কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে স্থানীয় বখাটের উত্ত্যক্তের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী (১৬)। বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না বলে অভিযোগ পরিবারের। এর প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মেয়েটির স্বজনেরা।
শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ শহরের গৌরাঙ্গ বাজার এলাকায় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মেয়েটির চাচাতো ভাই মো. রুবেল খান।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রায় দুই মাস আগে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের পুরানগাঁও এলাকার রুকুনুজ্জামান ওরফে বাতেনের বখাটে শ্যালক একই উপজেলার ধুবিপাথর গ্রামের মনির খান (২৫) ওই মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার বখাটে মনিরের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ, মনির ইতোমধ্যে আরেকটি বিয়ে করেছিল। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় স্ত্রী মনিরকে তালাক দিয়ে চলে যান। এরপর থেকেই মেয়েটিকে উত্যক্ত করে আসছে বখাটে মনির। এই কারণে ভয়ে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। প্রয়োজনে বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না। অনেকটা গৃহবন্দী দিন কাটাতে হচ্ছে মেয়েটিকে। শ্যালকের কাছে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মনিরের দুলাভাই রুকুনুজ্জামান বাতেনের হুকুমে মনিরসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী গত রোববার মেয়েটির বাবার বাড়িতে গিয়ে ধারলো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় মেয়ের বাবাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি বাজিতপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় ওই দিন মেয়েটির মা বাদী হয়ে মনিরসহ তিনজনকে আসামি করে বাজিতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় রুকুনুজ্জামান বাতেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের চাচাত ভাই ব্যবসায়ী ওসমান খানকে বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়ার পথে পরের দিন সোমবার বিকেলে উত্তর সরারচর শিববাড়ি মোড়ে রুকুনুজ্জামান বাতেনসহ পাঁচ জনের একটি দল ওসমানকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এসময় স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওইদিন ওসমানের বড় ভাই রুবেল খান বাজিতপুর থানায় রুকুনুজ্জামান বাতেনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল খান আরো অভিযোগ করেন, এসব ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য রুকুনুজ্জামান বাতেন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তার শাশুড়ি অধরা বেগমকে (৫৫) লুকিয়ে নিখোঁজের নাটক সাজান এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া রুকুনুজ্জামান বাতেন প্রতিনিয়িত তাদের মুঠোফোনসহ নানাভাবে শ্যালকের মনিরের সঙ্গে স্কুল শিক্ষার্থীর বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছেন। ফলে এখন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে রুকুনুজ্জামান বাতেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ওই বাড়ির জামাই। তিনি কেন শশুর বাড়ির বিষয় নিয়ে নিজেকে জড়াবেন? বরং বিষয়টি যেন পারিবারিকভাবে মিমাংসা হয়ে যায় সেটাই তিনি চান।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছেন। তার কাছে মনে হচ্ছে, পারিবারিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করছেন। তবে বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।