ঘুড়ি উৎসবে ঘুড়ি নেই ঘুড়ির চেয়ে ডিজে’ বিভ্রাট পুরান ঢাকায়

- আপডেট সময় : ১১:৪৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২ ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ: অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পুরান ঢাকার সাকরাইন। তবে রঙিন এই ঘুড়ি উৎসবে আদি ঢাকার সূত্রাপুর গেন্ডারিয়া এলাকায় ঘুড়ি উৎসবকে ঘিরে কিছু কিছু ছাদে ভোর সাড়ে ছয়টা থেকেই অসহনীয় উচ্চশব্দে গান বাজনা এবং নতুন সংযোজন “সারফি বিট’নামের দড়াম দড়াম বুকে লাগা শব্দে আনন্দের চেয়ে ভোগান্তির অভিযোগও ছিল প্রচুর। ৯৯৯ বলেছে, সারারাত সূত্রাপুর,গেন্ডারিয়া থেকে অভিযোগ পাচ্ছে প্রচুর, পুলিশ যাচ্ছে একটু থেমে আবারও শুরু করে তারা। এলাকার লোকজন সচেতন না হলে তারা কি করবেন?
প্রতিবছর জানুয়ারির ১৪, ১৫ তারিখে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, তাতঁীবাজার, লক্ষীবাজার, গেন্ডারিয়া নারিন্দা, যাত্রাবাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি । ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় সাকরাইন।
পৌষ সংক্রান্তিতে আকাশে শুধু বাহারী রঙ্এর ঘুড়িই ওড়েনা, সমান তালে চলে ঘুড়ি কাটার খেলা। নানা রঙের, বর্ণের ঘুড়ি-লাটাই আর বাঁশের লগগা নিয়ে প্রায় প্রতি ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো আর কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন নানান বয়সী মানুষ। একজনের ওড়ানো ঘুড়ি কেটে দিয়ে বাক্কাট্টা… বাকাট্টা লোট বলে আনন্দ ধবনি করে ঘুড়ি শিকারীরা আর আশেপাশের ছাদের মানুষ গুলোও। আকাশে ভাসতে থাকা ঘুড়ির বাড়তি সুতো ধরে ঘুড়ি বাগে আনতে তাই বাশেঁর আগায় বাধা হয় বরই কাঁটা বা বরই গাছের ডাল। উৎসবের শেষে লাঠিতে কাপড় বেঁধে আগুন ধরানো আর মুখে কেরোসিন তেল নিয়ে ফুঁ দেয়ার বিপদজনক চল বেশ পুরনো। পিঠে পুলি আর হৈ হুল্লোড়ে চলে সারাদিন -সন্ধ্যা। এটাই ছিল মূলত পুরনো ঢাকার ঘুড়ি উৎসব।
তবে এলাকা ঘুরে জানা গেছে সাকরাইন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। থার্টিফার্স্ট নাইট বা এ জাতীয় উদযাপনের মতো সাক্রাইনেও আধুনিকায়নের নামে যুক্ত হয়েছে, উড়ন্ত আগুন “ফানুস” ওড়ানো, উচ্চশব্দে ডিজে মিউজিক এতেভোগান্তির শিকার অসুস্থজন, বয়োঃবৃদ্ধ, শিশু এবং রুগী। সোশ্যাল মিডিয়ায় Puran Dhaka Sutrapur, The Grandarea সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপে সাক্রাইনে ঘুড়ি উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন পোস্টে ফানুস এবং উচ্চশব্দে বুক কাঁপানো বিটে ডিজে মিউজিক এর বিপক্ষে রয়েছে অনেক মন্তব্য।
সরেজমিনে জানা যায়,কমপক্ষে ২৫ হাজার থেকে লাখ টাকা দিয়ে ভাড়ায় আনা হয়েছে সারফি বক্স যার আওয়াজ এবং খুব ভোর থেকে বিট মিউজিক ভোগান্তিতে ছিল এলাকাবাসি। তাঁরা বলেন এসব আগে ছিলোনা। ৫৬ বছর বয়সী একজন সিনিয়র সিটিজেন বললেন ভোর থেকে এতো শব্দে কষ্ট হচ্ছে তার, এমন সাকরাইন পুরান ঢাকার নয়; এখন দম বন্ধ হয়ে মারা যামু একটু পরে আসেন দেখবেন মেয়ে নিয়ে নাচানাচি করব, পুলিশ কে জানান না? জানতে চাইলে বলেন, পুলিশ চাইলে বন্ধ করতেই পারে, পুলিশরে ডরায়না কে?? নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাতে টহল পুলিশ বলেছে ফানুস ওড়ানো যাবেনা এবং উচ্চ শব্দে গান বাজনা করা যাবেনা। তবে সাকরাইন কে ঘিরে কিছু কিছু ছাদে যে ধরনের সাউন্ড বক্স বাজে সেই উচ্চ শব্দে বন্ধ করার আলাদা আদেশ পাননি তারা। তিনি নিজে সাততলা হেঁটে উঠে বন্ধ করিয়েছেন রাতে কিন্তু তারপরও থামেনি। এমন অবস্থায় কি করার আদেশ আছে জানতে চাইলে বলেন তেমন কোনো করণীয় নেই। এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ ও ওয়ারী জোনের আ্যসিটেন্ট কমিশনার উভয়ের সাথে কথা হলে ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন “উচ্চ শব্দে গান বাজনা কখনোই করা যাবেনা। আমি টহল টিমকে বলে দিচ্ছি। সূত্রাপুর ও (লোহারপুল) গেন্ডারিয়া পাশাপাশি হওয়ায় লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসবে ঘিরে সারফি বিটের গান বাজনা বন্ধ করার কোনো নির্দশ থানায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি থানায় বলে দেবেন বলেছেন কিন্তু শেষ অবধি রাত একটা অবধি চলেছে।
এদিকে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এই সাকরাইনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে গতবছর প্রথমবারের মতো ঘুড়ি উৎসবে মাতলেও করোনার সংক্রমণের উচ্চহারে সরকারি প্রজ্ঞাপন মেনে ঘুড়ি উৎসব থেকে এবার বিরত ছিল ডিএসসিসি। এবং ঘুড়ি উৎসবে ফানুস আর উচ্চ শব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির জন সং্যোগ আবু নাসের অগ্রযাত্রাকে বলেন, “উচ্চ শব্দের সাউন্ড কোনো উৎসবকে রঙিন করেনা বরং বিরক্তির কারণ হয় এবং আমাদের উৎসবে ফানুস ছিলোনা।
তবে সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে প্রচুর ডিজে মিউজিকের উদ্যাম নাচ দেখা গেছে যদিও করোনা সংক্রমনের রেড জোন রয়েছে ঢাকা।