ঢাকা ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




প্রতারণার ফাঁদে নতুন রোহিঙ্গারা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১২৯ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি;

• অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় ৩২০ রোহিঙ্গা উদ্ধার
• এসব ঘটনায় ১৩ সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও ধরা পড়েনি দালাল
• চিহ্নিত দালালদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী শিবিরের রোহিঙ্গা আজুম বাহার ও সখিনা বেগম সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য দালালের হাতে ১০ হাজার টাকা করে দেন। গভীর সমুদ্রে নিয়ে তাঁদের বড় জাহাজে তুলে দিলে আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এমনই রফা ছিল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কয়েকজনকে জড়ো করে টেকনাফের সাগরপাড়ে নেওয়ার সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে ধরা পড়েন তাঁরা। কিন্তু কোনো দালাল এখনো পর্যন্ত আটক হয়নি।

পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় আজুম বাহার ও সখিনা বেগম জানিয়েছেন, ওই দালালেরা আগেও রোহিঙ্গাদের পাচার করেছিল। এটি জানার পরও তাঁরা টাকা দেন।

বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টাকালে চলতি বছর সর্বশেষ ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২টি ঘটনায় ১৪৭ নারী, ১০৪ পুরুষ, ৬৯ শিশুসহ ৩২০ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছেন। এসব ঘটনায় ১৩ জন দালালের সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাই উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়া, ময়নারঘোনা, টেকনাফের উনছিপ্রাং, লেদা ও শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। চিহ্নিত দালালদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মূলত নতুন রোহিঙ্গারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। একই কথা বলেছেন টেকনাফ–২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দারও।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে উদ্ধার হন লম্বাশিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মোহসেনা বেগম। তিনি বলেন, পুরোনো রোহিঙ্গারা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাউকে তারা মালয়েশিয়া নিতে পারেনি। উল্টো দালালের খপ্পরে পড়ে টাকাপয়সা হারাচ্ছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দালাল চক্রের কয়েকজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, হাফেজ মোহাম্মদ সেলিম, আঁতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, মাহদুর করিম, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. নুরুল কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোসেন, মোহাম্মদ রশিদ, হাশিম উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ হামিদ। তাঁরা সবাই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা। সবাই গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কয়েকজন দলনেতা (মাঝি) মোহাম্মদ আলম, ছৈয়দুল আমিন, সলিম উল্লাহ, আবু ছিদ্দিক, মো. শাকের জানান, মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের সদস্যরা কিছু নতুন রোহিঙ্গাকে শিবির থেকে বের করার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু দালাল চক্রের সদস্য অবস্থান করছে, এ তথ্য নিশ্চিত করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, এদের শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের পাচারের ওপর বিশেষ নজর রাখা না হলে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের দেখাদেখি স্থানীয়রা যেকোনো সময় এ ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়াতে পারে।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, পুরোনো রোহিঙ্গা দালাল চক্রের কিছু সদস্য নতুন রোহিঙ্গাদের সমুদ্রপথে পাচারের চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশের নজরদারি থাকায় তারা সুবিধা করতে পারছে না। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




প্রতারণার ফাঁদে নতুন রোহিঙ্গারা

আপডেট সময় : ১১:১৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯

কক্সবাজার প্রতিনিধি;

• অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় ৩২০ রোহিঙ্গা উদ্ধার
• এসব ঘটনায় ১৩ সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও ধরা পড়েনি দালাল
• চিহ্নিত দালালদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী শিবিরের রোহিঙ্গা আজুম বাহার ও সখিনা বেগম সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য দালালের হাতে ১০ হাজার টাকা করে দেন। গভীর সমুদ্রে নিয়ে তাঁদের বড় জাহাজে তুলে দিলে আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এমনই রফা ছিল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কয়েকজনকে জড়ো করে টেকনাফের সাগরপাড়ে নেওয়ার সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে ধরা পড়েন তাঁরা। কিন্তু কোনো দালাল এখনো পর্যন্ত আটক হয়নি।

পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় আজুম বাহার ও সখিনা বেগম জানিয়েছেন, ওই দালালেরা আগেও রোহিঙ্গাদের পাচার করেছিল। এটি জানার পরও তাঁরা টাকা দেন।

বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টাকালে চলতি বছর সর্বশেষ ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২টি ঘটনায় ১৪৭ নারী, ১০৪ পুরুষ, ৬৯ শিশুসহ ৩২০ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছেন। এসব ঘটনায় ১৩ জন দালালের সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাই উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়া, ময়নারঘোনা, টেকনাফের উনছিপ্রাং, লেদা ও শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। চিহ্নিত দালালদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মূলত নতুন রোহিঙ্গারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। একই কথা বলেছেন টেকনাফ–২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দারও।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে উদ্ধার হন লম্বাশিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মোহসেনা বেগম। তিনি বলেন, পুরোনো রোহিঙ্গারা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাউকে তারা মালয়েশিয়া নিতে পারেনি। উল্টো দালালের খপ্পরে পড়ে টাকাপয়সা হারাচ্ছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দালাল চক্রের কয়েকজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, হাফেজ মোহাম্মদ সেলিম, আঁতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, মাহদুর করিম, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. নুরুল কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোসেন, মোহাম্মদ রশিদ, হাশিম উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ হামিদ। তাঁরা সবাই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা। সবাই গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কয়েকজন দলনেতা (মাঝি) মোহাম্মদ আলম, ছৈয়দুল আমিন, সলিম উল্লাহ, আবু ছিদ্দিক, মো. শাকের জানান, মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের সদস্যরা কিছু নতুন রোহিঙ্গাকে শিবির থেকে বের করার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু দালাল চক্রের সদস্য অবস্থান করছে, এ তথ্য নিশ্চিত করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, এদের শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের পাচারের ওপর বিশেষ নজর রাখা না হলে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের দেখাদেখি স্থানীয়রা যেকোনো সময় এ ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়াতে পারে।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, পুরোনো রোহিঙ্গা দালাল চক্রের কিছু সদস্য নতুন রোহিঙ্গাদের সমুদ্রপথে পাচারের চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশের নজরদারি থাকায় তারা সুবিধা করতে পারছে না। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।