খুলনায় পাটকলে ফের উত্তেজনা কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ
- আপডেট সময় : ০৩:৫১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
বকেয়া মজুরি পরিশোধ হয়নি, পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়েও ধোঁয়াশা
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
ধর্মঘট প্রত্যাহারের একদিনের মধ্যেই আবারও খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গতকাল সপ্তাহের শেষ দিনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বকেয়া মজুরি না দেওয়ায় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম ও পিপলস পাটকলের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর আগে সকালে কয়েকটি মিলের উৎপাদন শ্রমিকরা বন্ধ করে দিলেও পরে তা আবার চালু হয়।
এদিকে বকেয়া মজুরি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ২১ মে খুলনা জেলা প্রশাসন, বিজেএমসি ও শ্রমিক নেতাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বলা হয়েছে, পাটকল শ্রমিকদের সব বকেয়া সরকার পরিশোধ করবে। আবার ওই বৈঠকেই দুই সপ্তাহের মজুরি দিতে বলা হয়েছে বিজেএমসিকে। এ ক্ষেত্রে একই বকেয়া দুই পক্ষ কীভাবে পরিশোধ করবে এ নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। বিজেএমসি এ বিষয়ে পাটকলগুলোতে কোনো নির্দেশনাও দেয়নি। পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, নয়টি পাটকলে শ্রমিকদের ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিজেএমসি ও পাটকল কর্মকর্তারা কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় সকাল থেকেই পাটকলে উত্তেজনা দেখা দেয়। মজুরি না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকালে কয়েকটি মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পরে মিলের উৎপাদন পুনরায় চালু হলেও দুপুরের পর থেকে ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম ও পিপলস পাটকলের কর্মকর্তাদের শ্রমিকরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। জানা যায়, এর আগে সকালে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন শ্রমিকনেতারা। কিন্তু সেখানেও বকেয়া মজুরি পরিশোধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মজুরি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে অভুক্ত শ্রমিকরা মিলের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। তারা বলেন, মজুরি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মিলের কোনো কর্মকর্তা মিলে প্রবেশ বা মিল থেকে বের হতে পারবেন না। জানা যায়, প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর স্টার, প্লাটিনাম ও পিপলস পাটকলের কয়েকজন কর্মকর্তা মিল থেকে বের হলেও ক্রিসেন্ট জুট মিলের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। এদিকে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতার কথা বলেছেন ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী সাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিজেএমসি, পাটকল প্রকল্প প্রধান ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে প্রথম ধাপে বলা হয়েছে, পাটকল শ্রমিকদের সব মজুরি পরিশোধ করবে সরকার। আবার দ্বিতীয় ধাপে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেবে বিজেএমসি। তাহলে একই বকেয়া দুবার পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিজেএমসি কোনো নির্দেশনাও পাটকলগুলোতে দেয়নি। তিনি বলেন, পাটকলের শ্রমিকরা ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। এখানে চাকরিতে কোনো নিয়ম-নীতি নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২১ মে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধে আমাদের (বিজেএমসি) চেষ্টা করতে বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন মিলগুলো বন্ধ ছিল। সেখানে উৎপাদন নেই, আমাদের কাছেও কোনো টাকা নেই।’ তিনি বলেন, পাটকল কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কয়েকটি মিলে উত্তেজনা কিছুটা শিথিল হয়েছে। উল্লেখ্য, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মকর্তাদের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে ৫ মে থকে ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শ্রমিকরা। তবে চলতি সপ্তাহের মধ্যে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের আশ্বাসে ২১ মে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন।