ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালকের লাইসেন্স নেই!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯ ৯৭ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ রিপোর্ট ;

নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের ৫৯ শতাংশ চালকেরই লাইসেন্স নেই। আবার সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে মোটরসাইকেল।

প্রতিবছরই গড়ে দেড় লাখ নতুন মোটরসাইকেল সড়কে নামছে। এ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করতে চাইছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু সরকারি এই সংস্থার লাইসেন্স দেওয়ার সক্ষমতা নেই, পরীক্ষা প্রক্রিয়ায়ও গলদ আছে। ফলে মোটরসাইকেল এখন পরিবহন খাতে উভয় সংকটের জন্ম দিয়েছে।

বিআরটিএর হিসাব বলছে, গত মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩৯ লাখের মতো। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ২৫ লাখের বেশি। মোটরসাইকেলের লাইসেন্স আছে মাত্র সাড়ে ১০ লাখ। এ তথ্য অনুসারে দেশে প্রায় ১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন লাইসেন্সবিহীন চালকেরা।

বিআরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, একটি পরিবারে একটি মোটরসাইকেল থাকলে তা একাধিক সদস্য ব্যবহার করেন। সে হিসাবে মোটরসাইকেলের তুলনায় চালকের লাইসেন্স বেশি থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো, মোটরসাইকেলের চেয়ে বৈধ চালকের সংখ্যা অর্ধেকের কম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুসারে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে শীর্ষে বাস-মিনিবাস। এরপরই মোটরসাইকেলের অবস্থান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুসারে, সারা দেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান। এরপরই আছে মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল খাতকে উৎসাহ দিতে আমদানি বা সংযোজনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক সুবিধা দিয়েছে সরকার। বড় ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল সংযোজন ও আমদানি করছে। বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডগুলো যৌথ বিনিয়োগে এ দেশে কারখানা খুলেছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি, বছরে প্রায় ৫ লাখ মোটরসাইকেল সংযোজন ও উৎপাদন হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেল বিক্রি ও সরবরাহের আগে চালককে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে ১৩ মে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে মোটরসাইকেলের চালকের লাইসেন্স না থাকার তথ্য তুলে ধরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। আমদানিকারকেরাও তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

মোটরসাইকেলের আমদানিকারক, ডিলার ও বিক্রেতারা মনে করছেন, বিক্রির আগে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে গ্রাহকদের হয়রানি বাড়বে। দালালদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যেতে পারে।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা বাড়ানো এবং মোটরসাইকেল নামানো নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিআরটিএ মোটরসাইকেল বিক্রির আগে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে। কিন্তু এতে খুব বেশি লাভ হবে না। কারণ, লাইসেন্স আছে এমন ব্যক্তির নামে একাধিক মোটরসাইকেল বিক্রি হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা বাড়বে। এর চেয়ে বরং বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়িয়ে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এ ছাড়া মোটরগাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করে শুধু মোটরসাইকেলের ওপর কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে হোন্ডা বাংলাদেশের ফিন্যান্স বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিকে লাইসেন্স পেতে এক বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আবার লাইসেন্স সঠিক নাকি বেঠিক, সেটা যাচাই করার ব্যবস্থা নেই তাঁদের। মোটরসাইকেল আরোহীর নিরাপত্তা এবং চালকের সঠিক প্রশিক্ষণ তাঁরাও চান। বিআরটিএ চাইলে তাঁরা এ বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি আছেন।

মোটরসাইকেলের ঝুঁকি
স্বাধীনতার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল ৭ লাখ ৫৯ হাজার। গত এপ্রিল পর্যন্ত আট বছর চার মাসে বেড়েছে ১৮ লাখ ২৮ হাজার মোটরসাইকেল। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে প্রায় সোয়া দুই লাখ মোটরসাইকেল বেড়েছে। এই বৃদ্ধিকে মোটরসাইকেল সংযোজনকারী এবং আমদানিকারকেরা দেখছেন শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

গণমাধ্যমের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এআরআই যে বিশ্লেষণ করে, তা থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকায় ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৫টি দুর্ঘটনায় জড়িয়ে ছিল বাস-মিনিবাস। মোটরসাইকেল ছিল ১২ টিতে। ২০১৭ সালে ২৬৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকায়। এর মধ্যে বাস-মিনিবাস ১৪৫টি এবং মোটরসাইকেল ৪৮টি দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। গত বছর ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা হয় ২৮০ টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭০ টি। আর বাস-মিনিবাস দুর্ঘটনা ১৩৪ টি। অর্থাৎ ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে বাস-মিনিবাস। আর দ্বিতীয় বৃহত্তর দুর্ঘটনাপ্রবণ যান হচ্ছে মোটরসাইকেল।

প্রতিবছর গড়ে দেড় লাখ নতুন মোটরসাইকেল সড়কে নামছে
দুর্ঘটনার দিক থেকে মোটরসাইকেলের অবস্থান দ্বিতীয়
বিক্রির আগে চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার চিন্তা
মার্চ পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ২৫ লাখের বেশি
মোটরসাইকেলের লাইসেন্স আছে মাত্র সাড়ে ১০ লাখ

১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন লাইসেন্সহীন চালকেরা
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সমিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটরসাইকেল জড়িত ছিল। সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান এবং প্রায় ১৯ শতাংশ ঘটেছে বাস-মিনিবাসের কারণে।

লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি ধীর
চালকের লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে শিক্ষানবিশ (লার্নার) কার্ড করতে হয়। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে অন্তত তিন কার্যদিবস লেগে যায়। এরপর মূল লাইসেন্স পেতে হলে লিখিত ও ব্যবহারিক (ফিল্ড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়। ঢাকায় বিআরটিএর তিনটি কার্যালয় আছে। এই তিন কার্যালয়ের যেকোনো একটি থেকে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স গ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল পরীক্ষার তারিখ এক বছর পরে ঠিক করা হয়।

বর্তমানে শুধু ঢাকার মিরপুর কার্যালয়েই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষাধীন আছেন ৯২ হাজার ৫৩৫ জন। মূল পরীক্ষায় পাস করার পর টাকা জমা দেওয়া, ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান ও ছবি তোলা এবং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্ট হতে আরও কয়েক মাস লেগে যায়। তাই মানুষ দ্রুত লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দালালের পেছনে হাঁটে।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, লাইসেন্সের জন্য ঢাকায় সপ্তাহে পাঁচ দিন পরীক্ষা হয় উত্তরায়, জোয়ারসাহারা বিআরটিসির ডিপোতে এবং কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায়। এসব স্থানে একসঙ্গে ৫০ জনেরও বসার ব্যবস্থা নেই। গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ঢাকার বাইরে জেলা শহরে পরীক্ষার অবস্থা তো আরও খারাপ। যেনতেনভাবে পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, চার চাকার যানের চেয়ে দুই চাকার যানে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। এখন মোটরসাইকেল বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যুবক-তরুণদের একটা বড় অংশই মোটরসাইকেল আরোহী। তিনি বলেন, বিআরটিএ যে হারে মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিচ্ছে, সে হারে মানসম্মত পরীক্ষার মাধ্যমে লাইসেন্স দিতে পারছে না। এখন প্রশ্ন হলো, মোটরসাইকেলের বৃদ্ধি কি চলবেই নাকি তা নিরুৎসাহিত করা হবে—এ বিষয়ে বিআরটিএর কোনো নীতি নেই। ফলে একটা ঝুঁকির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, মোটরসাইকেলের ব্যাপক বৃদ্ধি সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এই খাতের শৃঙ্খলা আনার জন্য লাইসেন্সের ওপর জোর দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা-বৈঠক হবে। বিআরটিএর সক্ষমতার বিষয়ে তিনি বলেন, আরও কম সময়ে কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছে বিআরটিএ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালকের লাইসেন্স নেই!

আপডেট সময় : ১২:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯

সকালের সংবাদ রিপোর্ট ;

নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের ৫৯ শতাংশ চালকেরই লাইসেন্স নেই। আবার সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে মোটরসাইকেল।

প্রতিবছরই গড়ে দেড় লাখ নতুন মোটরসাইকেল সড়কে নামছে। এ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করতে চাইছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু সরকারি এই সংস্থার লাইসেন্স দেওয়ার সক্ষমতা নেই, পরীক্ষা প্রক্রিয়ায়ও গলদ আছে। ফলে মোটরসাইকেল এখন পরিবহন খাতে উভয় সংকটের জন্ম দিয়েছে।

বিআরটিএর হিসাব বলছে, গত মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩৯ লাখের মতো। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ২৫ লাখের বেশি। মোটরসাইকেলের লাইসেন্স আছে মাত্র সাড়ে ১০ লাখ। এ তথ্য অনুসারে দেশে প্রায় ১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন লাইসেন্সবিহীন চালকেরা।

বিআরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, একটি পরিবারে একটি মোটরসাইকেল থাকলে তা একাধিক সদস্য ব্যবহার করেন। সে হিসাবে মোটরসাইকেলের তুলনায় চালকের লাইসেন্স বেশি থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো, মোটরসাইকেলের চেয়ে বৈধ চালকের সংখ্যা অর্ধেকের কম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুসারে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে শীর্ষে বাস-মিনিবাস। এরপরই মোটরসাইকেলের অবস্থান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুসারে, সারা দেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান। এরপরই আছে মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল খাতকে উৎসাহ দিতে আমদানি বা সংযোজনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক সুবিধা দিয়েছে সরকার। বড় ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল সংযোজন ও আমদানি করছে। বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডগুলো যৌথ বিনিয়োগে এ দেশে কারখানা খুলেছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি, বছরে প্রায় ৫ লাখ মোটরসাইকেল সংযোজন ও উৎপাদন হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেল বিক্রি ও সরবরাহের আগে চালককে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে ১৩ মে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে মোটরসাইকেলের চালকের লাইসেন্স না থাকার তথ্য তুলে ধরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। আমদানিকারকেরাও তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

মোটরসাইকেলের আমদানিকারক, ডিলার ও বিক্রেতারা মনে করছেন, বিক্রির আগে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে গ্রাহকদের হয়রানি বাড়বে। দালালদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যেতে পারে।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা বাড়ানো এবং মোটরসাইকেল নামানো নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিআরটিএ মোটরসাইকেল বিক্রির আগে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে। কিন্তু এতে খুব বেশি লাভ হবে না। কারণ, লাইসেন্স আছে এমন ব্যক্তির নামে একাধিক মোটরসাইকেল বিক্রি হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা বাড়বে। এর চেয়ে বরং বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়িয়ে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এ ছাড়া মোটরগাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করে শুধু মোটরসাইকেলের ওপর কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে হোন্ডা বাংলাদেশের ফিন্যান্স বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিকে লাইসেন্স পেতে এক বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আবার লাইসেন্স সঠিক নাকি বেঠিক, সেটা যাচাই করার ব্যবস্থা নেই তাঁদের। মোটরসাইকেল আরোহীর নিরাপত্তা এবং চালকের সঠিক প্রশিক্ষণ তাঁরাও চান। বিআরটিএ চাইলে তাঁরা এ বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি আছেন।

মোটরসাইকেলের ঝুঁকি
স্বাধীনতার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল ৭ লাখ ৫৯ হাজার। গত এপ্রিল পর্যন্ত আট বছর চার মাসে বেড়েছে ১৮ লাখ ২৮ হাজার মোটরসাইকেল। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে প্রায় সোয়া দুই লাখ মোটরসাইকেল বেড়েছে। এই বৃদ্ধিকে মোটরসাইকেল সংযোজনকারী এবং আমদানিকারকেরা দেখছেন শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

গণমাধ্যমের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এআরআই যে বিশ্লেষণ করে, তা থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকায় ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৫টি দুর্ঘটনায় জড়িয়ে ছিল বাস-মিনিবাস। মোটরসাইকেল ছিল ১২ টিতে। ২০১৭ সালে ২৬৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকায়। এর মধ্যে বাস-মিনিবাস ১৪৫টি এবং মোটরসাইকেল ৪৮টি দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। গত বছর ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা হয় ২৮০ টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭০ টি। আর বাস-মিনিবাস দুর্ঘটনা ১৩৪ টি। অর্থাৎ ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে বাস-মিনিবাস। আর দ্বিতীয় বৃহত্তর দুর্ঘটনাপ্রবণ যান হচ্ছে মোটরসাইকেল।

প্রতিবছর গড়ে দেড় লাখ নতুন মোটরসাইকেল সড়কে নামছে
দুর্ঘটনার দিক থেকে মোটরসাইকেলের অবস্থান দ্বিতীয়
বিক্রির আগে চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার চিন্তা
মার্চ পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ২৫ লাখের বেশি
মোটরসাইকেলের লাইসেন্স আছে মাত্র সাড়ে ১০ লাখ

১৫ লাখ মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন লাইসেন্সহীন চালকেরা
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সমিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটরসাইকেল জড়িত ছিল। সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান এবং প্রায় ১৯ শতাংশ ঘটেছে বাস-মিনিবাসের কারণে।

লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি ধীর
চালকের লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে শিক্ষানবিশ (লার্নার) কার্ড করতে হয়। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে অন্তত তিন কার্যদিবস লেগে যায়। এরপর মূল লাইসেন্স পেতে হলে লিখিত ও ব্যবহারিক (ফিল্ড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়। ঢাকায় বিআরটিএর তিনটি কার্যালয় আছে। এই তিন কার্যালয়ের যেকোনো একটি থেকে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স গ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল পরীক্ষার তারিখ এক বছর পরে ঠিক করা হয়।

বর্তমানে শুধু ঢাকার মিরপুর কার্যালয়েই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষাধীন আছেন ৯২ হাজার ৫৩৫ জন। মূল পরীক্ষায় পাস করার পর টাকা জমা দেওয়া, ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান ও ছবি তোলা এবং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্ট হতে আরও কয়েক মাস লেগে যায়। তাই মানুষ দ্রুত লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দালালের পেছনে হাঁটে।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, লাইসেন্সের জন্য ঢাকায় সপ্তাহে পাঁচ দিন পরীক্ষা হয় উত্তরায়, জোয়ারসাহারা বিআরটিসির ডিপোতে এবং কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায়। এসব স্থানে একসঙ্গে ৫০ জনেরও বসার ব্যবস্থা নেই। গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ঢাকার বাইরে জেলা শহরে পরীক্ষার অবস্থা তো আরও খারাপ। যেনতেনভাবে পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, চার চাকার যানের চেয়ে দুই চাকার যানে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। এখন মোটরসাইকেল বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যুবক-তরুণদের একটা বড় অংশই মোটরসাইকেল আরোহী। তিনি বলেন, বিআরটিএ যে হারে মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিচ্ছে, সে হারে মানসম্মত পরীক্ষার মাধ্যমে লাইসেন্স দিতে পারছে না। এখন প্রশ্ন হলো, মোটরসাইকেলের বৃদ্ধি কি চলবেই নাকি তা নিরুৎসাহিত করা হবে—এ বিষয়ে বিআরটিএর কোনো নীতি নেই। ফলে একটা ঝুঁকির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, মোটরসাইকেলের ব্যাপক বৃদ্ধি সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এই খাতের শৃঙ্খলা আনার জন্য লাইসেন্সের ওপর জোর দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা-বৈঠক হবে। বিআরটিএর সক্ষমতার বিষয়ে তিনি বলেন, আরও কম সময়ে কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছে বিআরটিএ।