ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




খুলনায় বেড়েই চলেছে রোহিঙ্গা ও ছেলে ধরা আতঙ্ক!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা;
খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা আর ছেলে ধরা আতঙ্ক দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো স্থানে ছেলে ধরা (শিশু পাচারকারী) ও রোহিঙ্গা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনি বা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন বয়স্ক ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীরা। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে ডুমুরিয়া উপজেলায় ষাট্টোর্ধ এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। থানা পুলিশের তদন্তে এমনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১১ মে ডুমুরিয়ার মাগুরখালী ইউনিয়নে ছেলে ধরা রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনিতে ষাট্টোর্ধ এক বৃদ্ধ নিহত হন। এ ঘটনায় মেহেদী মোড়ল (৩০) ও মধুসুদন মন্ডলকে (২৯) গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া একটি হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত এ দু’যুবক।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডুমুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) পুষ্পেন্দু দেবনাথ জানান, নিহত ব্যক্তির বয়স ৬০-৬৫ বছর হতে পারে। তিনি রোহিঙ্গা কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে। তার পরিচয় জানতে আঙ্গুলের ছাপ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনগণ। এর আগে মঙ্গলবার দিঘলিয়ার দেয়াড়া কহিনুর স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়ে পাখী বেগম (৫০) ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে হীরা (২৫) লাঞ্ছনার শিকার হন। এলাকাবাসী তাদেরকে ধরে টেনে হিঁচড়ে দিঘলিয়া থানায় সোপর্দ করেন। পুলিশ তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার মৃত কাউয়ুম শেখের স্ত্রী পাখী বেগম ও তার মেয়ে হীরা ভিক্ষা করতে দিঘলিয়ায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে চাল ও খুচরা পয়সা পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তাদের স্বজনরা এসে থানায় ভিক্ষুক মা-মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

দিঘলিয়া থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক খান এমরান হোসেন জানান, গ্রামের মানুষ নতুন কোনো মুখ দেখলে রোহিঙ্গা মনে করছেন। গতকালও এই অবস্থায় পড়েছে ফুলতলা এলাকা থেকে আসা দু’জন ভিক্ষুক নারী। তাদেরকে থানায় এনে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে তারা নির্দোষ। পরে তাদের স্বজনদের ডেকে এনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার খুলনা মহানগরীর যোগীপোল ভাঙ্গা মসজিদের সামনে থেকে স্থানীয় জনতা রোহিঙ্গা সন্দেহে মো. ফরিদ নামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। একই দিন সকাল ১০টায় যাব্দিপুর বৌ-বাজার এলাকা থেকে রাশিদা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করেন স্থানীয়রা। বেলা ১২টায় মীরেরডাঙ্গা পেট্রোলিয়ামের সামনে থেকে দেবদাস (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে রোহিঙ্গা সন্দেহে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এর আগে জেলার দাকোপ উপজেলায় ৬ জোড়া নারী-পুরুষকে আটক করে জনগণ। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ১২ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। তাদের সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

নগরীর খানজাহান আলী থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা রোহিঙ্গা সন্দেহে ৩ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তারা বাংলাদেশের মানুষ। এছাড়া রূপসা উপজেলায় মানসিক রোগে আক্রান্ত এক যুবককে ধরে থানায় সোপর্দ করে এলাকাবাসী। এ সময় তাকে গণপিটুনি দেয়া হয় বলেও সূত্র জানায়।

এছাড়াও খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, ফুলতলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ মহানগরের বিভিন্ন অলি-গলিতে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন সময় এ ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। তবে বিষয়টি নিয়ে মানুষ যেভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন তেমন কিছু নয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশের সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে এলাকার মানুষ তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে। তবে আইন নিজেদের হাতে তুলে না নিলে সকলের জন্যই ভালো হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ডুমুরিয়ায় এক বৃদ্ধকে রোহিঙ্গা সন্দেহে মারপিটের কারণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় দুই যুবক দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশের সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন।

এই বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মূখপাত্র মো. মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, আমরা পুলিশ সদস্যদেরকে এই বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেছি। আইন যেন কেউ হাতে তুলে না নেয় সে জন্য জনগণকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্দেভাজন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




খুলনায় বেড়েই চলেছে রোহিঙ্গা ও ছেলে ধরা আতঙ্ক!

আপডেট সময় : ১০:০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা;
খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা আর ছেলে ধরা আতঙ্ক দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো স্থানে ছেলে ধরা (শিশু পাচারকারী) ও রোহিঙ্গা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনি বা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন বয়স্ক ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীরা। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে ডুমুরিয়া উপজেলায় ষাট্টোর্ধ এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। থানা পুলিশের তদন্তে এমনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১১ মে ডুমুরিয়ার মাগুরখালী ইউনিয়নে ছেলে ধরা রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনিতে ষাট্টোর্ধ এক বৃদ্ধ নিহত হন। এ ঘটনায় মেহেদী মোড়ল (৩০) ও মধুসুদন মন্ডলকে (২৯) গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া একটি হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত এ দু’যুবক।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডুমুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) পুষ্পেন্দু দেবনাথ জানান, নিহত ব্যক্তির বয়স ৬০-৬৫ বছর হতে পারে। তিনি রোহিঙ্গা কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে। তার পরিচয় জানতে আঙ্গুলের ছাপ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনগণ। এর আগে মঙ্গলবার দিঘলিয়ার দেয়াড়া কহিনুর স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়ে পাখী বেগম (৫০) ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে হীরা (২৫) লাঞ্ছনার শিকার হন। এলাকাবাসী তাদেরকে ধরে টেনে হিঁচড়ে দিঘলিয়া থানায় সোপর্দ করেন। পুলিশ তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার মৃত কাউয়ুম শেখের স্ত্রী পাখী বেগম ও তার মেয়ে হীরা ভিক্ষা করতে দিঘলিয়ায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে চাল ও খুচরা পয়সা পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তাদের স্বজনরা এসে থানায় ভিক্ষুক মা-মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

দিঘলিয়া থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক খান এমরান হোসেন জানান, গ্রামের মানুষ নতুন কোনো মুখ দেখলে রোহিঙ্গা মনে করছেন। গতকালও এই অবস্থায় পড়েছে ফুলতলা এলাকা থেকে আসা দু’জন ভিক্ষুক নারী। তাদেরকে থানায় এনে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে তারা নির্দোষ। পরে তাদের স্বজনদের ডেকে এনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার খুলনা মহানগরীর যোগীপোল ভাঙ্গা মসজিদের সামনে থেকে স্থানীয় জনতা রোহিঙ্গা সন্দেহে মো. ফরিদ নামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। একই দিন সকাল ১০টায় যাব্দিপুর বৌ-বাজার এলাকা থেকে রাশিদা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করেন স্থানীয়রা। বেলা ১২টায় মীরেরডাঙ্গা পেট্রোলিয়ামের সামনে থেকে দেবদাস (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে রোহিঙ্গা সন্দেহে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এর আগে জেলার দাকোপ উপজেলায় ৬ জোড়া নারী-পুরুষকে আটক করে জনগণ। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ১২ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। তাদের সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

নগরীর খানজাহান আলী থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা রোহিঙ্গা সন্দেহে ৩ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তারা বাংলাদেশের মানুষ। এছাড়া রূপসা উপজেলায় মানসিক রোগে আক্রান্ত এক যুবককে ধরে থানায় সোপর্দ করে এলাকাবাসী। এ সময় তাকে গণপিটুনি দেয়া হয় বলেও সূত্র জানায়।

এছাড়াও খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, ফুলতলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ মহানগরের বিভিন্ন অলি-গলিতে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন সময় এ ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। তবে বিষয়টি নিয়ে মানুষ যেভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন তেমন কিছু নয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশের সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে এলাকার মানুষ তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে। তবে আইন নিজেদের হাতে তুলে না নিলে সকলের জন্যই ভালো হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ডুমুরিয়ায় এক বৃদ্ধকে রোহিঙ্গা সন্দেহে মারপিটের কারণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় দুই যুবক দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশের সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন।

এই বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মূখপাত্র মো. মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, আমরা পুলিশ সদস্যদেরকে এই বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেছি। আইন যেন কেউ হাতে তুলে না নেয় সে জন্য জনগণকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্দেভাজন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।