ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ছড়ানো গুজবে সয়লাব Logo সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে Logo জবিতে আজীবন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo শাবিতে হল প্রশাসনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নোটিসে জোর পূর্বক সাইন আদায় Logo এবার সামনে আসছে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের মারধরের আরো ঘটনা Logo আবাসিক হল ছাড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা Logo নিরাপত্তার স্বার্থে শাবি শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড সাথে রাখার আহবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের Logo জনস্বাস্থ্যের প্রধান সাধুর যত অসাধু কর্ম: দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ! Logo বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখা যুগ্ম পরিচালক আলমগীরের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য  Logo রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটনকে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে নিন্দা ও প্রতিবাদ




ঋণখেলাপিরা কি ভালো হয়ে যাবেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;
প্রথমেই বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ দিই ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সার্কুলারটি জারি করতে পেরেছে বলে। সার্কুলারের বিষয়বস্তু তৈরি হয়েছে এক পাঁচ তারকা হোটেলে, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ছিল না। তারপর সেটি লেখা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এরপর সেটি গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। জানতে পারলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খানিকটা ঘষামাজা করেছে বটে, তবে সেটাও কম কিসে।

এবার অভিনন্দন জানাই বছরের পর বছর ধরে ঋণখেলাপির অবস্থান যাঁরা ধরে রেখেছেন, তাঁদের। ধৈর্যের পুরস্কার তাঁরা পেয়েছেন। সরকার বিশাল এক ছাড় দিয়েছে। কোনো তিরস্কার না, কোনো শাস্তিও না, বরং অনেক বড় পুরস্কার। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ, ২ শতাংশ এককালীন কিস্তি, আর বাকি টাকা ১০ বছরে পরিশোধ। কেবল তা-ই নয়, তাঁরা নতুন ঋণও পাবেন।

ভালো ঋণগ্রহীতারাও ধন্যবাদ পাবেন। সমাজে তাঁরাও যে আছেন, সরকার এবার অন্তত স্বীকৃতি দিল। নইলে বছরের পর বছর ধরে ঋণখেলাপিরা যেভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, মনে হতো তাঁদের অস্তিত্বই একমাত্র সত্য। নতুন নীতিমালায় ভালো গ্রহীতা ১০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাবেন।

এ ক্ষেত্রে সরকারকেও ধন্যবাদ দিতে হয়। জানা ছিল, কেবল ঋণখেলাপিরাই বড় পুরস্কার পাবেন। যেমন আগেও পেয়েছেন। কিন্তু যতবার ঋণখেলাপিরা পুরস্কৃত হয়েছেন, ততবার সরকারের তীব্র সমালোচনা হয়েছে। কেননা, এতে নিয়মিত ও ভালো গ্রাহকেরা ঋণ ফেরত দিতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। এমনকি তা অনৈতিকও। কিন্তু সরকার সব সময় কালোটাকার মালিকদের অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মতো করে ঋণখেলাপিদের নিয়মিতভাবে সুযোগ দিয়ে আসছে। এবারই সম্ভবত প্রথম ভালো গ্রহীতাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিল। তবে কোনো সংশয় নেই যে ঋণখেলাপিদের বিশাল ছাড় দেওয়ার সমালোচনা থেকে খানিকটা রেহাই পেতেই ভালো গ্রহীতাদের প্রতি এই আলাদা নজর। তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ।

পুঁজি খাতের নিয়ন্ত্রকেরাও বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে বাজার মন্দা। মাঝেমধ্যে জোর করে সূচক ওঠানো ছাড়া ভালো কোনো সংবাদ অনেক দিন ধরেই শেয়ারবাজারে নেই। বাজারে অর্থের সংকট আছে, তার চেয়েও বেশি আছে আস্থার সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ঋণ পুনঃ তফসিল বিষয় ছাড়াও পুঁজিবাজার নিয়েও আলাদা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাড়ানোর উদ্যোগের কথা রয়েছে। আশা করা যায়, এখন শেয়ারবাজারের তারল্যসংকট খানিকটা কমবে, বাজার চাঙা হবে। তবে এ থেকে আস্থার সংকট কতটা কমবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ধন্যবাদের পালা শেষ। এবার আশাবাদের পালা। আশা করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, ঋণখেলাপিরা সবাই ভালো হয়ে যাবেন। তাঁরা এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ঋণ শোধ করবেন, ঋণের অর্থে ভালো উদ্যোগে বিনিয়োগ ঘটবে, তাতে কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে। এতে বিনিয়োগের সংকট যেমন কাটবে, তেমনি অর্থ পাচারও কমবে। ঋণ নিয়ে কেউ আর অন্য খাতে নিয়ে যাবেন না।

এবার শঙ্কার কথা বলি। খুব বেশি পেছনে যেতে হবে না। ২০১৫ সালেই দেশের বড় ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে—এমন ১১ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। শর্ত ছিল, এরপর তাঁরা নিয়মিত কিস্তি দিয়ে ভালো হয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাত্র দুটি কোম্পানি ছাড়া আর কেউই কিস্তির টাকা পরিশোধ করেননি। আরও দুঃখজনক হলো, নতুন করে যে ছাড় দেওয়া হলো, এর পেছনেও আছেন পুনর্গঠন–সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীদেরই কেউ কেউ। বিশেষ সুবিধা পেয়ে ঋণখেলাপিরা ভালো হয়ে গেছেন, এমন উদাহরণ বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। সুতরাং, আবার যে একই ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী।

বাংলাদেশে ভালো গ্রাহক হওয়ার চেয়ে খারাপ গ্রাহক হলে লাভ বেশি। ঋণের টাকা পাচার বা অন্য কাজে ব্যবহার করেও বছরের পর বছর আয়েশে কাটানো যায়। নতুন নীতিমালা তাঁদের এই আয়েশ আরও বাড়াবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমনকি সরকার অর্থনীতি বা ব্যবসার স্বার্থে নাকি কিছু ব্যবসায়ীর জন্য নতুন নীতিমালাটি জারি করেছে, সেই সন্দেহও থেকে গেল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ঋণখেলাপিরা কি ভালো হয়ে যাবেন

আপডেট সময় : ১২:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক;
প্রথমেই বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ দিই ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সার্কুলারটি জারি করতে পেরেছে বলে। সার্কুলারের বিষয়বস্তু তৈরি হয়েছে এক পাঁচ তারকা হোটেলে, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ছিল না। তারপর সেটি লেখা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এরপর সেটি গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। জানতে পারলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খানিকটা ঘষামাজা করেছে বটে, তবে সেটাও কম কিসে।

এবার অভিনন্দন জানাই বছরের পর বছর ধরে ঋণখেলাপির অবস্থান যাঁরা ধরে রেখেছেন, তাঁদের। ধৈর্যের পুরস্কার তাঁরা পেয়েছেন। সরকার বিশাল এক ছাড় দিয়েছে। কোনো তিরস্কার না, কোনো শাস্তিও না, বরং অনেক বড় পুরস্কার। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ, ২ শতাংশ এককালীন কিস্তি, আর বাকি টাকা ১০ বছরে পরিশোধ। কেবল তা-ই নয়, তাঁরা নতুন ঋণও পাবেন।

ভালো ঋণগ্রহীতারাও ধন্যবাদ পাবেন। সমাজে তাঁরাও যে আছেন, সরকার এবার অন্তত স্বীকৃতি দিল। নইলে বছরের পর বছর ধরে ঋণখেলাপিরা যেভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, মনে হতো তাঁদের অস্তিত্বই একমাত্র সত্য। নতুন নীতিমালায় ভালো গ্রহীতা ১০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাবেন।

এ ক্ষেত্রে সরকারকেও ধন্যবাদ দিতে হয়। জানা ছিল, কেবল ঋণখেলাপিরাই বড় পুরস্কার পাবেন। যেমন আগেও পেয়েছেন। কিন্তু যতবার ঋণখেলাপিরা পুরস্কৃত হয়েছেন, ততবার সরকারের তীব্র সমালোচনা হয়েছে। কেননা, এতে নিয়মিত ও ভালো গ্রাহকেরা ঋণ ফেরত দিতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। এমনকি তা অনৈতিকও। কিন্তু সরকার সব সময় কালোটাকার মালিকদের অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মতো করে ঋণখেলাপিদের নিয়মিতভাবে সুযোগ দিয়ে আসছে। এবারই সম্ভবত প্রথম ভালো গ্রহীতাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিল। তবে কোনো সংশয় নেই যে ঋণখেলাপিদের বিশাল ছাড় দেওয়ার সমালোচনা থেকে খানিকটা রেহাই পেতেই ভালো গ্রহীতাদের প্রতি এই আলাদা নজর। তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ।

পুঁজি খাতের নিয়ন্ত্রকেরাও বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে বাজার মন্দা। মাঝেমধ্যে জোর করে সূচক ওঠানো ছাড়া ভালো কোনো সংবাদ অনেক দিন ধরেই শেয়ারবাজারে নেই। বাজারে অর্থের সংকট আছে, তার চেয়েও বেশি আছে আস্থার সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ঋণ পুনঃ তফসিল বিষয় ছাড়াও পুঁজিবাজার নিয়েও আলাদা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাড়ানোর উদ্যোগের কথা রয়েছে। আশা করা যায়, এখন শেয়ারবাজারের তারল্যসংকট খানিকটা কমবে, বাজার চাঙা হবে। তবে এ থেকে আস্থার সংকট কতটা কমবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ধন্যবাদের পালা শেষ। এবার আশাবাদের পালা। আশা করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, ঋণখেলাপিরা সবাই ভালো হয়ে যাবেন। তাঁরা এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ঋণ শোধ করবেন, ঋণের অর্থে ভালো উদ্যোগে বিনিয়োগ ঘটবে, তাতে কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে। এতে বিনিয়োগের সংকট যেমন কাটবে, তেমনি অর্থ পাচারও কমবে। ঋণ নিয়ে কেউ আর অন্য খাতে নিয়ে যাবেন না।

এবার শঙ্কার কথা বলি। খুব বেশি পেছনে যেতে হবে না। ২০১৫ সালেই দেশের বড় ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে—এমন ১১ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। শর্ত ছিল, এরপর তাঁরা নিয়মিত কিস্তি দিয়ে ভালো হয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাত্র দুটি কোম্পানি ছাড়া আর কেউই কিস্তির টাকা পরিশোধ করেননি। আরও দুঃখজনক হলো, নতুন করে যে ছাড় দেওয়া হলো, এর পেছনেও আছেন পুনর্গঠন–সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীদেরই কেউ কেউ। বিশেষ সুবিধা পেয়ে ঋণখেলাপিরা ভালো হয়ে গেছেন, এমন উদাহরণ বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। সুতরাং, আবার যে একই ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী।

বাংলাদেশে ভালো গ্রাহক হওয়ার চেয়ে খারাপ গ্রাহক হলে লাভ বেশি। ঋণের টাকা পাচার বা অন্য কাজে ব্যবহার করেও বছরের পর বছর আয়েশে কাটানো যায়। নতুন নীতিমালা তাঁদের এই আয়েশ আরও বাড়াবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমনকি সরকার অর্থনীতি বা ব্যবসার স্বার্থে নাকি কিছু ব্যবসায়ীর জন্য নতুন নীতিমালাটি জারি করেছে, সেই সন্দেহও থেকে গেল।