পুলিশের সকল অনুষ্ঠান আয়োজন বর্জন ঘোষণা;
আলোচিত কবি হেনরী স্বপনকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার পরবর্তী কারাগারে প্রেরণ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বরিশালের মিডিয়াকর্মীরা। বিশেষ করে তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অতিউৎসাহী মনভাব সংবাদকর্মীদের আরও সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এই ঘটনা প্রতিবাদস্বরূপ বরিশালের সাংবাদিক সমাজ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনের সকল আয়োজন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে নগরীতে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল শেষে সাংবাদিক নেতারা এই ঘোষণা দিয়েছেন।
অবশ্য এই বর্জন ঘোষণার পরে সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত একটি মতবিনিময় সভা বাতিল করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। নবাগত পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খাঁনের যোগদান উপলক্ষে বুধবার বিকেল ৩টায় সভাটি আয়োজন করা হয়েছিল।
কিন্তু কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-সাংবাদিক বৈরীতা তৈরি হওয়ার কারণে সভাটি বাতিল করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কারণ পুলিশের অনুমান সংক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা এই মুহূর্তে সভাটিতে অংশগ্রহণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। এমন ভাবনায় পুলিশ প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছনে সরে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাথে এই উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বরিশাল পুলিশের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ব্যক্তি বিশেষের কাছেও এখন ধর্না দিচ্ছে।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই ঘটনায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছেন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম। এই পুলিশ কর্মকর্তা বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে সাংবাদিকদের ম্যানেজে নেমেছেন বলে চাউর রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে- কবিকে গ্রেপ্তার ঘটনাকে কেন্দ্রে করে ওসি নুরুল ইসলাম বেশিমাত্রায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে সাংবাদিকদের চলমান আন্দোলনে তাঁর অপসারণ দাবি ওঠার আশঙ্কা করছেন। নিজেকে রক্ষায় তিনি এই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। কারণ তাঁর নির্দেশেই অতিউৎসী হয়ে কবি হেনরী স্বপনকে বাসা থেকে তুলে এনেছিল সাদাপোশাকধারী পুলিশ।
একজন মুক্তমনা কবিকে এইভাবে তুলে আনার বিষয়টি নিয়ে খোদ থানা পুলিশের অনেক সদস্যদের হতবাক-বাকরুদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদায় কেউ ওসির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখাচ্ছেন না।
তবে ওসি ঘনিষ্ট একাধিক একটি সূত্র জানিয়েছে- এই গ্রেপ্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওসি নুরুল ইসলামের চেয়ারটি নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কায় তিনি প্রভাবশালীদের দরজায় কড়া নাড়ছেন। বুধবার রাতে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলনে কিছুটা পূর্বাভাস পেয়ে তিনি ছুটে যান সিটি মেয়রের বাসায়। গভীর রাত পর্যন্ত ওসি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
তবে এই বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে চাইছেন না ওসি নুরুল ইসলাম। শুধু বলছেন- কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করেনি।
কবি হেনরী স্বপন মুক্তি ও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ সময়ের আলোকে জানিয়েছেন- বুধবার সকালে মেয়র সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এসেছিলেন। এসময় তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকি তিনি এই সময় পুলিশ আয়োজিত মতবিনিময় সভাতেও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতি পুলিশের সাথে কোন আপোষ নয় বলে সোজা সাপ্টা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মুলত এর পরে বেলা দেড়টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ইমেল বার্তা পাঠিয়ে মতবিনিময় সভাটি বাতিল ঘোষণা দেওয়া হয়। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারি কমিশনার (এসি) নাসির উদ্দিন মল্লিক।
কবিকে গ্রেপ্তার প্রতিবাদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার বলছেন- এই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে চরমাকারে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু মেয়র দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। এই কারণে আপাতত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার বরিশাল ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লরেন্স ল্যাকা ডালিয়ে গোমেজের দায়ের করা একটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় কবি গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে কোতয়ালি পুলিশ।