ঢাকা ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




ফাঁকি ও অনিয়মে বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

বেনাপোল প্রতিনিধি;
রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি ও নিত্যনতুন নিয়ম চালু করায় চলতি অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। আমদানি বাণিজ্য কমে গিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে অনীহা প্রকাশ করায় সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার বাণিজ্যে গতি ফিরবে বন্দরে। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।

১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য যাত্রা। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার টন। কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে প্রায় দেড় লাখ টন। বর্তমানে বন্দরে ৪২টি পণ্যাগার, ৪টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ২১ মে পর্যন্ত ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।

আমদানিকারক ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অতীতের তুলনায় এত বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে যে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এছাড়া বৈধ আমদানি চালান কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করছেন। সেখানে ২-৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। সেই সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারতের সঙ্গে অল্প সময়ে দ্রুত এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করা যায় বিধায় সবাই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। বাণিজ্য বাড়াতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।’

আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যা আর অনিয়মে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এখনও সাধারণ পণ্যাগারে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বন্দরে সব ধরনের অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে। জায়গা সংকটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তারা নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ফাঁকি ও অনিয়মে বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস

আপডেট সময় : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯

বেনাপোল প্রতিনিধি;
রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি ও নিত্যনতুন নিয়ম চালু করায় চলতি অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। আমদানি বাণিজ্য কমে গিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে অনীহা প্রকাশ করায় সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার বাণিজ্যে গতি ফিরবে বন্দরে। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।

১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য যাত্রা। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার টন। কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে প্রায় দেড় লাখ টন। বর্তমানে বন্দরে ৪২টি পণ্যাগার, ৪টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ২১ মে পর্যন্ত ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।

আমদানিকারক ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অতীতের তুলনায় এত বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে যে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এছাড়া বৈধ আমদানি চালান কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করছেন। সেখানে ২-৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। সেই সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারতের সঙ্গে অল্প সময়ে দ্রুত এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করা যায় বিধায় সবাই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। বাণিজ্য বাড়াতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।’

আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যা আর অনিয়মে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এখনও সাধারণ পণ্যাগারে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বন্দরে সব ধরনের অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে। জায়গা সংকটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তারা নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু করেছেন।