ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বিজিএমইএ’র আসন্ন নির্বাচনে তৎপর জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার মামলার আসামীরা Logo দশমিনায় যুবদল নেতাকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন Logo কেরানীগঞ্জ মডেল ভূমি অফিস যেন ঘুষের আস্তানা: এসিল্যান্ড থেকে পিয়ন সবাই এক আত্মা!  Logo শেখ সোহেলের সহচর কাউট রাজু গ্রুপের তাণ্ডব: অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি Logo পদোন্নতি,বদলি. কেনাকাটায় পাহাড়সম দুর্নীতি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে: দুদকের বিশেষ অভিযান Logo সুনামগঞ্জে প্রবাসী সাংবাদিকের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা Logo নিজেই মাদকাসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা; মাসে মাসোহারা আদায় ৭লাখ! Logo দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রকারী মাস্টারমাইন্ড সেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তার শাপলা Logo ‘শেখ হাসিনা ও জিয়াউলের বিরুদ্ধে ২০০ গুমের প্রমাণ মিলেছে’ Logo দুর্নীতির ছায়ায় রাজউক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান!




দানবীর সেজে প্রতারণা!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
শ্রাবণের কাছ থেকে রেহাই পায়নি পরিবারও

রাজধানীর বনশ্রীর বনবীথি শপিং কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবসা করেন গোলবার হোসেন ওরফে শ্রাবণ। তবে পরিবারের সদস্যরা জানেন, তিনি সমরাস্ত্র কারখানার প্রকৌশলী। এই পরিচয়ে তিনি বিয়েও করেন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে দাবি করে লোকজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। শুধু কি আশ্বাস? চাকরির নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে রীতিমতো মাসের পর মাস বেতন দেন, বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রেশন। তাই এ পর্যন্ত তাকে অবিশ্বাস করার সুযোগ থাকে না। এর মধ্যে নিরাপত্তা জামানত আর চাকরি স্থায়ী করার নামে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন। তারপরই চাকরিচ্যুতির চিঠি পান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এমন অভিনব কায়দায় এক বছরে অন্তত ১০ জনকে ফাঁদে ফেলেন শ্রাবণ।

র‌্যাব-৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বলেন, নিজের পরিবারকেও দিনের পর দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেছেন শ্রাবণ। গত বছরের জুলাইয়ে তিনি ভারতে যান। তবে পরিবারকে বলেছেন, সমরাস্ত্র কারখানার কাজে তাকে সরকারিভাবে জার্মানিতে পাঠানো হচ্ছে। ‘ভালোমানুষ’ হিসেবে পরিচিত লোকটি যে এমন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তা জেনে পরিবারের সদস্যসহ পরিচিতজনরা অবাক হয়েছেন। শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী থেকে গ্রেফতারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, শ্রাবণের দূরসম্পর্কের মামাতো বোন কুষ্টিয়ার ফারজানা আক্তার আশা। অনার্সে পড়ুয়া এই তরুণী নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছিলেন। আর এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় (এনএসআই) মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন শ্রাবণ। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে তিনি জানান, চাকরির জন্য লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তিনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন। শুধু নিরাপত্তা জামানত হিসেবে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। চাকরি নিশ্চিত, শর্তও খুব কঠিন নয়। তাই রাজি হয়ে যান আশা। বাবার মাধ্যমে শ্রাবণকে টাকা দেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ডাকযোগে তিনি চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পান। এ সময় শ্রাবণ এনএসআইর নামে খোলা ভুয়া ই-মেইল ঠিকানা থেকে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে আশার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিনের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে ওই ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতেন আশা। এরপর এপ্রিল ও মে মাসের বেতন বাবদ তার ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার করে মোট ২৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি এক লোককে দিয়ে রেশন হিসেবে চাল-ডাল-তেল-লবণ পৌঁছে দেওয়া হয় তার বাড়িতে।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রথমে দু-তিন মাসের বেতন ও রেশন দিয়ে টার্গেট ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করতেন শ্রাবণ। এরপর চাকরি স্থায়ী করার নামে চাইতেন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। পরের ধাপে তার মাধ্যমে আরও এক বা একাধিক চাকরিপ্রার্থী খুঁজে বের করতেন। শেষে অবৈধ লেনদেন ও অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার কাছে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানো হতো।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই কৌশলে আশার বান্ধবী খাদিজার কাছ থেকে দুই লাখ ও তাদের পরিচিত মিলনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন শ্রাবণ। এ ছাড়া তার কাছে পাওয়া কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে আরেফিন ও আরিফুলসহ আরও সাত-আটজনের তথ্য পাওয়া গেছে, যারা প্রতারিত হয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। শ্রাবণকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




দানবীর সেজে প্রতারণা!

আপডেট সময় : ০৪:৫২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯
শ্রাবণের কাছ থেকে রেহাই পায়নি পরিবারও

রাজধানীর বনশ্রীর বনবীথি শপিং কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবসা করেন গোলবার হোসেন ওরফে শ্রাবণ। তবে পরিবারের সদস্যরা জানেন, তিনি সমরাস্ত্র কারখানার প্রকৌশলী। এই পরিচয়ে তিনি বিয়েও করেন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে দাবি করে লোকজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। শুধু কি আশ্বাস? চাকরির নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে রীতিমতো মাসের পর মাস বেতন দেন, বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রেশন। তাই এ পর্যন্ত তাকে অবিশ্বাস করার সুযোগ থাকে না। এর মধ্যে নিরাপত্তা জামানত আর চাকরি স্থায়ী করার নামে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন। তারপরই চাকরিচ্যুতির চিঠি পান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এমন অভিনব কায়দায় এক বছরে অন্তত ১০ জনকে ফাঁদে ফেলেন শ্রাবণ।

র‌্যাব-৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বলেন, নিজের পরিবারকেও দিনের পর দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেছেন শ্রাবণ। গত বছরের জুলাইয়ে তিনি ভারতে যান। তবে পরিবারকে বলেছেন, সমরাস্ত্র কারখানার কাজে তাকে সরকারিভাবে জার্মানিতে পাঠানো হচ্ছে। ‘ভালোমানুষ’ হিসেবে পরিচিত লোকটি যে এমন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তা জেনে পরিবারের সদস্যসহ পরিচিতজনরা অবাক হয়েছেন। শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী থেকে গ্রেফতারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, শ্রাবণের দূরসম্পর্কের মামাতো বোন কুষ্টিয়ার ফারজানা আক্তার আশা। অনার্সে পড়ুয়া এই তরুণী নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছিলেন। আর এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় (এনএসআই) মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন শ্রাবণ। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে তিনি জানান, চাকরির জন্য লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তিনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন। শুধু নিরাপত্তা জামানত হিসেবে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। চাকরি নিশ্চিত, শর্তও খুব কঠিন নয়। তাই রাজি হয়ে যান আশা। বাবার মাধ্যমে শ্রাবণকে টাকা দেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ডাকযোগে তিনি চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পান। এ সময় শ্রাবণ এনএসআইর নামে খোলা ভুয়া ই-মেইল ঠিকানা থেকে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে আশার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিনের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে ওই ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতেন আশা। এরপর এপ্রিল ও মে মাসের বেতন বাবদ তার ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার করে মোট ২৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি এক লোককে দিয়ে রেশন হিসেবে চাল-ডাল-তেল-লবণ পৌঁছে দেওয়া হয় তার বাড়িতে।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রথমে দু-তিন মাসের বেতন ও রেশন দিয়ে টার্গেট ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করতেন শ্রাবণ। এরপর চাকরি স্থায়ী করার নামে চাইতেন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। পরের ধাপে তার মাধ্যমে আরও এক বা একাধিক চাকরিপ্রার্থী খুঁজে বের করতেন। শেষে অবৈধ লেনদেন ও অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার কাছে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানো হতো।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই কৌশলে আশার বান্ধবী খাদিজার কাছ থেকে দুই লাখ ও তাদের পরিচিত মিলনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন শ্রাবণ। এ ছাড়া তার কাছে পাওয়া কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে আরেফিন ও আরিফুলসহ আরও সাত-আটজনের তথ্য পাওয়া গেছে, যারা প্রতারিত হয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। শ্রাবণকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।