প্রতীক বরাদ্দের দিনেই ছয় জেলায় নির্বাচনী সহিংসতা
- আপডেট সময় : ১২:০৬:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গতকাল। প্রতীক বরাদ্দের দিনেই পাঁচ জেলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোণা ও জামালপুরে এসব ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
অধিকাংশ ঘটনায় বিএনপি আওয়ামী লীগকে দায়ি করেছে। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এসব ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর:
কুমিল্লা: কুমিল্লা-৬ সদর আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আমিন উর রশীদ ইয়াছিনের পৃথক ১০টি মিছিলে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
হাজী ইয়াছিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সেলে লিখিতভাবে সোমবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কোতয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছে এ ধরণের কোনো অভিযোগ তারা পাননি।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরণের অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে পাল্টা অভিযোগ করেছে, প্রতিপক্ষের হামলায় তাদেরই এক কর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির অভিযোগ, কুমিল্লা-৬ সদর আসনের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে তাদের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা অন্তত ১০টি স্থানে গুলি ও ককটেল হামলা চালায়।
এ ঘটনায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের শোভাযাত্রা চলাকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করে। এ সময় গুলিতে যুবদল কর্মী মোখলেছ গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়।
নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডে কাজী ইকরাম, ১৩নং ওয়ার্ডে জাবেদ, ২০নং ওয়ার্ডে কাজী মালেক, ২২নং ওয়ার্ডে পলাশ আহত হন। নগরীর মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় শোভাযাত্রা চলাকালে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানসহ ১০জন আহত হয়।
আমড়াতলী ইউনিয়নের ৩টি স্থানে হামলা করা হয়। আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজারে শোভাযাত্রায় হামলা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়।
দক্ষিণ দূর্গাপুর ইউনিয়নের ধনপুর, বলরামপুর এলাকায় মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হামলা করা হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর জানান, বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়। বরং তাদের হামলায় কচুয়া এলাকার সানী নামে আমাদের এক কর্মী মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফের গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ পশুহাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় শরীফুজ্জমানের দুটি মাইক্রোবাসেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে দুই নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
বিএনপি জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় ফিরছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ। তাদের দাবি রাত ৯টার দিকে শরীফুজ্জামানের গাড়িবহর আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ পশুহাট এলাকায় পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তাদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় দুটি মাইক্রোবাস। এ সময় দ্রুতবেগে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
রাতে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ এই হামলাকে পরিকল্পিত দাবি করে হামলার জন্য তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি করেন। হামলায় তার সাথে থাকা যুবদল নেতা হাবলু ও মিশু আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকাতেও বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খাঁন বাবুর নির্বাচনী মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলা শহরের চার রাস্তার মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জ : সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল, সারটিয়া ও ধুকুরিয়া এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৫ নেতাকর্মী আহত হন।
হাইকোর্টের রায়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার খবরে তার নিজ এলাকা চক শিয়ালকোল এলজিইডি মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই মিছিলে হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এতে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চার্লি, বিএনপি কর্মী শফিকুল ইসলাম, রেজাউল কামরুল পান্নাসহ পাঁচজন আহত হন।
একই সময় উত্তর সারটিয়া ও ধুকুরিয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধে।
জামালপুর: জামালপুরের মেলান্দহে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে হজরত শাহ কামালের (র) মাজার জিয়ারত করতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরীসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
মেলান্দহ থানার উপপরিদর্শক মর্জিনা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাটোর : নাটোর-১ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল সন্ধ্যা পৌনে পাঁচটার দিকে কয়েকজন কর্মী নিয়ে মাইক্রোবাসে করে লালপুরের একটি জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি লালপুর ত্রিমোহনীর স্কুল গেটের কাছে পৌঁছালে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
হামলাকারীরা মনজুরুল ইসলাম বিমল ও তার কর্মীদের পিটিয়ে আহত করে। নির্বাচনী আক্রোশ থেকেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন আহতরা।
তবে একই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বকুল জানান, এ হামলায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। দলীয় কোন্দলের জের ধরেই এ হামলা হতে পারে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নেত্রকোণা: নেত্রকোণার দুর্গাপুরের মাকরাইল বাজারে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, আওয়ামীলীগ অফিস ভাঙচুর, হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করার কথা জানালেও দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান তাদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
ওসি জানান, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন ও পিটিয়ে আহতের আইনে মামলা তিনটি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী কিতাব আলী, রফিকুল ইসলাম ও শাহজাহান মিয়া।
সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা হয়। আহত তিনজনকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, মাকরাইল বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েক সমর্থকের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে এক পর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। এতে আওয়ামী লীগের তিনজন আহত হন।