স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আমানুর রহমান খান রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারাপতি মো. নূরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ। রানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন রুশো মোস্তফা।
আদেশের পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ বলেন, আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে ১ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বুধবার (১৯ জুন) রানার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।
বুধবার রায়ের পর ড. বশির উল্লাহ জানান, হাইকোর্ট গত ৬ মার্চ এ মামলায় তাকে ছয় মাসের জামিন দিয়ে রুল জারি করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদনের পর চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান গত ১৪ মার্চ জামিন স্থগিত করে দেন। পরে ২৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ ওই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন। ১৮ জুন ওই রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। বুধবার রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
একইদিন রুশো মোস্তফা বলেছিলেন, এ রায়ের ফলে তার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই। কারণ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় তিনি ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তৎকালীন এমপি রানা ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালত।
এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর দণ্ডবিধির ৩০২/১২০/৩৪ ধারায় সংসদ সদস্য রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত।
বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় ১ এপ্রিল আপিল বিভাগ তার জামিন বহাল রেখেছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল করে টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরদিন ১৭ জুলাই শামীমের মা আছিয়া খাতুন এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এক বছর পর ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে।
এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার খন্দকার জাহিদ গত বছর ১১ মার্চ, শাহাদত হোসেন ১৬ মার্চ এবং হিরণ মিয়া ২৭ এপ্রিল আদালতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন এমপি আমানুর রহমান খান রানার দিক-নির্দেশনায় যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।