নিজস্ব প্রতিবেদক;
চিরস্থায়ীভাবে শায়িত হওয়ার জন্য জায়গা খুঁজছেন এক সময়ের প্রতাপশালী সেনাশাসক নব্বই বছর বয়সী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরিবারের পক্ষ থেকে রংপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত করার প্রস্তাব করলে তাতে সায় দেননি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। রাজধানীতে শায়িত হওয়ার বাসনা জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এই নেতার। এজন্য রাজধানীতে একবিঘা জায়গা কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ স্থায়ী কমপ্লেক্স। এরকম একটি জায়গা পছন্দ করার জন্য পূর্বাচলে এইচ এম এরশাদ অতি সম্প্রতি দুইবার জমি দেখেছেন। কিন্তু জায়গা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়াও বনানী কবরস্থান, সামরিক কবরস্থান ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় শায়িত হওয়ার কথা রয়েছে আলোচিত এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের। জানতে চাইলে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে রংপুরে সমাহিত করার ইচ্ছা থাকলেও রাজধানী ঢাকাতেই সমাহিত হওয়ার বাসনা এইচ এম এরশাদের। প্রাইভেট জমি কিনে বড় পরিসরে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে এইচ এম এরশাদের। এর জন্য একবিঘা জায়গার প্রয়োজন। কবরের পাশে থাকবে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কমপ্লেক্স। ভাই এইচ এম এরশাদসহ আমি রাজধানীর পূর্বাচলে দুটি জায়গা দেখেছি। কিন্তু এমন একটি কবরস্থান ভবিষ্যতে মেনটেইন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টি ভাইকে অবহিত করলে তিনিও এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেননি। এ ছাড়াও আমাদের বনানী কবরস্থানে জায়গা কিনে সমাহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান হিসেবে সামরিক কবরস্থানে এইচ এম এরশাদ চাইলেই সমাহিত হতে পারেন। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আটজনের কবরস্থান রয়েছে। আমরাও স্পিকারের কাছে অনুমতি চাইব। অনুমতি পেলে সংসদ ভবন এলাকাতেও কবর হতে পারে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির। এই অপশনগুলো রয়েছে। তবে কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জানা যায়, জাতীয় সংসদ ভবনের চত্বর থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ আটজনের কবর সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন করে আর সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন এরশাদ ঘনিষ্ঠরা। ভবিষ্যতে বিভিন্ন দিবসে এইচ এম এরশাদের কবরে ভিড় জমানো যাবে না এম আশঙ্কায় সামরিক কবরস্থানেও যেতে চান না। এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, এইচ এম এরশাদের দীর্ঘদিনের বাসনা রাজধানীতে একটু নিরিবিলি জায়গায় শায়িত হবেন। যেখানে কবরের পাশেই থাকবে মসজিদ। মাদ্রাসায় নিয়মিত আল কোরআনের বাণী উচ্চারিত হবে। প্রচুর গাছ-পালা থাকবে। পার্টির নেতা-কর্মীরা যেন নিয়মিত যেতে পারেন সেজন্য নির্মাণ করা হবে একটি কমপ্লেক্স। এরকম জায়গা রাজধানীতে দেখেছেন এইচ এম এরশাদ। যার মূল্য ১০ কোটি টাকা। এমন একটি প্রকল্পের পরবর্তী ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হবে সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসা হচ্ছে। রংপুরেও যেতে চান না এরশাদ। সবমিলিয়ে প্রভাবশালী প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জানা যায়, আগামী সপ্তাহে আবারও উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন তিনি। ছোটভাই জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় সঙ্গে যাবেন। দলের এই শীর্ষ নেতারা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ৩০ মে রাজধানীর ওয়েস্টিনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারে অংশ নেবেন। এর আগে ২৭ তারিখে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ইফতারে অংশ নেবেন। এইচ এম এরশাদ অসুস্থ থাকায় ইফতার পার্টিতে নেতৃত্ব দেবেন পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান জিএম কাদের। অন্য বছরগুলোতে রমজানের প্রথম রোজা থেকে ইফতার পার্টিতে ব্যস্ত থাকতেন এইচ এম এরশাদ। এরশাদের অসুস্থতার কারণে রহমতের দশ রোজায় এবার দলের কোনো ইফতার পার্টি নেই জাতীয় পার্টির। তবে, বরাবরের মতো প্রথম রোজা এতিমদের সঙ্গে করেছেন এরশাদ। গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এইচ এম এরশাদের প্রায় সারা দিনই বাসায় কাটে। শরীরটা খারাপ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যান। কাজের লোকেরা পরিচর্যা করেন। আমরা প্রায়ই দেখা করতে যাই।