ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




ঈদকে উপলক্ষে ফিটনেসহীন লঞ্চ জোড়াতালির মহাযজ্ঞ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯ ১১২ বার পড়া হয়েছে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চরকালিগঞ্জ এলাকা। চারদিকে মহাসমারোহে চলছে ভাঙা আর মরিচা ধরা লঞ্চের মেরামতের কাজ। কেউ ব্যস্ত লঞ্চের বডি নির্মাণের কাজে, কেউবা পুরাতন পাটাতন সরিয়ে নতুন পাঠাতনে ঝালাইয়ের কাজে। আবার কেউ ব্যস্ত লঞ্চের রং করার কাজে। আর এসবের তদারকি করছেন ডকইয়ার্ডের লোকজন। ঠিক এমন চিত্র দেখা গেল কেরানীগঞ্জের অন্তত দশটি ডকইয়ার্ডে।

আসছে ঈদ। আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। নদী পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ। এ সুযোগে মেরামত ও রং করে নামানো হচ্ছে অনেক পুরনো লঞ্চ। দেয়া হচ্ছে জোড়াতালি। এসব ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর লঞ্চের জোড়াতালিতে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। তবে নদী পারাপারের মাধ্যম যেহেতু এই লঞ্চ, তাই সাধারণ যাত্রীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করেই প্রতিবারের নেয় এবারও এসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াতে বাধ্য হবেন। সবমিলিয়ে এ বছরও নৌপথে ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা চরকালিগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে টুংটাং শব্দে চলছে যাত্রীবাহী ও বড় কার্গোবাহী লঞ্চগুলোর মেরামতের কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি শ্রমিকরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ওয়েল্ডিং আবার কেউ রং মাখাতে ব্যস্ত।

সদরঘাট এলাকার অন্তত ১০টি ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ও গ্যারেজে পুরনো নৌযান ও বাস মেরামতের ধুম চলছে। কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মিরেরবাগ পর্যন্ত ৩৭টির মতো ডকইয়ার্ডেই দেখা গেল কোনো না কোনো পুরনো লঞ্চে রং লাগানো ও মেরামতের কাজ চলছে। ফিটনেসহীন লঞ্চগুলোতে জোড়া দেয়া হচ্ছে লঞ্চের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন অংশ। মেঝে কিংবা কার্নিশে লাগানো হচ্ছে লোহার পাত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এমনকি বুড়িগঙ্গার পাড়ে কেরানীগঞ্জের তেলঘাট ও কেরোসিনপট্টি অংশের ইয়ার্ডে বেশ কয়েকটি লঞ্চের নিচের অংশও মেরামত করতে দেখা গেছে।

ডকইয়ার্ডে লঞ্চ মেরামতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও লঞ্চ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে ফিটনেস লাইসেন্স নিতে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চগুলো নামমাত্র সংস্কার করা হয়। এখন সংস্কারের কাজ চলছে।

ভাসমান ডকে সংস্কার করতে দেখা গেল প্রিন্স রাসেল-৩। লঞ্চটির সুপারভাইজার মাহিদ আলম জানান, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চটি সংস্কারের কাজ চলছে। লঞ্চের যেসব স্থানে ভাঙা বা ক্ষয় হয়ে গেছে সেগুলো দেখে দেখে মেরামত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মেরামত করা না হলে ঈদ উপলক্ষে লঞ্চটি আনফিট দেখানো হলে আর চালানো যাবে না। বছরের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হলো দুই ঈদ। তাই প্রতিটি ঈদের আগে লঞ্চের ফিটনেস নিশ্চিত করতে মেরামত জরুরি হয়ে পড়ে।

একইভাবে এমভি জাহিদ-৭, এমভি প্রিন্স অব রাসেল-২, মেসার্স জাহিদ শিপিং লাইন্স, এমভি জামাল-১, এমভি ঝান্ডা-২, মেসার্স রাজু অ্যান্ড ব্রাদার্স, মশিরণ খান-১, এমভি শরিফউদ্দিন-১, হাসান হোসেন-২-সহ প্রায় অর্ধশতাধিক লঞ্চ সদরঘাট এবং তেলঘাট এলাকা জুড়ে মেরামত করতে দেখা গেছে।

কেরানীগঞ্জের চরকালীগঞ্জ তেলঘাট, খেজুরবাগ, হাসনাবাদ এলাকায় ডকইয়ার্ডে গিয়ে অন্তত ৫০টির বেশি লঞ্চ মেরামত ও রং করার কাজ চলতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেলঘাট এলাকার ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি বলেন, সপ্তাহ খানেক ধরে এসব লঞ্চের মেরামতের কাজ চলছে। এর মধ্যে বড় ধরনের ত্রুটিও ছিল অনেক লঞ্চের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডকইয়ার্ড মালিক বললেন, এ রকম লক্কর-জক্কর ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চের সংখ্যা হবে শতাধিক।

তেলঘাটের পারজোয়ার ডকইয়ার্ডের মালিক সদরখান জানান, আশপাশের যেসব ডকইয়ার্ডে লঞ্চ তৈরি ও মেরামত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈধভাবে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না। ফলে যাদের বৈধ্যতা আছে তাদেরকেও মাঝে মাঝে তাদের অপকর্মের ভাগ নিতে হয়।

বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির পর এসব ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উচ্ছেদ অভিযানও হয়নি। এদিকে ডকইয়ার্ডগুলো নদীদূষণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের মতে, নদীতে চলাচলকারী শতকরা ৫০ ভাগ লঞ্চেরই কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ঈদকে উপলক্ষে ফিটনেসহীন লঞ্চ জোড়াতালির মহাযজ্ঞ

আপডেট সময় : ০৯:৫১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চরকালিগঞ্জ এলাকা। চারদিকে মহাসমারোহে চলছে ভাঙা আর মরিচা ধরা লঞ্চের মেরামতের কাজ। কেউ ব্যস্ত লঞ্চের বডি নির্মাণের কাজে, কেউবা পুরাতন পাটাতন সরিয়ে নতুন পাঠাতনে ঝালাইয়ের কাজে। আবার কেউ ব্যস্ত লঞ্চের রং করার কাজে। আর এসবের তদারকি করছেন ডকইয়ার্ডের লোকজন। ঠিক এমন চিত্র দেখা গেল কেরানীগঞ্জের অন্তত দশটি ডকইয়ার্ডে।

আসছে ঈদ। আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। নদী পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ। এ সুযোগে মেরামত ও রং করে নামানো হচ্ছে অনেক পুরনো লঞ্চ। দেয়া হচ্ছে জোড়াতালি। এসব ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর লঞ্চের জোড়াতালিতে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। তবে নদী পারাপারের মাধ্যম যেহেতু এই লঞ্চ, তাই সাধারণ যাত্রীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করেই প্রতিবারের নেয় এবারও এসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াতে বাধ্য হবেন। সবমিলিয়ে এ বছরও নৌপথে ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা চরকালিগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে টুংটাং শব্দে চলছে যাত্রীবাহী ও বড় কার্গোবাহী লঞ্চগুলোর মেরামতের কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি শ্রমিকরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ওয়েল্ডিং আবার কেউ রং মাখাতে ব্যস্ত।

সদরঘাট এলাকার অন্তত ১০টি ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ও গ্যারেজে পুরনো নৌযান ও বাস মেরামতের ধুম চলছে। কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মিরেরবাগ পর্যন্ত ৩৭টির মতো ডকইয়ার্ডেই দেখা গেল কোনো না কোনো পুরনো লঞ্চে রং লাগানো ও মেরামতের কাজ চলছে। ফিটনেসহীন লঞ্চগুলোতে জোড়া দেয়া হচ্ছে লঞ্চের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন অংশ। মেঝে কিংবা কার্নিশে লাগানো হচ্ছে লোহার পাত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এমনকি বুড়িগঙ্গার পাড়ে কেরানীগঞ্জের তেলঘাট ও কেরোসিনপট্টি অংশের ইয়ার্ডে বেশ কয়েকটি লঞ্চের নিচের অংশও মেরামত করতে দেখা গেছে।

ডকইয়ার্ডে লঞ্চ মেরামতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও লঞ্চ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে ফিটনেস লাইসেন্স নিতে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চগুলো নামমাত্র সংস্কার করা হয়। এখন সংস্কারের কাজ চলছে।

ভাসমান ডকে সংস্কার করতে দেখা গেল প্রিন্স রাসেল-৩। লঞ্চটির সুপারভাইজার মাহিদ আলম জানান, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চটি সংস্কারের কাজ চলছে। লঞ্চের যেসব স্থানে ভাঙা বা ক্ষয় হয়ে গেছে সেগুলো দেখে দেখে মেরামত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মেরামত করা না হলে ঈদ উপলক্ষে লঞ্চটি আনফিট দেখানো হলে আর চালানো যাবে না। বছরের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হলো দুই ঈদ। তাই প্রতিটি ঈদের আগে লঞ্চের ফিটনেস নিশ্চিত করতে মেরামত জরুরি হয়ে পড়ে।

একইভাবে এমভি জাহিদ-৭, এমভি প্রিন্স অব রাসেল-২, মেসার্স জাহিদ শিপিং লাইন্স, এমভি জামাল-১, এমভি ঝান্ডা-২, মেসার্স রাজু অ্যান্ড ব্রাদার্স, মশিরণ খান-১, এমভি শরিফউদ্দিন-১, হাসান হোসেন-২-সহ প্রায় অর্ধশতাধিক লঞ্চ সদরঘাট এবং তেলঘাট এলাকা জুড়ে মেরামত করতে দেখা গেছে।

কেরানীগঞ্জের চরকালীগঞ্জ তেলঘাট, খেজুরবাগ, হাসনাবাদ এলাকায় ডকইয়ার্ডে গিয়ে অন্তত ৫০টির বেশি লঞ্চ মেরামত ও রং করার কাজ চলতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেলঘাট এলাকার ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি বলেন, সপ্তাহ খানেক ধরে এসব লঞ্চের মেরামতের কাজ চলছে। এর মধ্যে বড় ধরনের ত্রুটিও ছিল অনেক লঞ্চের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডকইয়ার্ড মালিক বললেন, এ রকম লক্কর-জক্কর ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চের সংখ্যা হবে শতাধিক।

তেলঘাটের পারজোয়ার ডকইয়ার্ডের মালিক সদরখান জানান, আশপাশের যেসব ডকইয়ার্ডে লঞ্চ তৈরি ও মেরামত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈধভাবে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না। ফলে যাদের বৈধ্যতা আছে তাদেরকেও মাঝে মাঝে তাদের অপকর্মের ভাগ নিতে হয়।

বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির পর এসব ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উচ্ছেদ অভিযানও হয়নি। এদিকে ডকইয়ার্ডগুলো নদীদূষণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের মতে, নদীতে চলাচলকারী শতকরা ৫০ ভাগ লঞ্চেরই কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই।