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রত্যেক বছর।

বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপজ্জনক একাধিক শহরের কথা। এসব শহরের হাজারো আকাশচুম্বী ভবন প্রত্যেক বছর কেড়ে নিচ্ছে কোটি পাখির প্রাণ। দুই ডানায় ভর দিয়ে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা থেকে উত্তরের দিকে যাওয়া ও ফেরত আসার পথে গগনচুম্বী ভবনের সঙ্গে ধাক্কায় কিংবা তা থেকে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তিতে প্রাণ হারাচ্ছে পক্ষীকূল। আর এই সংখ্যাটা বছরে প্রায় ১০০ কোটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিপজ্জনক শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে শিকাগো। প্রত্যেক বছর হেমন্ত ও বসন্তের সময় প্রায় ২৫০ প্রজাতির ৫০ লাখ পাখির যাতায়াতের পথে পরে কাচ ঢাকা সুদৃশ বহুতল ভবনে ঠাসা এই শহর।

বসন্তের সময় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তরে কানাডার দিকে ও হেমন্তের সময় ফের দক্ষিণে; এভাবেই বছরে দু’বার যাতায়াত করে পাখির দল। সেই পথেই শিকাগোর পাশাপাশি আরেকটি বড় মরণ ফাঁদ ম্যানহাটন। নিউইয়র্ক শহরের পাখি সংরক্ষণ নিয়ে কর্মরত একটি সংগঠনের পরিচালক সুজান এলবিন।

তিনি বলেন, পাখিরা এই সব বহুতল ভবনে ঘেরা শহরে ঢুকে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় গন্তব্য চিনতে না পেরে অন্যত্র চলে যায়। তার পর যখন দিনের আলো ফোটে, যখন খাবারের প্রয়োজন পড়ে, তখন তারা গাছের সন্ধানে উড়ে যায়। কিন্তু আসলে গাছ নয়, ওই কাচের বহুতলে গাছের যে প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে সেগুলোকেই গাছ ভেবে ভুল করে সেগুলোতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাদের।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যে সব পরিযায়ী পাখির দল দেশান্তরী হয়, তারা সাধারণত রাতেই উড়তে শুরু করে। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই গগনচুম্বী বহুতল অট্টালিকা। কারণ রাতের বেলা বহুতল ভবনের চোখ ধাঁধানো আলোয় দিক ভুল করে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ে পরিযায়ী পাখির দল। কোন শহর এ ধরনের পরিযায়ী পাখির জন্য কতটা বিপজ্জনক সে নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে কর্নেল ল্যাব অফ অর্নিথোলজি।

এতে উঠে এসেছে শিকাগো, ম্যানহাটান, ছাড়াও পরিযায়ী পাখিদের ভ্রমণপথের মধ্যে রয়েছে হিউস্টন, ডালাসের মতো বড় বড় শহর। লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, সেন্ট লু এবং আটলান্টা শহরেও একই রকম বিপত্তির মুখে পড়ে পাখির দল।

সমীক্ষার অন্যতম গবেষক কাইল হরটন অবশ্য দাবি করেছেন, এই গবেষণার উদ্দেশ্য মোটেও ওই শহরের বাসিন্দাদের সমালোচনা করা নয়। তিনি বলেন, আমরা শুধু সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছি…তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি যাতে এই পাখিদের বাঁচানো যায়।

নিউইয়র্কেও একাধিক স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। নিউইয়র্কের রাস্তায় প্রত্যেক বছর ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ পাখি বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে মারা যায়। পুরো দেশে সেই সংখ্যা বছরে ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি হতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

স্মিথসোনিয়ানস মাইগ্রেটরি বার্ড সেন্টার বলছে, চড়াই, ওয়ার্বলারের মতো কিছু প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রে এ ধরনের সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে।

পাখি বিশেষজ্ঞদের দাবি, বছরের যে সময়ে পরিযায়ী পাখি যাতায়াত করে; সেই সময় রাতের বেলা বহুতল ভবনের আলো নিভিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ জন্য লাইটস আউট শিরোনামের একটি উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আকাশচুম্বী ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারাচ্ছে কোটি পাখি

আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক;
আকাশচুম্বী ইমারতে ঢাকা পুরো শহর। ভবনের ফাঁক গলে একনজর আকাশের দেখা মেলা যেন ভার। ইট-পাথরের সেই বহুতল ভবনে চাকচিক্যময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু মানুষ ছাড়াও তো এই পৃথিবীতে আছে অন্য প্রাণীও। আর তাদেরই একটি অংশ এই আকাশছোঁয়া বহুতল ভবনের গায়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রত্যেক বছর।

বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপজ্জনক একাধিক শহরের কথা। এসব শহরের হাজারো আকাশচুম্বী ভবন প্রত্যেক বছর কেড়ে নিচ্ছে কোটি পাখির প্রাণ। দুই ডানায় ভর দিয়ে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা থেকে উত্তরের দিকে যাওয়া ও ফেরত আসার পথে গগনচুম্বী ভবনের সঙ্গে ধাক্কায় কিংবা তা থেকে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তিতে প্রাণ হারাচ্ছে পক্ষীকূল। আর এই সংখ্যাটা বছরে প্রায় ১০০ কোটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিপজ্জনক শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে শিকাগো। প্রত্যেক বছর হেমন্ত ও বসন্তের সময় প্রায় ২৫০ প্রজাতির ৫০ লাখ পাখির যাতায়াতের পথে পরে কাচ ঢাকা সুদৃশ বহুতল ভবনে ঠাসা এই শহর।

বসন্তের সময় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তরে কানাডার দিকে ও হেমন্তের সময় ফের দক্ষিণে; এভাবেই বছরে দু’বার যাতায়াত করে পাখির দল। সেই পথেই শিকাগোর পাশাপাশি আরেকটি বড় মরণ ফাঁদ ম্যানহাটন। নিউইয়র্ক শহরের পাখি সংরক্ষণ নিয়ে কর্মরত একটি সংগঠনের পরিচালক সুজান এলবিন।

তিনি বলেন, পাখিরা এই সব বহুতল ভবনে ঘেরা শহরে ঢুকে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় গন্তব্য চিনতে না পেরে অন্যত্র চলে যায়। তার পর যখন দিনের আলো ফোটে, যখন খাবারের প্রয়োজন পড়ে, তখন তারা গাছের সন্ধানে উড়ে যায়। কিন্তু আসলে গাছ নয়, ওই কাচের বহুতলে গাছের যে প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে সেগুলোকেই গাছ ভেবে ভুল করে সেগুলোতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাদের।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যে সব পরিযায়ী পাখির দল দেশান্তরী হয়, তারা সাধারণত রাতেই উড়তে শুরু করে। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই গগনচুম্বী বহুতল অট্টালিকা। কারণ রাতের বেলা বহুতল ভবনের চোখ ধাঁধানো আলোয় দিক ভুল করে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ে পরিযায়ী পাখির দল। কোন শহর এ ধরনের পরিযায়ী পাখির জন্য কতটা বিপজ্জনক সে নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে কর্নেল ল্যাব অফ অর্নিথোলজি।

এতে উঠে এসেছে শিকাগো, ম্যানহাটান, ছাড়াও পরিযায়ী পাখিদের ভ্রমণপথের মধ্যে রয়েছে হিউস্টন, ডালাসের মতো বড় বড় শহর। লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, সেন্ট লু এবং আটলান্টা শহরেও একই রকম বিপত্তির মুখে পড়ে পাখির দল।

সমীক্ষার অন্যতম গবেষক কাইল হরটন অবশ্য দাবি করেছেন, এই গবেষণার উদ্দেশ্য মোটেও ওই শহরের বাসিন্দাদের সমালোচনা করা নয়। তিনি বলেন, আমরা শুধু সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছি…তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি যাতে এই পাখিদের বাঁচানো যায়।

নিউইয়র্কেও একাধিক স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। নিউইয়র্কের রাস্তায় প্রত্যেক বছর ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ পাখি বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে মারা যায়। পুরো দেশে সেই সংখ্যা বছরে ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি হতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

স্মিথসোনিয়ানস মাইগ্রেটরি বার্ড সেন্টার বলছে, চড়াই, ওয়ার্বলারের মতো কিছু প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রে এ ধরনের সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে।

পাখি বিশেষজ্ঞদের দাবি, বছরের যে সময়ে পরিযায়ী পাখি যাতায়াত করে; সেই সময় রাতের বেলা বহুতল ভবনের আলো নিভিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ জন্য লাইটস আউট শিরোনামের একটি উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।